খান আসাদ: ছাত্রদের চুল কাটা, তারপর অনশন প্রতিবাদ, তারপর চাকরি থেকে বহিষ্কার, এখন সামাজিক মাধ্যমে ট্রলÑ যা আসলে বিনোদনের উপাদান। অনেকটা ‘বেশি মাতুব্বরি করতে গেছিলা, বোঝ এখন’Ñ ধরনের শাস্তি দেখার তৃপ্তি। সমস্যাটা কী? দ্ব›দ্বটা কী নিয়ে? একটি মত, শাসন দরকার, ডিসিপ্লিন দরকার। সন্দেহ নেই, ‘ডিসিপ্লিন’ মূল্যবোধটি সামরিক চরিত্রের, ফ্যাসিস্ট চরিত্রের বললে হয়তো অতি সরল হবে। আরেকটি মত, স্বাধীনতার, ব্যক্তি স্বাধীনতার, ব্যক্তির রুচি ও পছন্দের প্রতি ‘সহনশীলতার’। পিতামাতা, অভিভাবক বা শিক্ষকের ভ‚মিকা কী হবে ছেলেমেয়েদের ‘ডিসিপ্লিন’ করার? ‘ডিসিপ্লিন’ মানে প্রথাগত চিরায়ত যে আচরণ সেটা প্রত্যাশা করা। সেই আচরণ শেখানো। প্রথাগত আচরণ চাপিয়ে দেওয়া যায়, বল প্রয়োগে, ক্ষমতা চর্চা করে, পেশী ও বন্দুকের জোরে। যেমন পুলিশ চুল কেটে দেয়, প্রেমিক প্রেমিকাকে পার্ক থেকে অসম্মান করে বের করে দেয়। ডিসিপ্লিন করে, কিংবা ধর্ষকামিতা। একজন শিক্ষক কি বলপ্রয়োগ করবেন? করবেন, যদি তিনি জ্ঞানের ক্ষমতায় বিশ্বাসী না হন। খুব সহজছিলো একজন শিক্ষিকার পক্ষে চুলের ব্যাপারে রুচি ও সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলার, আলোচনা করার, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করার। তিনি জ্ঞানের পথে নয়, আলোচনার পথে নয়, ক্ষমতার পথে গেলেন। এটা যে সহিংসতা এই ধারণাই শিক্ষিকা ভদ্রমহিলার নেই। বাংলাদেশে কতোজন শিক্ষকের আছে, সেটাও গবেষণার বিষয়। বিপরীতে, এই সহিংসতার ঘটনা একটি সুযোগ হতে পারতো, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষিত’ শিক্ষক ও ছাত্র থাকলে। যারা সমস্যাটিকে নিয়ে আলোচনায় বসতে পারতেন। বিশ্লেষণ করতে পারতেন সমস্যাটা কী? ভুলটা কোথায়? অন্যায় টা কী? সমাধান কিসে?
এই যে ‘ডিসিপ্লিন’ ও ‘সহনশীলতার’ দ্ব›দ্ব। এই যে জ্ঞানের ক্ষমতার বদলে শারীরিক বা পাশবিক ক্ষমতা ব্যবহার, এটা কি বদলে যাবে? বাংলাদেশে কি আর এরকম সহিংসতা হবে না? মাদ্রাসায় কি এইরকম সহিংসতা নিয়ম হয়ে নেই? ওই শিক্ষকের পেশীর ক্ষমতা ‘প্রতিবাদী’ ছাত্রদের চেয়ে বেশি হলে, তিনি হয়তো এই যাত্রা বেঁচেই যেতেন, যেমন পুলিশ সদস্যরা বেঁচে যায়। এই যে ছাত্ররা ‘জিতে গেলো’, কী ব্যাপারে জিতে গেলো? দ্ব›দ্ব যে শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা করা যায়, সেই সুযোগ পেলো না। জানলো, জীবনে পেশী বা সংখ্যাগুরুর শক্তিই ভরসা। অসম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশোধ নেওয়াই বিজয়। সহনশীলতা, সংবেদনশীলতা, সম্মান, সহমর্মিতার মূল্যবোধ এবং জ্ঞানের ক্ষমতায় আস্থা না থাকলে, অসম্মান, অন্ধবিশ্বাস ও ক্ষমতাচর্চার সংস্কৃতি প্রধান হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা করা হয়। বামদল ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’Ñ ¯েøাগান দিয়ে দল বিভক্ত করে। এটা কোনো বিশেষ ব্যক্তির রোগ নয়, আমাদের সামন্ত, ধর্মান্ধ, সা¤প্রদায়িক সমাজের মহামারির প্রকাশ। দ্ব›দ্ব মীমাংসার শান্তিপূর্ণ পথ অচেনা। ফলে, প্রতিশোধপরায়ণ সহিংসতা ও অসম্মান প্রধান বিবেচনা। ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান, অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।’ ফেসবুক থেকে