রাঙামাটি প্রতিনিধি : [২] জেলায় কলেজছাত্রী পূর্ণিমা চাকমার রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনায় বেরিয়ে আসছে অনেক তথ্য। উন্মোচিত হচ্ছে আসল রহস্য। ঘটনার প্রতিবাদ আর বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন পূর্ণিমার স্বজন ও কলেজ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহল। ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড উল্লেখ করে এর সুষ্ঠু বিচারসহ জড়িতদের ফাঁসির দাবি করেছেন তারা। দাবিটি নিয়ে নেমেছেন আন্দোলনে।
[৩] সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন এবং পরে রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে পূর্ণিমা চাকমার হত্যার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি করেছেন নিহত কলেজছাত্রীর পরিবার, স্বজন, কলেজশিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহল।
[৪] জানা যায়, রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী পূর্ণিমা চাকমা থাকত শহরের রাজবাড়ি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়। সে জেলার জুরাছড়ি উপজেলার ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী দুমদুম্যা ইউনিয়নের বগাখালী নামক পাহাড়ি গ্রামের সাধন চাকমার মেয়ে। ২৮ অক্টোবর দুপুরের দিকে অচেতন অবস্থায় পূর্ণিমাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে। ওই সময় তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। কিন্তু পূর্ণিমাকে মৃত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পালিয়ে যায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া বাসা মালিকের লোকজন। পরে তারা ঘটনাটিকে কেউ আত্মহত্যা আবার কেউ স্ট্রোক করে পূর্ণিমা মারা যায় বলে অসংলগ্ন কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া চেষ্টা করে এবং ঘটনার পর থেকে পূর্ণিমার বাসার মালিক মল্লিকা চাকমাসহ তার পরিবারের অন্য লোকজন পলাতক রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন, পূর্ণিমার স্বজনরা।
[৫] এদিকে ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে সোমবার সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দুই ঘন্টাব্যাপী মানবন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। পূর্ণিমার পরিবার, স্বজনসহ রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজ, লেকার্স পাবলিক কলেজ, রাঙামাটি পাবলিক কলেজ, সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের অসংখ্য শিক্ষার্থী যোগ দেন। এ সময় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। মানববন্ধন চলাকালে বাসা মালিক মল্লিকা চাকমাসহ তার পরিবারের লোকেরা পূর্ণিমাকে নিষ্ঠুরতায় গলাটিপে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন বিক্ষুব্দ লোকজন।
[৬] তারা বলেন, পূর্ণিমাকে হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে আত্মহত্যা বলে চালোনোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও নানাভাবে দফারফার চেষ্টা করছে খুনিরা। পূর্ণিমার বাবাকে ১ লাখ টাকার অধিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে মল্লিকার পরিবার। পূর্ণিমা যদি আত্মহত্যা করে থাকে তাহলে টাকা দিয়ে কেন দফারফার চেষ্টা করছে খুনিরা ?
[৭] এ সময় পূর্ণিমার মামাতো ভাই কাপ্তাই সুইডিশ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্র পলাশ চাকমা বলেন, পূর্ণিমা কোনোভাবেই আত্মহত্যা করেনি। সে ওই রকম মেয়ে না। পূর্ণিমাকে হত্যা করা হয়েছে। এখন আসল ঘটনা দামাচাপা দিতে নানাভাবে অপতৎপরতা চালােেনা হচ্ছে। পূর্ণিমার বাবাকে ক্ষতিপূরণ দিতে চাইছে বাড়ির মালিক। টাকা দিয়ে কী পূর্ণিমাকে ফিরে পাওয়া যাবে ? তাই আমাদের দাবি খুনিদের ফাঁসি। আমরা খুব শিগগির পূর্ণিমা হত্যাকান্ডে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
[৮] রাঙামাটি কতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন জানান, লাশের ময়নাতদন্তের পর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় এখনও কেউ বাদী হয়ে মামলা দেয়নি। কেউ বাদী হয়ে মামলা দিলে তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ