রাশিদ রিয়াজ : চীনের নিষেধাজ্ঞায় বিটকয়েনে এই বড় পতন ঘটে। মঙ্গলবার চীনের রাষ্ট্রীয় তিন প্রতিষ্ঠান তাদের এক বিবৃতিতে ক্রিপ্টোকারেন্সিভিত্তিক লেনদনকে অনিরাপদ অভিহিত করে। একই সঙ্গে এই কারেন্সি ব্যবহার করে দেশটির কোনো প্রতিষ্ঠানে কেনাকেটা বা লেনদেন করা যাবে না বলেও ঘোষণা দেয়। তারপরই বিটকয়েনের বাজার মূল্যে বড় দরপতান ঘটে। গত তিন মাসে প্রথম বারের মতো প্রতি বিটকয়েনের দাম এসে দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ডলারেরও নিচে। ন্যাশনাল ইন্টারনেট ফিন্যান্স অ্যাসোসিয়েশন অফ চায়না, চায়না ব্যাংকিং অ্যাসোসিয়েশন এবং পেমেন্ট অ্যান্ড ক্লিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন অফ চায়নার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো গ্রাহক যদি ক্রিপ্টো কারেন্সিভিত্তিক লেনদেনে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে এর দায় প্রতিষ্ঠান তিনটি নেবে না। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ক্রিপ্টো কারেন্সির দামের উঠানামা মানুষের সম্পদকে ঝুঁকিতে ফেলছে। এটি স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকেও বিঘ্নিত করছে। ফোর্বস/কয়েনমার্কেট ক্যাপ
গত মার্চে মার্কিন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান এলন মাস্ক ঘোষণা দিয়েছিলেন, বিটকয়েন ব্যবহার করেও টেসলার গাড়ি কেনা যাবে। কদিন আগে তার আরেক প্রতিষ্ঠান পেপাল লেনদেনে বিটকয়েনকে বৈধ মাধ্যম বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই তিনি আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। এলন বলেন, বিটকয়েন কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়ছে। কেননা বিটকয়েন মাইনিংয়ে ব্যবহৃত উচ্চ ক্ষমতার কম্পিউটার চালাতে জীবাশ্ম জ্বালানি খরচ করতে হয়। এলনের এই ঘোষণার পরে প্রতি বিটকয়েনের মূল্য ১০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছিল ৫০ হাজার ডলারে। চীন ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে লেনদেন নিষিদ্ধ করলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে কেউ মালিকানা রাখতে পারবেন। এর আগে ২০১৭ সালে স্থানীয় পর্যায়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিপরীতে মুদ্রা লেনদেন নিষিদ্ধ করেছিল দেশটি। ২০১৯ সালে দেশের ভেতরে ও বাইরে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিপরীতে মুদ্রা লেনদেন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পিপলস ব্যাংক অফ চায়না। একই সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা যায় এমন ওয়েবসাইটগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়। বিশ্বের মোট বিটকয়েনের ৭৫ শতাংশ মাইনিং করা হয় চীনে।
চীনের বিটকয়েন নিয়ে ওই ঘোষণার পর ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার মূল্য হারায় ১৮৮ বিলিয়ন ডলার। শতাংশে বাজার মূল্য পড়ে যায় ৯ শতাংশ। ভাইটাল নলেজ মিডিয়ার বিশ্লেষক অ্যাডাম ক্রিসফুলি বলছেন, বিটকয়েন নিয়ে চীনের ঘোষণা তার অতীতের বক্তব্যের সাথে খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবুও বিনিয়োগকারীদের বর্তমান দামে কেনার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে কারণ সম্ভবত বেইজিংয়ের পদক্ষেপগুলি অন্য দেশগুলি গ্রহণ করতে পারে, এবং তা করলে ক্রিপ্টোকারেন্সি আরো বড় ধরণের দরপতন দেখতে পারবে বিশ^। তবে এধরনের আভাসের সঙ্গে একমত পোষণ না করে ডিজিটাল এ্যাসেট ব্রোকার গ্লোবালব্লকের বিশেষজ্ঞ ফ্রেডি উইলিয়ামস বলেন খুব শীঘ্রই বিটকয়েন তার বাজার মূল্য ফিরে পাবে এবং বিনিয়োগকারীদের ভয় কেটে আস্থাও ফিরে আসবে। উইলিয়ামস আরও বলেন চীন বহু বছর ধরে তার তথাকথিত বিটকয়েন নিষেধাজ্ঞার পুনরাবৃত্তি করেছে (সম্প্রতি মে মাসে), কিন্তু এটি এখনও প্রতিষ্ঠানগুলিকে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রহণের জোরদার গতিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি।