ইমরুল শাহেদ: ইস্যুভিত্তিক চলচ্চিত্রের নির্মাতা ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড নির্মিত ‘রোহিঙ্গা’ ছবিটি বিনা কর্তনে সেন্সর সনদপত্র পেয়েছে আজ মঙ্গলবার। সেন্সর প্রদর্শনীর পর আলোচনায় নির্মাতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বোর্ড সদস্যরা। একটি আন্তর্জাতিক ইস্যুকে নির্মাতা অত্যন্ত সহজ ও সাবলীলভাবে পর্দায় তুলে এনেছেন। ছবিটি সেন্সরে দেওয়ার আগে ছবিটির তিনটি দৃশ্য দেখার সুযোগ হয়েছে এ রিপোর্টারের। তিনটি দৃশ্যই ছিল মনোমুগ্ধকর। শুরুতেই দেখা যায় পরিচালক অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া নিয়ে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি খোলা চিঠি লিখছেন। তিনি শুরুতেই খোলসা করে দিচ্ছেন যে, তার দৃষ্টিকোণ থেকেই ইতিহাসকে ভিত্তি করে তিনি রোহিঙ্গাদের নানা ধরনের ভোগান্তির ঘটনাবলি বর্ণনা করে চলেছেন।
ছবি শুরুর ধারাভাষ্যেও তার ইঙ্গিত রয়েছে। মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সুচি যখন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান তখন তিনি ছিলেন কারাগারে। কারা মুক্ত হওয়ার পর তাকে নরওয়েতে নোবেল পাওয়া উপলক্ষে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে তিনি যখন গণতন্ত্র ও শান্তির কথা বলছিলেন, তখন রাখাইন রাজ্যে চলছে বর্মীদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জাতিগত দাঙ্গা। এরপর ২০১৭ সালে চূড়ান্তভাবে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালাতে শুরু করে এবং তাদেরকে সীমান্ত এলাকার দিকে ধাবিত হতে বাধ্য করে। গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রোহিঙ্গারা নাফ নদী পার হয়ে আশ্রয়ের জন্য ছুটে এসেছে বাংলাদেশের দিকে।
এছাড়া যে দেশে সম্ভব আশ্রয়ের জন্য ছুটে গেছে রোহিঙ্গারা। ছবিতে সন্নিবেশিত দাঙ্গার একটি দৃশ্যে দেখা যায়, জীবনরক্ষার জন্য ছুটোছুটি করা একজনকে রাখাইনের একজন পুলিশ সদস্য গুলি করে। আহত লোকটি লুটিয়ে পড়ে মাটির উপর। দূর থেকে পলায়মান তার ছেলেটি আহত পিতাকে কাঁধে নিয়ে ছুটে চলে নিরিবিলি জঙ্গলের দিকে। তাদের পেছনে ছুটে চলে একজন বিদেশি সাংবাদিক। তিনি তখন দাঙ্গার ভিডিও চিত্র ধারণ করছিলেন। উক্ত সাংবাদিক রোহিঙ্গা নির্যাতনের এই দৃশ্যসহ নানা লোমহর্ষক ঘটনাবলি বিশ্বব্যাপী প্রচার করেন। প্রচারে তুলে ধরা হয় অকাতরে মানুষের জীবন হরণের বাস্তবচিত্র। এসব ঘটনাবলি দেখতে দেখতে যে কারো মনে হতে পারে, তিনি গণহত্যার বধ্যভূমি রাখাইন রাজ্য পরিভ্রমণ করে চলেছেন। এই ছবিটি প্রযোজনা করেছেন শবনম শেহনাজ চৌধুরী।
আপনার মতামত লিখুন :