জাকির তালুকদার
বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে মাঠের পারফরম্যান্সে নয়, ক‚টনৈতিক চ্যানেলে। কথাটি আমার নয়, সেই সময়ের ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তার, যিনি এমপিও ছিলেন। জগমোহন ডালমিয়া না থাকলে এই সুযোগ পেতো না বাংলাদেশের ক্রিকেট। দেশের বা পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়ে ক্রিকেট নিয়ে মত্ত হলো কেন আমাদের সরকার। কারণ ফুটবলে পৃথিবীর প্রথম ১০টি টিমের মধ্যে ওঠে আসা কখনোই সম্ভব নয়। কিন্তু ক্রিকেটে সম্ভব। কারণ তখন পৃথিবীর মাত্র নয়টি দল টেস্ট খেলতো। বাংলাদেশ টেস্ট খেলুড়ে দেশের তালিকায় নাম লেখানোর সঙ্গে সঙ্গেই দশম স্থান পেয়ে গেলো। পরীক্ষায় তিনজনের মধ্যে থার্ড হওয়ার ব্যাপার। এটাকেই খুব বড় সাফল্য হিসেবে দেখায় সব সরকার। সরকারের ইঙ্গিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো মিডিয়াও। এমন লেখা লিখতে শুরু করলো যেন ক্রিকেটের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই হতে পারে না বাংলাদেশে। আর ক্রিকেটারদের চেয়ে বড় আইকন আর কেউ নেই। কেউ এই প্রশ্নটি তোলার অবকাশই পায় না যে পৃথিবীর কয়টি দেশের মানুষ ক্রিকেট খেলে বা ক্রিকেটের নাম জানে। সব দেশ ক্রিকেট খেললে বাংলাদেশের র্যাংকিং হতো ফুটবলের মতোই ১৯০ এর ঘরে।
এই বাস্তবতায় খারাপ খেললে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের গালি দেওয়ার কারণ নেই। কিন্তু পাবলিক গালি দেয়। কারণ ক্রিকেটারদের পেছনে খরচ করা হয় বেশুমার টাকা। তাদের দেওয়া হয় প্রচুর বেতন এবং বোনাস। সবই জনগণের টাকা। সরকারতো কোনো টাকা উপার্জন করে না। তারাও বেতন, বোনাস, গাড়ি, বাড়ি সব পায় জনগণের টাকাতে। জনগণের টাকা যারা ভোগ করবে, তারা মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে গালি খাবে সেটাই স্বাভাবিক। তবু ভারতের হারের পরে কোহলির দশ মাস বয়সী কন্যাকে ধর্ষণ করার মতো ইচ্ছা পোষণকারী ফ্যানাটিক ভারতীয়ের মতো কথা অন্তত বলে না বাংলাদেশের মানুষ। নিজেদের কষ্টার্জিত টাকার শ্রাদ্ধ মেনে নিয়ে ঘুমাতে চলে যায়। লেখক : কথাসাহিত্যিক। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :