নিউজ ডেস্ক: ঢাকায় সাড়ে ৩ হাজার মাদক কারবারি রয়েছে। তালিকাভুক্ত এই মাদক কারবারিদের মধ্যে কেউ সরাসরি এ কাজে জড়িত, কেউ গডফাদার, আবার কেউ বিনিয়োগকারী। গডফাদারের সংখ্যাই শতাধিক। এই তালিকা ধরে গ্রেফতার অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের প্রধান ও অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান শুক্রবার দুপুরে অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উত্তরের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে নিজ অবস্থানে মাদক না থাকলে কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। তাই আমরা চাইলেও তাদের গ্রেফতার করতে পারছি না। তবে এ কারবারিদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সুযোগ পেলেই গ্রেফতার করা হবে। ফজলুর রহমান বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদক কারবারিদের তালিকা সম্প্রতি হালনাগাদ করেছে। এখন ঢাকা বিভাগের মাদক কারবারিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
ফজলুর রহমান আরও বলেন, আগে যারা ইয়াবার কারবার করতেন তারাই এবার মিয়ানমার থেকে ভয়ানক মাদক ক্রিস্টাল মেথ আইস নিয়ে আসছেন। আর এই কারবারের সঙ্গে জড়িত হচ্ছেন বিদেশফেরত উচ্চ শিক্ষিতরা।
সংবাদ সম্মলনে অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, ২১ আগস্ট বনানী ও উত্তরায় অভিযান চালিয়ে ৫০০ গ্রাম আইসসহ ১০ মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার গুলশান, ভাটারা, কুড়িল ও রমনা থেকে আরও ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ৫৬০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস ও ১২০০ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার মাদক কারবারিরা হলো-জাকারিয়া আহমেদ অমন, তারেক আহম্মেদ, সাদ্দাম হোসেন, শহিদুল ইসলাম খান ও জসিম উদ্দিন। ফজলুর রহমান বলেন, ঢাকায় এই চক্রটির ক্রিস্টাল মেথ আইসের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ছিল। প্রথমে রমনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামি জাকারিয়াকে ৫ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া
তথ্যের ভিত্তিতে গুলশান থানার বারিধারা দূতাবাস এলাকায় অভিযান চালিয়ে তারেক আহম্মেদকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকেও ৫ গ্রাম আইস মাদক ও ১০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, জাকারিয়া ও তারেকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাদ্দাম হোসেনকে ৯০ গ্রাম, শহীদুল ইসলাম খানকে ২০০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস ও ৫০০ ইয়াবা ট্যাবলেট এবং একটি প্রাইভেটকারসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর জোয়ার সাহারা, ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জসিম উদ্দিনকে ২৬০ গ্রাম আইস মাদক ও ২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার করা হয়।
ফজলুর রহমান জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট থানায় মাদক আইনে মামলা করা হয়েছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে আইস মাদকের কারবারে যুক্ত হচ্ছে বিত্তশালীরা। গ্রেফতার হওয়া আসামিদের সবার অবস্থা ভালো ও তারা বিত্তশালী। তাদের কেউ ইংল্যান্ড থেকে বিবিএ করেছেন, কেউ আবার অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করেছেন। তারাই রাজধানীর অভিজাত এলাকায় করছেন মাদকের কারবার। তারা নিজেরা সেবনের পাশাপাশি ভয়ানক মাদক আইস কারবারের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এসব মাদকের উৎস মিয়ানমার।
তিনি বলেন, ক্রিস্টাল মেথ (আইস) একটি ভয়ংকর মাদক-যা ইয়াবার থেকে বহুগুণ শক্তিশালী। এই মাদক মানুষের মস্তিষ্কের নিউরোনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সূত্র: যুগান্তর