মঈন চৌধুরী : কাঠামোবাদ ভাষা ও সাহিত্যকে একটি স্থির ও বদ্ধ কাঠামোর অন্তর্গত বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেছিলো। ভাষাতে উপস্থিত প্রকৃতি, সংস্কৃতি, ভালো, মন্দ, ঈশ্বর, মানুষ, দিন, রাত, পুরুষ, নারী ইত্যাদির মতো যুগ্ম- বৈপরীত্যগুলোর শ্রেণি-মর্যাদাও ছিলো স্থির। মানুষ ভাবতো ‘ভালো’র অবস্থান ‘মন্দে’র ওপরে, ‘মানুষের’ অবস্থান ‘ঈশ্বরের’ নিচে ইত্যাদি ইত্যাদি। উত্তর-কাঠামোবাদ বিনির্মাণের দর্শন ব্যাখ্যা করে দেখা গেলো, ভাষার শব্দসমূহের মুক্তক্রীড়ার ফলে ভাষায় কোনো স্থির কাঠামো কিংবা ভাষা-অর্থের কোনো নির্দিষ্ট উপস্থিতি থাকে না। ভাষার উপাদান যুগ্ম-বৈপরীত্যেও ঘটে উগ্র শ্রেণি-বিচ্যুতি। যার ফলে ‘মন্দ’ উঠে আসে ‘ভালো’র ওপর, ‘মানুষ’ হয়ে যায় ‘ঈশ্বর’ থেকে মহান।
উত্তর কাঠামোবাদ বা বিনির্মাণ কী, তা বোঝানোর জন্য জাক দেরিদার ভাষা-দর্শন বুঝতে হবে। দেরিদা ভাষা থেকে অধিবিদ্যা বাদ দিতে চান, আর বলেন শব্দের অর্থকেন্দ্রিক সাহিত্যে বিনির্মাণ কাজ করবেই। তিনি এমনও বলেছেন যে সাহিত্য থেকে আদিবিদ্যাকে পুরোপুরিভাবে বাদ দেওয়া যাবে না। বিনির্মাণকে গ্রাহ্য করে একটি সাহিত্য সৃষ্টির প্রেক্ষাপট বিচার করতে পারি আমরা, আমরা বিশ্লেষণ করতে পারি একটি সাহিত্যকর্মের মাঝে উপস্থিত বিনির্মাণযোগ্য বর্ণনা, বক্তব্য, বিবরণ ও অন্য উপাদানসমূহকে। একটি সাহিত্যকর্মে কাঠামোবাদগ্রাহ্য যুগ্ম-বৈপরীত্যের উগ্র-বিচ্যুতি কীভাবে ঘটে তাও বিচার-বিশ্লেষণ করা যায় এই তত্ত্ব দিয়ে। দেরিদার দর্শনের মূল কথা হলো, All reading is misreading, all interpretatio is misinterpretation Avi there is nothing outside text. কথাগুলো বিশ্লেশণ করলে আমরা বুঝতে পারি যে একটি লেখা পড়ার সময় আমরা তার অর্থ বিভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যাই ব্যক্তিগত ভাষাজ্ঞানের ওপর নির্ভর করে, আর তাই শুধু পাঠ বা text-এর উপাদানসমূহ বিশ্লেষণ করাই হবে যুক্তিসংগত। আমাদের বুঝতে হবে ভাষার মুক্তক্রীড়া বা freeplay আমাদের সামনে উপস্থিত করতে পারে নতুন নতুন সৃষ্টির ব্যঞ্জনা আর নান্দনিক উপলব্ধি। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :