ইউসুফ মিয়া: [২] রাজবাড়ীর সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সেই চর সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। অবশেষে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে পদ্মার পেটে।
[৩] শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সাড়ে সাড়ে ৪টার দিকে চর সেলিমপুর ৭ নং ওয়ার্ড স্কুল সংলগ্ন পদ্মা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ৬০ মিটার সিসি ব্লক ভেঙে বিদ্যালয়টি নদীতে ধসে পড়ে। এ সময় এলাকার শতশত মানুষ তাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানটি নিজের চোখে নদী গর্ভে চলে যেতে দেখে কাঁদতে থাকে।
[৪] বিদ্যালয়টি ভেঙে যাওয়ায় পিছিয়ে পড়া চরাঞ্চলের মানুষের প্রায় শতাধিক সন্তানদের পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে গেল। তবে প্রশাসন বলছে, এই বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার যাতে কোনো ধরনের বিঘ্ন না ঘটে সে বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
[৫] পানি উন্নয়ন সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীতে পদ্মানদীর ডান তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পের জন্য ৩৭৬ কোটি টাকার কাজ হয়।এতে সাড়ে সাত কিলোমিটার এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ না হতেই কয়েকদফার ভাঙনে সাড়ে ৭ কিলোমিটার এলাকার প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ মিটার এলাকার কংক্রিটের তৈরি সিসি ব্লক নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
[৬] বিদ্যালয় সংলগ্ন একাধিক বাসিন্দা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার নদী ভাঙনরোধে এতো টাকা ব্যয় করছে অথচ যারা ঠিকাদার তারা কাজ ভালো করছে না। ভালো মতো কাজ করলে আজ এই বিদ্যালয়টি ভাঙত না।
[৭] স্থানীয় বাসিন্দা নায়েব আলী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে আজ আমাদের একমাত্র স্কুলটি রক্ষা হলো না। সেই নদীর পেটেই চলে গেলো স্কুলটি। স্কুল ছাড়াও প্রায় আড়ইশো পরিবার এখন হুমকির মুখে রয়েছে।
[৮] আরেক স্থানীয় বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, আজ সকাল থেকেই পদ্মানদী ভাঙছিলো। দুপুরের পরে ভাঙনের জোর বাড়তে থাকায় স্কুলটি নদী গর্ভে চলে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত কাজেই আজ এই অবস্থা। এখন এলাকার হাজার হাজার মানুষ হুমকির মুখে রয়েছে।
[৯] বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবির বলেন, আমাদের পড়ালেখার একমাত্র স্কুলটি আজ নদীতে চলে গেলো। আমরা এখন কোথায় পড়বো।
[১০] বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ইমান আলী ফকির বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলাের পর থেকে বিদ্যালয়ের মূল ভবনেই পাঠদান করাচ্ছিলাম। হঠাৎ ১৫ সেপ্টেম্বর ভোরে স্কুলের পাশেই সিসি ব্লক ভেঙে নদীতে চলে যাওয়ার পর থেকে আর ওখানে পাঠদান করাচ্ছিলাম না। কারণ, তখন মূল ভবনটি চরম ঝুঁকিতে ছিল। শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভেবে পাশের টিনশিডে ক্লাস নিচ্ছিলাম। কিন্তু আজ স্কুলের ভবনটি নদীতে ভেঙেই গেল।
[১১] রাজবাড়ী সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার ফাহমি মোঃ সায়েফ বলেন, বিদ্যালয়টি পদ্মনদীতে ভেঙে গিয়াছে জেনেছি কিন্তু বিদ্যালয়ের পাশেই একজনের মালিকানা জমি আছে আমরা সেই মালিকানা চেয়েছি। তিনি জমি দিতে চেয়েছেন জমিতে বিদ্যালয়ের পড়াশুনার জন্য টিনশেড তৈরি করে সেখানেই বিদ্যালয়ের কাজগুলো পরিচালনা করা হবে। পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে ভবন তৈরি করা হবে।
[১২] মিজানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আতিয়ার রহমান বলেন, মিজানপুর ইউনিয়ন রাজবাড়ী জেলার সর্ব বৃহৎ ইউনিয়ন। ইতোমধ্যে মিজানপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ৩টি ওয়ার্ড নদী গর্ভে চলে গেছে। এখন ৭নং ওয়ার্ড টাউ ঝুঁকিতে রয়েছে। এই এলাকার দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ এখন হুমকিতে রয়েছে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি অবলম্বে আমার এই ইউনিয়নটা নদী ভাঙনের হাত রাক্ষা করতে।
[১৩] রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ বলেন, পদ্মা নদীর পানি কমার কারণে হঠাৎ করে পদ্মা ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের খবর পেয়ে আমরা ঘটানা স্থল পরিদর্শন করেছি। জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ চলছে।
[১৪] এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভোরে হঠাৎ করে বিদ্যালয় সংলগ্ন পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধে ফের ভাঙন শুরু হয়। এতে সিসি ব্লকের প্রায় ৪০ -৫০ মিটার সিসি ব্লক নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। হঠাৎ করে সিসি ব্লক ভেঙে নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় চরম হুমকিতে পড়েছিল বিদ্যালয়টিসহ মসজিদ ও প্রায় অর্ধশত বসত ভিটা। ১৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে নিরাপদ একটি টিনশিডে পাঠদান সম্পন্ন করছিলো। সম্পাদনা: হ্যাপি