জিয়া আরেফিন আজাদ : অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কচলাকচলি করাটা আমাদের অভ্যাস। সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরোদ্ধে শিক্ষার্থীদের চুলকাটার অভিযোগ এসেছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে। ইতিমধ্যে ফারহানা বাতেন তিনটি প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। একাত্তর টেলিভিশনে ছয়-সাতজন সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী তাকে পুলিশি স্টাইলে জেরা করেছেন। পত্রিকায় কার্টুন প্রকাশ হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার পদত্যাগ চাচ্ছে। আমাদের সমাজে মানবাধিকার প্রশ্নে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে-বিষয়টিকে এমনভাবে দেখতে ভালোই লাগে। তবে আমার মনে হচ্ছে একটি বিষয় নিয়ে কোন পর্যায়ে গিয়ে থামতে হবে বা কীভাবে সামগ্রিক ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জন করা যাবে সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই বা আগ্রহও নেই। কোনো একটি পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠির বিরূদ্ধে আগের কোনো রাগ বা নিজের কোনো অশান্তি উগরে দেওয়াটাই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।
এ ধরনের মনোভাব প্রগতিশীল সমাজ গঠনে অন্তরায়।বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থী হেনস্থার বিষয়টি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির সম্পর্ক আছে। আজ যদি ফারহানা বাতেনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও করা হয় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বা বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থী পীড়নের অবসান ঘটবে না। আবার সেই সঙ্গে এটাও মাথায় রাখতে হবে পীড়ন শুধু শিক্ষকরাই করেন না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খুব নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীরা স্বীয় শিক্ষকদের পীড়ন করে থাকেন। মজার বিষয় হলো শিক্ষক পীড়নের ক্ষেত্রে সরকার, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সুশীল সমাজ তথা বৃহত্তর সমাজ আবার শিক্ষার্থীদের পক্ষে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষকগণ এমন পীড়নগুলো চেপে যান।
শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করছে মানে শিক্ষকদের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে বা নির্দিষ্টভাবে ওই শিক্ষকের ক্ষমতা কম। তিনি যদি সত্যি ক্ষমতাবান হতেন তা হলে একটা বা দুটি ব্যতিক্রমী মর্যাদাবান শিক্ষার্থী হয়তো প্রতিবাদ করতো। বাংলাদেশে ভালো কাজে, নৈতিক কাজে কখনো বেশি মানুষ পাওয়া যায় না। এতোজন শিক্ষার্থী একসঙ্গে আন্দোলন করছে মানে এর পেছনে পলিটিকস আছে। সত্যি সত্যি শিক্ষার্থী বা যেকোনো মানুষের মর্যাদা চাইলে, পীড়নের অবসান চাইলে সবাইকে নিয়েই সংস্কার পরিকল্পনা করতে হবে।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নিজেদের এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনা করে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করতে পারেন। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে তার জন্য একটি কোড অব কনডাক্ট গঠন করতে পারেন। আন্দোলন করার কারণে শিক্ষার্থীরা যেন পরবর্তী সময়ে হেনস্থা না হয় তার জন্য কাজ করতে পারেন। কিন্তু এ সবের বদলে যদি গায়ের জোরের মাধ্যমে সত্য? প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয় তা টেকসই হবে না। আর আমরা যারা বিষয়টিতে অতি উৎসাহ দেখাচ্ছি তাদের উচিত হবে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর ছেড়ে দিয়ে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে বিদ্যমান পীড়নের বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা। আর কচলাকচলিতে আনন্দ পেলে আমার বলার কিছু নেই। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :