নিউজ ডেস্ক: বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) দখলকৃত নদ-নদীর ভূমি উদ্ধারে জোরালো অভিযান শুরু করে। ওই অভিযানে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। পাশাপাশি ঢাকার বাকি দুই নদী শীতলক্ষ্যা ও বালুর দখল-উচ্ছেদের ব্যাপারেও কঠোর অবস্থান নেয় সংস্থাটি। কিন্তু বছর না ঘুরতেই বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার নদ-নদীর উচ্ছেদকৃত ভূমি আবার দখল হতে শুরু করে। কোথাও কোথাও দখলদাররা আগের চেয়েও শক্ত অবস্থান গেড়ে বসে। এ অবস্থায় দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে ঢাকার এ চার নদ-নদী অনলাইন নজরদারির আওতায় আনার কথা ভাবছে বিআইডব্লিউটিএর কর্তাব্যক্তিরা।
তবে নদী দখল-দূষণমুক্ত রাখতে অনলাইন নজরদারির বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব তোলা হয়েছে। প্রস্তাবে নদীতীরের ভূমিজুড়ে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এসব ক্যামেরা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়িত্বরত লোকও থাকবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর ভূমি অনলাইন নজরদারির আওতায় আনা হবে বলেও ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
সূত্রমতে, ঢাকার চার নদ-নদী অনলাইন নজরাদরির আওতায় আনার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত না হলেও এ ব্যাপারে অনেকেই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। বিশেষ করে বছরে বছরে উচ্ছেদ অভিযানে যে ব্যয় হয়, তার চেয়ে অনলাইন নজরদারি বেশ কার্যকর হবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, এতে একদিকে যেমন ব্যয় কমবে, অন্যদিকে দখলদাররাও নজরদারির আওতায় আসবে।
এর আগে দখলকৃত নদীর ভূমি উদ্ধারে অভিযান পরিচালনার সময় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হয়। বিশেষ করে নদীর ভূমি যেন ফের দখল না হয় এজন্য ১০০ বছর মেয়াদি সীমান্ত খুঁটিও গেড়ে দেয় বিআইডব্লিউটিএ। এতে নদীর ভূমি আর দখল করা সম্ভব হবে না বলে সে সময় ঘোষণা দেয় অভিযান-সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বছর না ঘুরতেই পরিস্থিতি আগের রূপ নিতে শুরু করে। অভিযোগ রয়েছে, উচ্ছেদের পর বিআইডব্লিউটিএর তদারকি থাকে না বলেই দখলদাররা ফের ফিরতে পারে।
সম্প্রতি বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী শ্যামপুর, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে উচ্ছেদ অভিযানের পর নতুন করে জায়গা দখলে নিয়েছেন বালি ও লোহা ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে উচ্ছেদ-পরবর্তী তদারকি করা হয় না। উদ্ধার অভিযানের পর সংস্থাটির লোকজন উচ্ছেদস্থলে তেমন আসেন না। তারা বলছেন, যদি সংস্থাটি নিয়মিত নদীর ভূমি তদারক করত, তাহলে বারবার দখল-উচ্ছেদ হতো না। এ অবস্থায় অনলাইন নজরদারির বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রাসহ সংশ্লিষ্টরা।
অনলাইন নজরদারির বিষয়টি ভালো উদ্যোগ হলেও এটি কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে তার ওপরই ফলাফল নির্ভর করছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, প্রথমত বিআইডব্লিউটিএর একটি শক্তিশালী ও সার্বক্ষণিক নজরদারি টিম থাকা উচিত। এটি যদি অনলাইন হয়, তবে অবশ্যই তা যথাযথ হতে হবে। দেখা গেল ক্যামেরা লাগাল, কিন্তু কয়েকদিন পর চুরি হয়ে গেল। তখন পুরো টাকাই জলে গেল। কিন্তু ক্যামেরার মাধ্যমে যদি শক্তিশালী নজরদারি করা যায়, তাহলে আমি এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বণিক বার্তাকে বলেন, নদী দখল রোধে আমাদের নিজস্ব টহল টিম আছে। এছাড়া নৌ পুলিশের সহযোগিতাও আমরা নিই। তবে আমাদের নজরদারি আরো আধুনিকায়ন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। এ ব্যাপারে পরিকল্পনাও নেয়া হচ্ছে।
অনলাইন নজরদারির বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টির সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ করে যদি দেখা যায় এতে দখল রোধ করা সম্ভব হবে, তাহলে আমরা এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথে এগোব। এক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্যামেরা চুরি যাওয়ার ভয়। সব দিক বিবেচনা করেই এ ব্যাপারে আমরা উদ্যোগী হব। এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। - বণিক বার্তা