অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: গরুকেও potty train ধরহ করিয়ে সঠিক জায়গায় টয়লেট ব্যবহার করতে শেখানো গিয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগেই বিশ্বখ্যাত ‘নেচার এবং সাইন্স জার্নালে’ এই সংকান্ত আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে। পৃথিবীর ১০ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাসের জন্য গরুর প্রস্রাবকে দায়ী করা হয়। অনেক গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা গরুকে কুকুর বিড়ালের মতো potty train বা টয়লেট ট্রেনিং করাতে সফল হয়েছে। গরুকে potty train বা টয়লেট ট্রেনিং করাতে সফল হওয়া যায় অথচ বাংলাদেশের মানুষকে potty train করা যায় না। এখনো রাস্তাঘাটে প্রাকৃতিক কাজ সারে। বাংলাদেশের মানুষকে potty train বা টয়লেট ট্রেন করাব কি এখনো তাদের রাস্তাঘাট পার হওয়ার ট্রেনিং, সঠিক জায়গায় ময়লা ফেলার ট্রেইনিংই এখনো সফল হইনি। এখনো মানুষ যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে। এই লিস্ট ধরে লেখা শুরু করলে অনেক লম্বা হয়ে যাবে। মূল প্রশ্ন হলো কেন এমন? উত্তর খুব সহজ। শিক্ষার মান প্রায় শুন্যের কাছাকাছি। শিক্ষার মানের এই অবস্থা কেন? কারণ অন্তত গত ৩০ বছর ধরে কোনো সরকার শিক্ষার গুরুত্ব বুঝে এর জন্য যা করা প্রয়োজন করেনি। আমাদের দেশটা যে এমন হযবরল তার মূল কারণ শিক্ষার মানের অভাব। শিক্ষার মানের অভাব কারণ আমাদের দেশকে যারা চালায় তাদের শিক্ষার মানের কমতি আছে। আমরা কি এই সাইকেল চলতে দিতেই থাকব? গরুকে ট্রেইন করা যায় কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে ট্রেইন করা যায় না।
বাংলাদেশের মানুষকে কেন ট্রেন করা যায় না? কারণ ট্রেনিং টা হতে হয় খুবই early stage -এ অর্থাৎ ২ থেকে ১১ বছরের মধ্যে। এই সময়ে তাদের শিক্ষাটা কোথায় হয়। প্রথমত নিজ বাড়িতে এবং দ্বিতীয়ত প্রাথমিক স্কুলে। এই দুই স্কুলের মান খুব খারাপ। আপন বাসাটা পরিবর্তন করা যায় না এবং একই সঙ্গে প্রথম শিক্ষক বাবা-মাকেও পরিবর্তন করা যায় না। তাহলে কি করা যায়? আমাদের প্রাথমিক স্কুলকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে। এক্সাক্টলি এই কাজটাই করে উন্নত দেশে। জাপান তাদের নাগরিকদেরpotty training -এ সবচেয়ে সফল। তেমনি সফল কোরিয়া, তাইওয়ান, ইউরোপসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ। তারা ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে সিভিক সেন্স, ফরংপরঢ়ষরহব বা নিয়মানুবর্তিতা, পরিবেশের প্রতি দায়িত্ব ইত্যাদি যাবতীয় শিক্ষা এই বয়সেই দেয়। একটি দেশকে সভ্য বানাতে হলে এই কাজটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই বয়সে এই শিক্ষাটা না দিলে আর কোনোদিন সম্ভব না। উপরের কথাগুলো পড়ার পর একটু দম নেন।
এবার আমাদের মানসপটে আঁকা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের কথা একটু ভাবুন। কয়েক বছর আগে এনআইডি কার্ড করাতে একটি স্কুলে যেতে হয়েছিলো। সেখানে এই কাজে নিয়োজিত কিছু প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের দেখতে পাই। তাদের চেহারা, চাহনি, পরিধানের কাপড়, চলাফেরা দেখে রীতিমত কষ্ট লাগলো। এমন হবে না কেন? তারা হলো রাষ্ট্রের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আর তাদের হাতে দায়িত্ব দিয়েছি আমাদের শিশুদের সিভিক সেন্স, ফরংপরঢ়ষরহব বা নিয়মানুবর্তিতা, পরিবেশের প্রতি দায়িত্ব ইত্যাদি শেখানোর। প্রশ্ন হলো তারা নিজেরা এসব সঠিকভাবে জানে কিনা। কিংবা তাদের এসব শেখানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কিনা। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন ঘটনাচক্রে শিক্ষক হবেন না, শিক্ষকতা পেশাকে স্বপ্ন হিসেবে ধরেই আসতে হবে। বর্তমান যেন বেতন সেই বেতনে আর তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর সম্মানে ঘটনাচক্রে শিক্ষক হবে নাতো কি ধরস রহ ষরভব করে শিক্ষক হবে? দেশটার গোড়াতেই গলদ। এই গলদ যতোদিন ঠিক না হবে দেশ ঠিক হবে না। কারণ এই মানহীন শিক্ষা নিয়ে মন্ত্রী এমপি আমলা,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ যা কিছুই হয় না কেন। তাই শিক্ষকতা পেশার গুরুত্ব বুঝতে চেষ্টা করুন এবং একই সঙ্গে যা যা করলে মানুষ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখবে তা করুন। তাহলেই কেবল সত্যিকার মানুষদের শিক্ষক হিসাবে পাবেন যারা আপনার আমার সন্তানদের মডেল হবে। ইংরেজিতে একটা কথা আছে as you sow so you reap! শিক্ষায় বিশ্বে সর্বনিম্ন্ন বাজেট বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার মান কীভাবে বাড়াবেন? শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ান। লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়