সনত চক্রবর্ত্তী: বাবা অসুস্থ, সংসার চলে না। তাই সংসারের হাল ধরেছে স্কুল ছাত্র রিয়াজ। এই বয়সে অন্য পাঁচটি সাধারণ ছেলের মতো খেলায় বয়স কিন্তু ছাত্র বয়সে এখন সে ঝাল মুড়ি বিক্রেতা। ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ফুটবল খেলার মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন দেখা মেলে তার। প্রতিদিন বিকেলে সে ভ্যানে করে ঝাল মুড়ির পাশাপাশি, চটপটি, ফুসকা, আমড়া, বাদাম ও বিক্রি করে। প্রতিদিন বিকালে খেলতে আসা ও ঘুরতে আসা পথচারীরাই তার দোকানের ক্রেতা।
বোয়ালমারী উপজেলার ময়না গ্রামে মঞ্জুর প্যারামানিক বড় ছেলে রিয়াজ, রিয়াজ ময়না এ সি বোস ইনস্টিটিউশনের মানবিক বিভাগের ১০ শ্রেণির ছাত্র। বয়স মাত্র ১৫ এর কোঠায়। দরিদ্রের কশাঘাতে রিয়াজ এখন বাবার ব্যবসার হাল ধরেছে। রিয়াজের বাবা মঞ্জুর প্যারামানিক দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। হটাৎ পিতা অসুস্থ হওয়ার জন্য সংসারের হাল ধরতে হয়েছে রিয়াজ। বাধ্য হয়ে ১ বছর হলো রিয়াজকে বাবার ব্যবসা চালিয়ে নিতে হচ্ছে।
রিয়াজের বাবা মঞ্জুর প্যারামানিক বলেন, ‘বাড়ির বসবাসের ভিটাটুকুই সম্বল।পরিবারের ৬ সদস্য, তাদের নিয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি অসুস্থ তাই বাধ্য হয়ে রিয়াজ সংসারের হাল ধরেছে। ঝাল মুড়ির ব্যবসায় অনেক কষ্টে চলে ৬ সদস্যের সংসার। সন্তানদের মধ্যে সবার বড় রিয়াজ। অসুস্থ মা আছেন, তাই ছেলের উপার্জনে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই ছেলেকে ঝাল মুড়ির ব্যবসায় লাগিয়ে দিয়েছেন। ইচ্ছে হয় না ছেলেকে দিয়ে এ কাজ করাতে। কিন্তু কি করব? আমি খুব অসুস্থ, যা আয় করে তা দিয়ে সংসার চলে না। আমার দুই ছেলেকে নিয়ে আমি অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। ছোট ছেলে খুব মেধাবী, ক্লাস নাইনে পড়ে।
রিয়াজ বলেন, ‘করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় ব্যবসা চালিয়ে নিতে কোনো সমস্যায় হয়নি। এখন স্কুল খোলা তাই সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন স্কুল, প্রাইভেট, দোকান চালাতে আমাকে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাই বাধ্য হয়ে প্রতিদিন বিকেলে দোকান চালাই। আমি ঝাল মুড়ি বিক্রি করি। যা উপার্জন হয় তাই দিয়ে বাবার ও দাদির ওষুধ কিনি, ছোট ভাই পড়া লেখা এবং সংসার চালে।
ময়না গ্রামের ছবুর মোল্লা বলেন, রিয়াজ খুব ভদ্র ছেলে, সে সংগ্রাম করে পড়ালেখা করছে। এই বয়সে সংসারের হাল ধরেছে, যদি কোনো সুযোগ সুবিধা পেত, তাহলে ঠিকভাবে পড়ালেখা করতে পারতো। সম্পাদনা: হ্যাপি