শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:১৩ দুপুর
আপডেট : ২০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:১৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কামরুল হাসান মামুন: শিক্ষক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের চেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের আবাসিক ভবন

কামরুল হাসান মামুন, ফেসবুক থেকে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে একটি মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছে যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা এবং আশা করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের ব্যাপারে অত্যন্ত সদয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বলছে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে " ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় চোখ ধাঁধানো পরিবর্তন আসবে। বিশাল এ কর্মযজ্ঞে নতুন সুউচ্চ আধুনিক ইমারত যেমন তৈরি হবে, তেমনি সংস্কার করা হবে পুরনো ভবনও। মহাপরিকল্পনার আওতায় এখানে বিশ্বমানের গ্রন্থাগার সুবিধা, গাড়ি পার্কিং, যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ, সবুজায়ন, খেলার মাঠ উন্নয়ন, সোলার এনার্জি স্থাপন, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিংসহ জলাধার, সৌন্দর্যবর্ধন, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, আধুনিক জিমনেসিয়াম ও আধুনিক মেডিকেল সেন্টার স্থাপন করা হবে।"

এই মহাপরিকল্পনায় আছে মোট ৯৭টি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব। এর মধ্যে আছে ১৭টি একাডেমিক ভবন নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের জন্য ১৬টি আবাসিক ভবন নির্মাণ, হাউজ টিউটরদের জন্য ২২টি আবাসিক ভবন নির্মাণ, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ১২টি ও কর্মচারীদের জন্য ৯টি ভবন নির্মাণ। এর বাইরে আরো ১৩টি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব আছে এই মহাপরিকল্পনায়। জানতে পারলে ভালো হতো যে এই ৯৭টি ভবন কি existing পুরোনো ভবন ভেঙে তাদের স্থলে নির্মাণ করা হবে নাকি বর্তমান খালি জায়গাগুলো ব্যবহার করে হবে। দেখা গেল রেজিস্ট্রার ভবন ও কলাভবনের মাঝের মল চত্বরে বিশাল বিশাল ভবন নির্মাণ হয়ে গেছে। উফ। এই চিত্রটি আমি কল্পনাতেই আনতে পারিনা। হলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য কিছুটা যেটা টিকিয়ে রেখেছে সেটাও শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং আমাদের এটাও জানতে হবে যে কোথায় এইসব ভবন নির্মাণ হবে।

এই সরকার এবং সরকারের সকল প্রশাসন এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পর্যন্ত উন্নয়ন মানে অবকাঠামো ও ভবন নির্মাণ বুঝে। একবার ভাবুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যদি ৯৭টি সুউচ্চ ভবন নির্মাণ হয় তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ফাঁকা জায়গা কিছু অবশিষ্ট থাকবে? নান্দনিকতার কোন কিছু কি আর অবশিষ্ট থাকবে? বিশ্ববিদ্যালয় হলো দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত মানুষের কনসেনট্রেটেড জায়গা। এই জায়গাটি সৌন্দর্যে, নান্দনিকতা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় সমাজের কাছে উদাহরণীয় হতে হয়। এইখানে ব্যর্থ হলে দেশ কখনো উন্নত হবে না।

ভবন নির্মাণ করলেই কি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বৃদ্ধি পাবে? ভবন নির্মাণই কি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় সমস্যা? আমরাতো center for advanced research in sciences, center for advanced research in social sciences ইত্যাদির জন্য ভবন নির্মাণ করেছি। এইগুলো নির্মাণের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কতটা বেড়েছে? যেই শিক্ষকরা বিভিন্ন বিভাগে পড়ায় তাদেরকেই ওসব সেন্টারে ব্যবহার করে কি গবেষনা বৃদ্ধি করা সম্ভব? যদি সম্ভব হতো তারা তাদের নিজ বিভাগে থেকেই করতে পারতো। সেইজন্য আলাদা ভবন নির্মান করে আলাদা অফিস দিলেই আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না। হতো যদি ওই সেন্টারগুলোকে কেন্দ্র করে গবেষক ও পোস্ট-ডক নিয়োগ দিয়ে শক্ত পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করা যেত। তাতো করা হয়নি।

এই ৯ হাজার কোটি টাকা কি আরো ভালোভাবে ব্যয়ের সুযোগ ছিল না? আমার মতে এই ক্যাম্পাসে শিক্ষক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন বানানো জরুরি না। জরুরি হলো শিক্ষার্থীদের আবাসিক ভবন নির্মাণ। সেটার সব কিছুই ক্যাম্পাসেই হতে হবে এমন না। এখনতো মেট্রো রেল হচ্ছে। প্রয়োজনে উত্তরার তৃতীয় প্রকল্পে শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা তৈরী করা যায়। দরকার হলো প্রতিটি ফ্যাকাল্টির জন্য একটি লেকচার থিয়েটার করা যেখানে ওই ফ্যাকাল্টির সকল বিভাগের ক্লাস হবে আর কেবল ল্যাব এবং শিক্ষকদের অফিস রুম থাকবে প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব জায়গায়।

ভবন নির্মাণের চেয়ে উচিত হলো শিক্ষকদের মান উন্নয়নে কাজ করা। তার জন্য দরকার শিক্ষকদের নিয়োগ এবং প্রমোশন নীতিমালা বিশ্বমানের করা। এমন ব্যবস্থা করা যাতে বিদেশ থেকে আমাদের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা শেষে ফিরে আসতে উৎসাহবোধ করে এবং ফিরে আসলে কেবল মেরিট বেসিসে চাকুরী পায়। মেরিটোক্রেসিকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিতে হবে। আর ভালো মানের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতায় তখনই আসবে যখন ভালো বেতন এবং গবেষণার ভালো সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে। ভবন নির্মাণের পাশাপাশি এই জায়গাটায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। পরিকল্পনা নেওয়া উচিত ছিল কিভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগ কমানো যায় যাতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে। এত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল সুযোগ সুবিধা ঠিক রেখে, সঠিকভাবে পরিচালনা করে এর মান বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়