শিরোনাম
◈ প্রবাসীদের কল্যাণে মালদ্বীপে হাইকমিশনের নতুন উদ্যোগ ◈ দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে যাবে ১,২০০ মেট্রিক টন ইলিশ, রপ্তানির অনুমোদন পেলো ৩৭ প্রতিষ্ঠান ◈ ঢাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি হুমকির মুখে ◈ ভুয়া জুলাই শহীদ-যোদ্ধাদের নাম তালিকা থেকে বাদ, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ◈ কুয়াকাটা সৈকত থেকে আবারও অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার ◈ আদমদীঘিতে ভাঙা রেললাইনে কম্বল গুঁজে ১৮ ঘন্টা ট্রেন চলাচল ◈ জুলাই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হলে সব ধর্মের মানুষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা  ◈ ব্যক্তি বিবেচনায় এলএনজি কেনা হচ্ছে না, পিটার হাসের কোম্পানি প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ◈ বিসিএস পরীক্ষা: কর্মসূচির সময় পরিবর্তন করল জামায়াত ◈ চশমা ছাড়াই স্পষ্ট দেখা সম্ভব, কার্যকর আই ড্রপ উদ্ভাবন

প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর, ২০২১, ০১:৩১ রাত
আপডেট : ১৫ নভেম্বর, ২০২১, ০১:৩১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রভাষ আমিন: দেশের অংশগ্রহণমূলক, উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন মিস করি

প্রভাষ আমিন: স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে রাজনৈতিক ছিলো না। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাই স্থানীয় মুরব্বি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষক, আইনজীবীরা অংশ নিতেন। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচনেও দলীয় প্রতীকের ব্যবস্থা করে রাজনীতির বিষকে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আর ভালো ও সৎ মানুষের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। এখন নির্বাচিত হতে হলে প্রথমত দলের পাণ্ডা হতে হবে, দ্বিতীয়ত বৈধ-অবৈধ অঢেল টাকা থাকতে হবে। স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবস্থা করে মনোনয়ন বাণিজ্যকে অনানুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এখন নির্বাচনী লড়াইয়ের চেয়ে মনোনয়ন কেনাটাই বেশি চ্যালেঞ্জিং। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেতে এক কোটি টাকা খরচ করার মতো অবিশ্বাস্য খবরও গণমাধ্যমে দেখেছি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে এখন আর আওয়ামী লীগ করার দরকার নেই, অনেক টাকা থাকলেই হলো। তাই তো শিবির, জামায়াত, যুবদল, বিএনপি নেতারাও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে যান। চোর, বাটপার, বদমাশ, কট্টর সাম্প্রদায়িক, আসামি- কারওই মনোনয়ন পেতে বাধা নেই। তবে শুধু টাকা থাকলেই হবে না, টেক্কা দেওয়ার মতো টাকা থাকতে হবে। টাকা দিয়ে মনোনয়ন কেনার মতো অনেকেই আছেন। কিন্তু যিনি বেশি দেবেন, তিনিই পাবেন। আচ্ছা, টাকা দিলেন, কিন্তু মনোনয়ন পেলেন না, তাহলে কি আপনি টাকা ফেরত পাবেন? হা, কার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে, টাকা ফেরত চাইবে।

আপনাকে আসলে জুয়াটা ব্লাইন্ডে খেলতে হবে। রাজনীতি আর মনোনয়ন বাণিজ্যের বিষ যে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়েছে, তা এখন ওপেন সিক্রেট। ওবায়দুল কাদের একাধিকার সতর্কও করেছেন, কাজ হয়েছে বলে মনে হয় না। মনোনয়ন যুদ্ধটা এতো কঠিন কেন, একটা ছোট্ট পরিসংখ্যান দিলে আপনারা বুঝবেন। এখন পর্যন্ত দুই ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে, আগামী ২৮ নভেম্বর হবে তৃতীয় ধাপের নির্বাচন। প্রথম ধাপে ৪৩ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৭৬ জন এবং তৃতীয় ধাপে ১০০ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এটা শুধু চেয়ারম্যান পদের হিসাব। নির্বাচনই যদি করতে না হয়, তাহলে মনোনয়ন কিনতে একটু বেশি বিনিয়োগ করতে আপত্তি থাকে না। তবে ‘নৌকা’ প্রতীক পেলেই পাস, এই ধারণাটা আস্তে আস্তে কঠিন করে দিচ্ছে আওয়ামী লীগই। বিএনপি এবার ইউপি নির্বাচনে মাঠে নেই। কেউ যদি নিজের মতো করে জিতে আসতে পারেন, তাতে বিএনপির আপত্তি নেই। কিন্তু ‘নৌকা’র জোয়ার ঠেকিয়ে দিচ্ছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। মনোনয়ন কেনার লড়াইয়ে টিকতে না পারলে বিদ্রোহী হিসেবে মাঠে নেমে পড়েন আওয়ামী লীগাররাই।

অনেক ধমক-ধামক দিলেও বিদ্রোহীদের কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না আওয়ামী লীগ। তবে আমার ধারণা মুখে ধমক-ধামক দিলেও বিদ্রোহীদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের একধরনের ছাড় আছে। নির্বাচনের মাঠে কিছুটা উত্তেজনা টিকিয়ে রাখতেই যেন বিদ্রোহীদের মাঠে রাখা হয়েছে। ফেসবুকে দেখলাম, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিন ধরনের প্রার্থী আছে- আওয়ামী লীগ, বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ এবং স্বতন্ত্র মানে বিএনপি। তবে মূল লড়াইটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগেরই। তবে এ লড়াইটা ফেয়ার বা অহিংস থাকছে না। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এরপর থেকে ফাঁকা মাঠে নির্বাচন নির্বাচন খেলা খেলছে আওয়ামী লীগ। কোনো বড় টুর্নামেন্টের আগে বাংলাদেশ দল ‘লাল দল’, ‘সবুজ দল’ বা ‘এ-দল’, ‘বি-দল’ নাম দিয়ে গা গরম করতে নিজেরা নিজেরা প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলে। নির্বাচনের মাঠেও যেন সেই ব্যবস্থাই। আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী। তবে মাঠের খেলার মতো নির্বাচনের খেলারও কিছু নিয়ম থাকে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠেও নিয়ম মানছে না।

হুমকি, ধমকি, মারামারি, একে-৪৭, কেন্দ্রে আসলে খবর আছে, গণমাধ্যমে এমন খবর আমরা পাই। ইউপি নির্বাচনে প্রথম দুই দফায় নির্বাচনী সহিংসতায় মোট ৩২ জনের প্রাণ গেছে। তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বের শিকার। খেলার মাঠে যেমন রেফারি বা আম্পায়ার থাকে, নির্বাচনের মাঠেও নির্বাচন কমিশন থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়াররা যেমন অসহায়, মাঠে দাঁড়িয়ে পূর্ব নির্ধারিত ম্যাচের প্রহসন দেখেন, নির্বাচন কমিশনের অবস্থাও তাই। তাদের চোখের সামনে দিনের পর দিন নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে, তাদের যেন কিছুই করার নেই। বাংলাদেশের অংশগ্রহণমূলক, উৎসবমুখর, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন আমি সত্যি মিস করি। আহারে আবার যে কবে তেমন নির্বাচন হবে এই বাংলাদেশে! লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়