ইত্তেফাক: চট্টগ্রামে ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি বেড়েছে। জেলায় হাজারো ওষুধের ফার্মেসি লাইসেন্সের বাইরে রয়েছে। জেলায় লাইসেন্সধারী ১২ হাজার ফার্মেসি থাকলেও বাস্তবে কয়েক গুণ বেশি ফার্মেসি রয়েছে। এসব ফার্মেসিকে লাইসেন্সের আওতায় আনার কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে সরকার বছরে প্রচুর রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঔষধ প্রশাসনের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে লাইসেন্সের জন্য প্রচুর আবেদন পড়ে রয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, লাইসেন্স নিতে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। বাড়তি টাকা ছাড়া লাইসেন্স মেলে না।
অভিযান পরিচালনাকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, খুচরা ফার্মেসিগুলো দুই প্রক্রিয়ায় ওষুধ সংগ্রহ করে। সরাসরি ওষুধ কোম্পানি থেকে এবং নগরীর হাজারি লেইনের পাইকারি দোকান থেকে। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলে কোম্পানিগুলো ওষুধ পরিবর্তন করে দেয়। কিন্তু হাজারি লেইনের দোকানগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পরিবর্তন করে দেয় না। একাধিক খুচরা বিক্রেতা অভিযোগ করেছেন, হাজারি লেইনের অধিকাংশ ওষুধের দোকান বিক্রি করা ওষুধের ভাউচার দেয় না। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান বলেন, অভিযানকালে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বেশি উদ্ধার হচ্ছে। গত আগস্ট ও চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ১৩টি ফার্মেসিতে অভিযানকালে ছয়টি ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পেয়েছি। হাজারি লেইনের পাইকারি বিক্রেতারা ক্রয়ের ভাইচার দেয় না বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ এসব ওষুধ পরিবর্তন করতে না পারায় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মেসির লাইসেন্স নিয়েও অনিয়ম পাওয়া যায়।’ চট্টগ্রামে ঔষধ প্রশাসনের একটি কার্যালয় রয়েছে। এই কার্যালয়ে পর্যাপ্ত জনবল রয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কার্যকর কার্যক্রম না থাকায় বাজারে মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রির প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব ভেজাল ওষুধের কারণে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। র্যাব ও জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযানে অনেক নামিদামি ফার্মেসিতে নানা অনিয়ম ধরা পড়ছে। দুই বছর পর পর লাইসেন্স নবায়ন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও লাইসেন্স নবায়ন না করে বছরের পর বছর ফার্মেসি চালানো হচ্ছে।
মাঠপর্যায়ে ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে মান যাচাইয়ের জন্য সরকারি ল্যাবে পাঠানোর কাজ হচ্ছে ঔষধ প্রশাসনের। কিন্তু ওষুধের নমুনা সংগ্রহ নিয়ে গাফিলতি হচ্ছে। চট্টগ্রামে ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, তারা প্রতি মাসে ১০-১২টি করে ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠাচ্ছে। চট্টগ্রামে ঔষধ প্রশাসনের কার্যালয়ের সঙ্গে লাগোয়া সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি। কিন্তু এই ল্যাবে ওষুধের নমুনা পাঠানো হয় না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকায় ল্যাবে পাঠানো হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এতে রিপোর্ট পেতে এক মাসের বেশি সময় লাগে। মাঠপর্যায়ে ভেজাল প্রতিরোধে অভিযান পরিচালনার কর্মসূচি গ্রহণের দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসনের। মাসে দুই-একটি অভিযান করে দায়িত্ব শেষ করছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ফার্মেসির জন্য লাইসেন্স নিতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট হতে হবে। কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত গ্র্যাজুয়েটধারী না থাকায় ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টদের নামে লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি তৃতীয় ক্যাটাগরি হিসেবে সার্টিফিকেটধারীদের নামেও লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে বলে ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান। সার্টিফিকেটধারীদের মনোনীত করতে ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির অধীনে সম্প্রতি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ফজলে রাব্বি বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো যখন পরিদর্শনে যাই তখন লাইসেন্স নিয়েও অনিয়ম দেখা যায়। আমরা তাদের লাইসেন্স ঠিক করে নিতে বলি। এসব বিষয় তদারকির দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসনের।’
চট্টগ্রামে ঔষধ প্রশাসন কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের পদটি খালি রয়েছে। বর্তমানে দুই জন সহকারী পরিচালকসহ অন্যান্য জনবল পর্যাপ্ত কর্মরত রয়েছে। জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, মাসে ১০-১২টি ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় ল্যাবে পাঠানো হয়। চট্টগ্রামের ল্যাবে সব ওষুধের মান যাচাই সম্ভব হয় না। লাইসেন্সের জন্য কেউ আবেদন করলে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হয়। প্রতি মাসে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।’