নিজুম মজুমদার: সোহেল তাজ নারী প্রগতির চিহ্ন হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একটি ছবি অন্য আরও মহিয়সী নারীদের সঙ্গে একত্রিত করে যোগ করেছেন, ইনফ্যাক্ট সেই ছবিগুলোতে খোদ তার মা শ্রদ্ধেয়া জোহরা তাজউদ্দীনও রয়েছেন। উল্লেখ্য যে, বেগম জিয়া বর্তমানে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে শাস্তি ভোগ করছেন। আমার ব্যক্তিগত ভাবনার স্থান থেকে এই ছবিটি সংযুক্ত করাটা আমি দেখেছি বিস্ময় নিয়ে। কেন বিস্ময় নিয়ে দেখেছি, সেটিরও সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল দৈনিক প্রথম আলোতে এক সাক্ষাৎকারে সোহেল তাজ বলেন, দুর্ভাগ্য, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। আমার কাপাসিয়ার মানুষের ওপর বিএনপি-জামায়াত জোটের চলতে থাকে একের পর এক হামলা, মামলা ও নির্যাতন। প্রতিবাদে কাপাসিয়ার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলি। বিএনপি-জামায়াতের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন আমার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী যুবলীগের সভাপতি জালাল উদ্দীন সরকার।
পুলিশ নির্মমভাবে হত্যা করেছে জামাল ফকিরকে। এসবের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ অনশন করতে গিয়ে বারবার পুলিশের নির্মম হামলার শিকার হয়েছি। বস্তুত, বিএনপি-জামায়াতের পাঁচটি বছর হামলা-মামলা ঠেকাতে আমাকে বেশির ভাগ সময় রাজপথ ও আদালত প্রাঙ্গণে সময় কাটাতে হয়েছে। ‘দৈনিক প্রথম আলো, ২৪ এপ্রিল ২০১২’। ২০১২ সালের এই উল্লেখিত সাক্ষাৎকারের অংশ আর বেগম খালেদা জিয়ার ছবি নারী প্রগতির একজন হিসেবে একই ব্যক্তি দ্বারা সংযুক্ত করাটা, কোনো না কোনোভাবেই আমার কাছে সাংঘর্ষিক মনে হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে- একজন নেত্রী সোহেল তাজের কাছে কীভাবে প্রগতির ধারক হয়ে ওঠেন খোদ যার নেতৃত্বে তারই কর্মীরা সোহেল তাজকে অন্যায়ভাবে জেলে রেখেছে, নির্যাতন করেছে, কথা বলতে দেয়নি, কর্মীদের হত্যা করেছে ইত্যাদি।
কিন্তু সোহেল তাজের ব্যখ্যাটি যদি এমন হয় যে, রাজনৈতিক জিঘাংসা ব্যতিরেকে অর্থাৎ একেবারেই দূরে সরিয়ে রেখে শুধু একজন নারী হিসেবে স্বামীর মৃত্যুর পর বেগম জিয়ার রাজনীতিতে নানাবিধ প্রতিকূল পরিবেশ থাকবার পরেও যুক্ত হওয়া, দীর্ঘদিন পার্টিকে ধরে রাখা, একজন নারী হিসেবে এরকম একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে বা পুরুষ ক্ষমতায়নের আধিক্যের দেশে ক্রমাগত রাজনীতি করে যাওয়াকে সোহেল তাজ প্রাধান্য দিয়েছেন সেক্ষেত্রে অবশ্য এই ভাবনা নিয়ে একটা উপভোগ্য আলাপ হতে পারে, এটা আমি স্বীকার করি। কিন্তু সোহেল তাজ এটা স্পষ্ট করলে হয়তো ভালো হতো যে দুর্নীতির দায়ে আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত একজন নারী কি প্রগতি শব্দটার আলাপে আদৌ আসতে পারেন কিনা। মানে দাঁড়ায়, নারী প্রগতির আলাপের শুরুতেই যে একটা থ্রেশহোল্ড বা ছাঁকুনি রয়েছে, সেটা সোহেল তাজ স্বীকার করেন কিনা কিংবা এই যুক্তি তিনি মানেন কিনা। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :