শিরোনাম
◈ ওসমান হাদি সংকটাপন্ন, বাবার জন্য অবুঝ শিশুর আকুতি জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে নতুন আলোচনার জন্ম দিল ◈ তফসিল ঘোষণার পর বিএন‌পি ও জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলো কী অবস্থায় আছে?  ◈ নভেম্বর মাসে বিএনপি নেতার ওপর হামলার বিচার হলে হয়তো এ ঘটনা ঘটতো না: সালাউদ্দিন  ◈ আইসিইউতে হাদি, অপরদিকে নলছিটিতে তার বাড়িতে চুরি, তদন্তে পুলিশ ◈ প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির ২ প্রতিনিধির  বৈঠক চলছে  ◈ বাংলাদেশি নাবিকসহ তেলবাহী জাহাজ আটক করল ইরান ◈ ইউএনওকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে বিপাকে পড়ে ক্ষমা চাইলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা (ভিডিও) ◈ চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব: বাংলাদেশসহ চার দেশে লেভেল–২ ভ্রমণ সতর্কতা জারি সিডিসির ◈ টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টারশেল–গুলিতে কেঁপে উঠল বসতঘর, আতঙ্কে সীমান্তবাসী ◈ ভোটের রাজনীতিতে পবিবেশ নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর, ২০২১, ১০:৫১ রাত
আপডেট : ০৫ অক্টোবর, ২০২১, ১০:৫১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাদিয়া নাসরিন: সন্তানেরও বাবার সাথে কথা বলতে এপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়, বললেন শাহরুখ পুত্র আরিয়ান

সাদিয়া নাসরিন: শাহরুখের ছেলে আরিয়ান বলেছে তার বাবা এতোই ব্যস্ত যে, সন্তানেরও বাবার সাথে কথা বলতে এপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়। এপার বাংলা ওপার বাংলায় এটি আজকে শীর্ষ শিরোনাম। এমন শিরোনাম ইদানিং প্রায়ই হয়। আমাদের শিরোনামের সন্তান।

আমাদের ছাপোষা ঘরের ঐশী রহমান, ফারদিন হুদা মুগ্ধ, ইফতেখার দিহান, বা খান পুত্র আরিয়ান এরা সবাই আমাদের সেইসব ‘বখে যাওয়া’ সন্তান যাদের সাথে আমরাই তৈরী করেছি দূরত্বের কঠিন আড়াল। সে আড়ালের ওপাশে দিনে দিনে গাঢ় হয়েছে গাঁজার ধোঁয়া, ইয়াবার ফয়েল কিংবা ধর্মের আফিম এবং আমরা ভোগ করেছি আমাদের কর্মফল।

আড়ালের ওপার থেকে ঐশি, দিহান কিংবা আরিয়ানরা যেদিন বের হয়ে আসে সেদিন তাদের কেউ নেশাখোর, কেউ খুনী, কেউ ধর্ষক। যে সন্তানের জন্য আমরা দশ দুয়ারী ভিখেরির মতো কুড়িয়ে কুড়িয়ে ভালোবাসা আর স্বচ্ছলতা জমিয়ে রাখি, যে সন্তানকে বিত্ত আর স্বচ্ছলতা উপহার দিতে আমরা দিগবিদিক ছুটে বেড়াই, সেই স্বচ্ছলতার ছুরি আর আগুনে নিজেদের জীবন পুড়িয়ে দাম শোধ করি আমরা মাতৃত্বের, পিতৃত্বের। হা জীবন !! হা নিয়তি !!!

এই নিয়তি আমরাই লিখেছি দিনের পর দিন ধরে। আমাদের অবহেলায়, উদাসিনতায়, দায়িত্বহীন বেপরোয়া ব্যস্ততায় হাতের ফাঁক গলে আমাদের ঘুমঘোরে ঘর ছেড়ে যায় আমাদের সন্তান!! সর্বস্ব হারিয়ে আমরা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকি হঠাৎ শিরোনাম হয়ে ওঠা আমাদের আত্মজের নামের দিকে।

প্রত্যেক মানুষের ক্যারিয়ারেরই একটা পরিকল্পনা থাকাটা জরুরী। সন্তান এবং পেশা দুটোর মধ্যে সমন্বয় করতে পারাটা খুব দরকার। কী দরকার, কেন দরকার, কতটুকু দরকার তার পরিষ্কার ধারণা থাকতেই হয়। কখন ছুটবো, কখন থামবো, কখন ইউ টার্ণ করবো সেই নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে থাকা চাই।

আমার ভাবতে ভালো লাগে, এখন পর্যন্ত আমার ক্যারিয়ার এবং পেরেন্টিং দুটোই আমার পরিকল্পনা মতো চালাতে পেরেছি। আজ থেকে অনেকগুলো বছর আগে, ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা গ্রুপ ডেভেলপমেন্টের কান্ট্রি ম্যানেজার পদে ভাইবা দিতে গেলে রিজিওনাল ডিরেক্টর জানতে চেয়েছিলেন আমার ক্যারিয়ার প্ল্যান কি? আমি বলেছিলাম, 'এখন আমার বয়স ত্রিশ। আমি চাই চল্লিশের আগেই এমন অবস্থানে যেতে, যেখানে পেশা আর আমাকে নিয়ন্ত্রণ করবেনা, আমি পেশাকে নিয়ন্ত্রণ করবো”।

তিনি খুব বিষ্মিত হয়ে এই 'চল্লিশের গেরো'র কারন জানতে চেয়েছিলেন। আমি তিনটা কারন বলেছিলাম। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারন ছিলো, “আমি যখন চল্লিশের ঘরে থাকবো তখন আমার একজন কিশোরী কন্যা এবং একজন কিশোর পুত্র থাকবে। মানুষের জীবনের সবচেয়ে রহস্যময়, আবেগপূর্ণ এবং আনন্দ-বেদনার সংকটময় সময়টাতে আমি তাদের সাথে থাকতে চাই। একজন ছেলে আর একজন মেয়ের শৈশব থেকে তারুণ্যের দিকে ট্রানজিশনটা আমি খুব কাছ থেকে দেখতে চাই। পেশা যদি আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে আমি এটা পারবোনা।”

মঙ্গলময় আমার ইচ্ছের মুল্য দিয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেয়েছিলাম আমি অবারিত কর্মস্বাধীনতা নিয়ে। ক্রমে এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি 'সংযোগ বাংলাদেশ' নামে জাতীয় সংস্থা হিসেবে কার্যক্রম শুরু করলো। তেত্রিশ বছর বয়সে এর প্রধান নির্বাহী হিসেবে আমি দায়িত্ব গ্রহন করি। তখন থেকেই আট, ছয় আর এক বছরের তিন সন্তান আমার সাথেই বড় হয়েছে। ওরা বড় হয়েছে, প্রতিষ্ঠানও বড় হয়েছে। আমরা একসাথে দৌড়েছি। স্কুল, কোচিং, প্রজেক্ট, সংসার সব একই গতিতে ছুটেছে।

গত তিন বছর আমি গতি কমিয়েছি। একটা সময় পূর্ণ গতিতে ছুটেছি বলেই এখন গতি কমিয়েও প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান আমি করতে পারি। যদি আরো ছুটতাম আরো অর্থ আসতো কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই মূহুর্তগুলো হারাতাম। সন্তানরা আমার বুকের ওম হারাতো। আমাদের একসাথে গান গাওয়া হতোনা, কাশফুল চেনা হতোনা, সময়কে আমরা ধরতে পারতামনা।

এবং আমার পরিকল্পনা এমনই। আমি আরো দু’ বছর এমন মন্থর গতিতে চলবো। আমি দেখবো প্রজাপতির ডানা মেলা। তারপর পাখিরা ওড়তে শিখবে, বড় দু’জন ব্যস্ত হবে নিজেদের পড়ালেখা আর ক্যারিয়ার প্ল্যান নিয়ে, ধনুক থেকে বের হয়ে যাবে তীর মহাজীবনের পানে। তারপর আমি আবার শুরু করবো রেইস। আমার নিয়তি সবসময় আমি লিখেছি এভাবেই, সবার চোখের সামনে।
চিত্ত বিত্তের সমন্বয় আমি শিখেছি নিজের কাছেই, যেনো আমার দায়িত্বহীন বেপরোয়া ব্যস্ততায় কোন কাবুলিওয়ালা এসে চুরি করে নিয়ে যেতে না পারে আমার সন্তান, আমাদের বুকের ওম না পেয়ে কোন নেশার ওম যেনো না খুঁজে আমার জঠরে বেড়ে ওঠা ধন।

আমি শিখেছি, মাতৃত্ব মানে প্রাণের সাথে প্রাণের প্রেম, প্রাণ থেকে প্রাণের শুরু...এ এক অপার্থীব জীবন আবেদন। এই জীবন আবেদনে সন্তানের সাথে সিনায় সিনায় যোগাযোগ করতে না পারলে, নিজের পাপ পুণ্যের জগত সন্তানের বোধের সাথে সংযুক্ত করতে না পারলে সন্তান পৃথিবীতে আনা যায়না। আনা উচিত না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়