মঞ্জুরে খোদা টরিক: একজন মুফতি ইব্রাহিমকে নিয়ে এখন কথা হচ্ছে। তাকে অনেকেই বলছেন, তিনি একজন মানসিক ভারসাম্যহীন বিকারগ্রস্ত মানুষ। আসলে কি তাই? এটাই যদি মানতে হয়, তাহলে ভাবতে হবে- আমাদের সমাজে এমন বিকারগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা কতো? তা এখন হাজার, লাখে আটকে নেই, কোটির ঘরে গেছে। এমন একটি বিকারগ্রস্ত বৃহত জনগোষ্ঠী কীভাবে গড়ে উঠলো?কোথায়,কোনো পরিবেশে গড়ে উঠলো? কারা গড়ে তুললো? সে প্রশ্নকে বাদ দিয়ে আপনাদের আলাপ হবে অর্থহীন দায়িত্বহীন এবং মূলঘটনাকে আড়াল করা। আমাদের দেশের রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক। বিচারের ব্যবস্থা থাকলে তাদের প্রত্যেককেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতো। এই মুফতি ইব্রাহিমদের তৈরিতে তারা তাদের দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। তাদের অদূরদর্শি, নীতিহীন, ক্ষমতাকেন্দ্রীক অপরাজনীতির কারণে- আমাদের সমাজ বিকারগ্রস্ত এসব অর্বচীন অধমে ভরে উঠছে এবং তাদের কদর, দাপট, প্রভাব, প্রতিপত্তি ক্রমেই বাড়ছে।
মুফতি ইব্রাহিম এমন একজন ইসলামী চিন্তবিদ-যিনি নিজেকে একাধারে মহাবিজ্ঞানী,গবেষক, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, দার্শ্যনিক ও মহাজ্ঞানী মনে করেন। জ্ঞানবিজ্ঞানের হেনো শাখা নেই তার অজানা। যেকোনো আবিষ্কারকের আবিষ্কারের অন্তর্গত কাহিনী-ফরমুলা তার জানা। করোনা ভ্যাকসিনের ফমুলাও তুরি মেরে বলে দেন। আইনস্টাইন, নিউটন, গ্যালিলিও, কোপর্নিকাস তার কাছে নস্যি। সৌর জগতের তাবত জ্ঞান-তথ্য তার নখদর্পনে। যিনি প্রতিদিনের স্বপ্নেই সব পেয়ে জান নানা বিষয়ের আগাম তথ্য-সমাধান। শুধু জানতে পারেনি- ডিবির বিষয়টি। গ্রেফতারের পূর্বে মুফতি ইব্রাহিম ভিডিওতে দেশ-জাতির উদ্দেশ্যে এক বিশাল ওয়াজ-নসিহত করেন। তাকে গ্রেফতারের কারণে বলেন, ভারতের দালাল সরকারের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তার পুরো বয়ানে ছিলো ভারত-বাংলাদেশে ও ভারতের তাবেদার সরকারের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা। তালিবানের ভয় ও শাসনের ইংগিত। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে আমাদের ভালো-মন্দ অনেক আলাপ আছে। সে আলাপ আলাদভাবে করবো। মজার ব্যাপার হচ্ছে সেখানে তিনি বারবার বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনা-আওয়ামী লীগের নাম নিয়েছেন কিন্তু তিনি তাদের সরাসরি কোনো কটূকথা বলেননি, আক্রমণ করেননি। তার মানে জাতে মাতালা তালে ঠিক। আপনারা যাকে উন্মাদ বিকারগ্রস্ত বলছেন, তিনি এ সরকারকে ভারতের রাজাকার বলে গালি দিলেও- তাদের মূলকেন্দ্র ও জায়গাতে সরাসরি আঘাত করেননি।
ঠিকই তিনি তার বিপদ আঁচ করে সতর্ক হয়ে কথা বলেছেন। কেউ বদ্ধ উন্মাদ হলে-সে হবে কাণ্ডজ্ঞানহীন, বাছবিচারহীন কিন্তু তিনি তা নন। পাগল হলে কেউ এ কাজ করতে পারে না। আর তিনি যদি বিকারগ্রস্ত, উন্মাদ-পাগলই হন তাহলে সেই পাগলমি ধর্মের নামে,ওয়াজ ব্যবসার নামে তিনি দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে করে যাচ্ছেন।
এ কাজ শুধু তিনি একা নন, অসংখ্য মানুষ ইসলামের নামে করে যাচ্ছেন। তারা হেলিকপ্টার করে দেশের একপ্রান্ত খেকে অন্য প্রান্তে ধর্মের নামে আধুনিকতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, পাশ্চত্যের বিরুদ্ধে ও ধর্মানুভূতির নামে মিথ্যাচার ও উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের অনন্য প্রতিভা, শিক্ষাবিদ, সমাজতাত্ত্বিক গুরু সলিমুল্লাহ খান ঢাকায় পায়ে হেঁটে চলেন। ফার্মগেটের এক চিপা-গলিতে থাকেন। শুধু তিনি নন দেশের প্রায় সব উচ্চশিক্ষিত, প্রগতিমনা, আধুনিক, উন্নত মুক্তিবুদ্ধির ব্যক্তিদের অবস্থা একই। আর এই মুফতি ইব্রাহিমের মতো যারা তারা হ্যামার, হেলিকপ্টারে সারাদেশ ঘুরে বেড়ান। কারা শোনেন তাদের বয়ান-বক্তৃতা? দেশে কীসের উৎপাদন হচ্ছে, কী উৎপাদন হচ্ছে বুঝতে পারছেন না? সমাজে কাদের কদর-সমাদর-সম্মান বাড়ছে, তা কি বুঝতে পারছেন না? তারপরও কি আপনাদের আঙ্গুল তাক করে দেখিয়ে দিতে হবে? তাই বলি, শহরের তথাকথিত চাকচিক্য, উঁচু দালান, লাইটবাতি দেখে নয়- দেশের সামাগ্রিক অবস্থার পতন, পেছনে চলা, অন্ধকারকে দেখুন। কোথায় প্রবেশ করছে দেশ? তাকে না ভেবে, সেখানে প্রশ্ন না করে- মুফতি ইব্রাহিমদের বিকাগ্রস্ত, ভারসাম্যহীন মানুষ বলে স্বস্তি পেতে পারেন, নিজেকে দায়মুক্ত ভাবতে পারেন, কিন্তু মুক্তি পাবেন না। আর যদি কিছু না জানার ভান করে নির্বিকার-নির্লিপ্ত থাকেন,তাহলে বিকারগ্রস্ত এক অন্ধকার আফগান সমাজের জন্য নিজেদের তৈরি করুণ, বড় আঘাতে জন্য প্রস্তত থাকুন। লেখক ও গবেষক
আপনার মতামত লিখুন :