রুবেল মজুমার : [২] কুড়াল মসজিদের ভীতর রেজভী অনুসারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত আবু হানিফ খানের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আবু হানিফ কে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় দিয়েছেন সোনাকান্দার দরবার শরীফের পীর এবং হাজারো তাওহীদি জনতা।
[৩] জানাজা শেষে দোয়ার মাঝে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ছোট শিশু ইব্রাহীম। তার কান্না দেখে মুসল্লিদের চোখ দিয়ে বাঁধ ভাঙ্গা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। তখন শোকের মাতমে ভারী হয়ে উঠে পুরো জানাজার মাঠ। চোখের সামনে পিতাকে নির্মম নিষ্ঠুর কায়দায় হত্যা । এই শোক অবুঝ শিশু ইব্রাহীমকে ঢুকরে ঢুকরে কাঁদায়। নীজে প্রাণে বেঁচে গেলেও হত্যার লংকাকান্ড তাকে তাড়া করে বেড়ায়।
[৪] ইব্রাহীম ভাবতেও পারেনি এই বুঝি পিতার হাত ধরে মসজিদে তার শেষ যাওয়া। ছোট শিশু লামিয়া, ফাতেমা, ইউসুফ, হয়ত অপেক্ষায় ছিল তাদের বাবা নামাজ শেষে মসজিদ থেকে জিলাপি নিয়ে আসবে। অপেক্ষা প্রহর শেষ হলেও ওদের বাবা ফিরে আসেনি।
[৫] লাশের গাড়ি এলাকায় পৌঁছলে গ্রামে কান্নার রোল পড়ে যায়। জানাজার নামাজে আগে ও পরে গ্রামবাসীর মুখে মুখে ফুটে উঠে নিহত আবু হানিফের সহজ সরল জীবন যাপনের কথা।
[৬] কুড়াখাল শিশু সদন হাফেজিয়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজার নামাজে উপস্থিত ছিলেন সোনাকান্দা দারুল হুদা দরবার শরীফের পীর মাওলানা মাহমুদুর রহমান। এসময় তিনি কথা বলতে গিয়ে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন যারা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই। আবু হানিফের সন্তানগুলোকে শান্তনা দেওয়ার মতো কোন ভাষা আমার জানা নেই। আপনারাই বলেন কোনও ভাষা দিয়ে এই চারটি শিশুকে শান্তনা দিবেন। এসময় উপস্থিত জনতা হত্যাকারীদের আটক করে ফাঁসির দাবি জানান।
[৭] নিহতের বড় ভাই খলিল খান বলেন- আমার ভাই দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন শেষ গত পাঁচ বছর পূর্বে দেশে আসেন। নীজ বাড়ির উঠানে গড়ে তুলেন গরুর খামার। সারাদিন খেত খামার কাজ আর গরু খামার দেখা শোনা করতেন।
[৮] নিহতের স্ত্রী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন - আমার স্বামী যতই কাজ করতেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করতেন। আমার এই স্বামীকে যারা হত্যা করছে আমি তাদের ফঁসি চাই। চারটা শিশু সন্তান নিয়ে আমি এখন কই যাব, কি করব? কোলের ছেলেটা ছল ছল চোখে শুধু তাকিয়ে থাকে। ছোট মেয়ে ফাতেমা বাবা বাবা বলে কান্না করে। বড় ছেলে ইব্রাহীমত নামাজ পড়ে আর বাবার জন্য কান্না করে। আমি এই অল্পবয়সে চারটি সন্তান নিয়ে কিভাবে বাঁচব।
[৯] উল্লেখ্য, জুম'আর দিন (১৭/০৯/২০২১ ইং) নামাজের খুতবা দেওয়ার পূর্বে সানী আজানকে কেন্দ্র করে রেজবীর অনুসারীরা আবু হানিফ খানকে নির্মম ভাবে ছুরির আঘাতে শহিদ করেন।
[১০] এলাকাবসী জানান, রেজবীর ভক্ত আর আহলে সুন্নত ওয়াল জাময়াত একসাথেই কুড়াখাল বাইতুন নুর কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ পড়তেন। রেজভীর ভক্তরা প্রচলিত নিয়মকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয় মসজিদের ভিতর ও বাহিরে চালু করার পায়তারা করে আসছিল।
[১১] এরই ধারাবাহিকতায় (১৭-০৯-২০২১ ইং) জুম'আর সানি আজান জুরপূর্বক বাহিরে দিতে চাইলে মসজিদের মুসল্লীরা সভাপতি নিকট এর কারণ জানতে চায়। তখন রেজভীর দল অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে নিরহ সুন্নী মুসল্লিদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। এসময় নামাজ পড়া অবস্থায় তারা আবু হানিফ খানকে খুন করে। এসময় আহত হয়েছেন আরো ১১ জন।
[১২] এই ঘটনার আজ তিন দিন এখনো তালাবদ্ধ মসজিদ। কুড়াল বাইতুন নূর জামে মসজিদের নিয়মিত মুসল্লীরা বলেন - মসজিদ তালাবদ্ধ। আজানের সুর শোনা যায়না। নামাজ হয়না। মসজিদের কাছে আসলে খুব কষ্ট হয়। মনে পড়ে যায় বিভীষিকাময় সেই ঘটনার কথা। ওরা যেইভাবে দাও, ছুরি, টেঁটা দিয়ে আঘাত করেছে সেই স্মৃতি মনে হলে গা শিহরিত হয়ে উঠে।
আপনার মতামত লিখুন :