শিরোনাম
◈ বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য চীনের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে যে নতুন নির্দেশনা ◈ জনগণ রায় দিলে ৫ বছরেই দেশের ইতিবাচক পরিবর্তন করা সম্ভব: জামায়াত আমীর ◈ সহকারী শিক্ষকদের জন্য নতুন নির্দেশনা, সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে যেসব তথ্য ◈ রাতে ঢাকাবাসীর জন্য দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অধিদপ্তর ◈ ডাকসুর পর জাকসুতেও শিবিরের জয়জয়কার ◈ এআই মানবীকে মন্ত্রী বানিয়ে দিল বিশ্বের প্রথম দেশ আলবেনিয়া! ◈ জাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি কে এই আবদুর রশিদ জিতু ◈ কলকাতায় সাইনবোর্ডে বাংলায় নাম লেখা বাধ্যতামূলক, না মানলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের হুঁশিয়ারি মেয়রের ◈ জাকসুর ভিপি স্বতন্ত্রের জিতু, জিএস শিবিরের মাজহার ◈ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে: আলী রীয়াজ

প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০২:৩৫ রাত
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০২:৩৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইকবাল আনোয়ার: দাঁত-দর্শন

ইকবাল আনোয়ার: আমি ভয় তাড়াতে ডিসপোজেবল গ্লাসে এসিসটেন্ট থেকে চেয়ে এক গ্লাস পানি খেলাম। কেনোনা একটু পরেই বত্রিশ পাটি এখন সব নেই সমাপর্ন করতে যাচ্ছি, যার কাছে, তিনি সো মেশিন, পানি উত্তোলন মেশিন, পাইলিং মেশিন ইত্যাদি নিয়ে সওয়ার হবেন। ইতোমধ্যে এক ভদ্রলোককে, পাশের একটি, রাজা যার যেভাবে শয়ন করতেন, সেরকম শয্যায় ফেলে হঠাৎ কি যেনো করার সঙ্গে সঙ্গে তার কণ্ঠ থেকে আগত একটি মাত্র অদ্ভুত স্বরধনিতে আমার পিলে চমকালো। এমন ধ্বনি কি এই মানুষটি থেকে আগত। যিনি কিছুক্ষণ আগে কেমন বাজখাই গলায়, সাজিয়ে, মধুর কণ্ঠে, শুদ্ধ ইংরাজি- বাংলায় কথা বলছিলেন? তাই যদি হয়, তবে আমার নিনাদ কেমন নিচু প্রকৃতির হবে। ভাবছি। দাঁতের ব্যাথা হলো জাতের ব্যথা। আর আমি বোধ হয় এর সবচে বড় সমঝদার। এর পেছনে রয়েছে ছোটবেলার স্মৃতি। কোনো দাঁতই আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেনি। ভাবি আজ, যে বিগ্রহে গেছে আমার শৈশব- দাঁত-কাল, এখন মুখে দাঁত থাকলেও, তাদের পরষ্পর সারি করে থাকার কথা না। অথচ সেদিনের ঝগড়া ভুলে আজ তারা অন্তত লেভেল প্লেইং ফিল্ডেই আছে। আমার দাঁতের ব্যথায় কেউ ঘুমাতে পারতো না। আম্মার গুল, জর্দা, সাদা পাতা, লং, লবন বহু রকম চিকিৎসা বিফল হলে, আব্বা জলদি হুমিওপ্যাথীর ঘর থেকে এনে, স্প্রি মতো কি একটা তুলায় ভিজিয়ে দাঁতে দিতেন। তারপর আমার যাত্রা হতো পাকানো মোচের এক ডাক্তারের কাছে। সেটি শহরের প্রধান দাঁতের ডাক্তার গলি। রাস্তায় অদ্ভুত গন্ধ। চেম্বারে গেলে যমদূতের পেছনটা দেখা যেতো। তিনি নকল দাঁত ঘষায় রত।

তারপর তার চেহারা প্রকাশিত হলে আমার যন্ত্রণা এমন বেড়ে যেতো যে, বলতাম আব্বাকে, এখন ব্যথা নেই। অবশেষে বের হয়ে এলে মনে হতো, নব জীবন পেলাম। আজ কেবল স্ফুর্তির দিন। পাওরুটির গন্ধ মাখা সমাদরের দিন। দাঁত পেতাম হাতে। কেনোনা সেটা ইঁদুরের গর্তে ফেলে ইঁদুরকে বলতে হবে, সে যেনো আমার এ দাঁত নিয়ে তার চিকন সুন্দর দাঁত আমাকে দেয়। দাঁতের পোকা খোয়াতে নুনাবাদ থেকে মুখে বসন্তের দাগ অলা লিকলিকে একজন আসতো এবং কলা পাতায় হাতে ধরা গাছের শিকড় থেকে অজস্র পোকা বের করে দেখাতো। তাজ্জব, একটা ছোট দাঁতে এতো পোকা কোথায় থাকে। ভাবতাম। যাক, আমার পালা এবার। আল্লাহর নাম স্মরণ নিলাম। প্রভু, ব্যথা যেনো না পাই। অনুজ ডা.অধ্যাপক বদরুল আলম, বললেন, ইকবাল ভাই আগের সিটিং এ এন্যাসথেশিয়া দিলেও, আজ দেবো না। কারণ এতে পাল্প পেলাম কিনা বুঝা যায় না।-আমি কি আরেকটু কি পানি খেতে পারি? করুণ কণ্ঠে বললাম।- হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, তার বিনয়ী উচ্চারণ। একটা বুদবুদের কলকলে শব্দ সঙ্গি হলো, কানের কাছের গাল থেকে, আর চিঁ চিঁ ঝিঁঁঝির শব্দে গুঁড়া ক্যালসিয়ামের পোড়া গন্ধ। এ যেনো জীবন চলছে আমার। চলছে ব্যথাহীন সময়, হঠাৎ একটা নাভি পর্যন্ত খবর হওয়া ব্যথা। জীবন যেমন, চলছে ভালোই, হঠাৎ না বলে কয়ে একটা দুঃখজনক-বিপদ। চলছে চলছে আবার একটা। এভাবে জীবন চলে। আমি দোয়া চালিয়ে যাচ্ছি। আমার জন্য, তার জন্য, জগতের সব দন্ত ভোগীদের জন্য। ভাবছি এমন একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার গড়তে কতো দিন লাগে একটা দেশের। এমনি কতো কতো নানা রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বিদায় নিলেন, করোনায়, জাতি কি তাদের স্মরণ করে, করবে, করেছে। তাদের সেবার কথা ক লিখা হবে কোন নিউজপ্রিন্টে। না, হয়তো নয়। সেখানে পাতা বরাদ্ধ রয়েছে,আরও গুরত্বপূর্ণ কিছু আছে। বদরুলের কাজ অনায়াশ-বিশ্বস্ততা-নিপুনতায় ভাস্মর। এমনি করে আরও কতো জন, আমাদের নির্ঘুম রাত আর বেদনার দিনকে আয়েশে ভরে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন।তিনি কথা বলছেন আর কাজ করে চলছেন।

আমার প্রতিটি আহ ওহ এর পর পর এসিসটেন্টকে বলছেন, এন্যাসথেশিয়া আনো। আমি আনন্দিত হই। আসলে এ যে শান্তনা। চোখের সামনে খাবার এনে নিয়ে যাওয়া। বলেন তিনি, ভাই এখন কষ্ট সহ্য করলে কাজটা ভালো হবে। ভবিষ্যতে শান্তি পাবেন। আমার মন তাই একবার বলে, এন্যাসথেশিয়া ছাড়াই হোক। এ যেনো, পৃথিবীতে ভোগে গেলে স্থায়ী জগতে অনেক ছাড় পাবো, এমনই দর্শন। দাঁতের চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেক কিছু পেলাম। ভাবলাম, কতো মানুষ দাঁতের ব্যথায় অস্থির। তারা কি এমন চিকিৎসা পাচ্ছেন। কবে পাবেন? উন্নত দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি প্রবাসীরা, সে দেশে দাঁতের চিকিৎসা অনেক দামি বলে, দেশে এসে তা করায়। এবং আমার অনেক আত্মীয় বন্ধু সেখানকার চেয়ে এখানকার চিকিৎসকদের কাজের প্রশংসা করে। হ্যাঁ, আমাদের অনেক ড্র ব্যাক আছে। তা ও দূর করতে হবে। লেখক : চিকিৎসক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়