সুজন কৈরী : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরির প্রলোভন ও বন্ধুত্ব করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতদের নাম- কবির হোসেন, শামসুল কবীর ও ইয়াছিন আলী।
শুক্রবার রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ২৫৭টি চেক বই, ২৩৪টি ডেবিট কার্ড, ৮টি মোবাইল ফোনসেট ও ১১টি সিম জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা ফেসবুকে বিভিন্ন নামে পেইজ খুলে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিদেশে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতো চক্রটি। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অভিনব কায়দায় চক্রের সদস্যরা চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে প্রতিদিন হাতিয়ে নিতো ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে কানাডায় লোভনীয় চাকরির প্রলোভন দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় একজন ভুক্তভোগী গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কদমতলী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তকালে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, তারা চক্রের হয়ে বেতনে কাজ করতেন। চক্রের প্রধানকে শনাক্ত করতে কাজ করছে পুলিশ জানিয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, ড্রিম জবস ইন কানাডা নামে প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। চক্রের একটি গ্রুপ প্রথমে ভিকটিমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে তার সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। ফেসবুকে বিদেশে চাকরির অফার দিয়ে আগ্রহীদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও ইমেইলে যোগাযোগ করে। চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে বিভিন্ন ফির বাহানায় ব্যাংকে টাকা জমা দিতে বলে। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দেয়।
ডিবি প্রধান বলেন, আবার ফেসবুকে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উপহার পাঠানোর কথা বলে কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে ফোন করে। দ্বিতীয় গ্রুপের কাজ হলো বিভিন্ন নামে ব্যাংক হিসাব খোলা। এসব হিসাবধারী কমিশনের বিনিময়ে নিজের বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খুলতে থাকে এবং ঘনঘন বাসা এবং মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে।
ডিবি কর্মকর্তা জানান, চক্রের তৃতীয় গ্রুপ এসব ব্যাংক হিসাবধারীর স্বাক্ষরিত চেকবইয়ের পাতা, এটিএম কার্ড এবং কার্ডপিন কুরিয়ারের মাধ্যমে সংগ্রহ করে। চতুর্থ গ্রুপ প্রতিদিন ভিকটিমদের জমাকৃত টাকা চেক বা কার্ডের মাধ্যমে উত্তোলন করে একজন ম্যানেজানের হাতে তুলে দেয়। ম্যানেজার এই টাকা তাদের কথিত বসের হাতে পৌঁছায়। এভাবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তার কবীরের কাজ যাবতীয় অর্থ সংগ্রহ করে ম্যানেজানের হাতে পৌঁছে দেওয়া। কবীরের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন গ্রেপ্তার ইয়াসিন। আর গ্রেপ্তার শামসুল কবীর হলেন ব্যাংক হিসাবধারী। তারা সবাই মাসিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেতনে বিভিন্ন স্তরে কাজ করেন এবং তাদের অন্য কোনো পেশা নেই বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ডিবি প্রধান বলেন, চক্রটিতে জড়িতরা একে অপরকে চেনেন না। ফোনে বা হোয়াটসঅ্যাপে তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়। অনেকটা কাটআউট পদ্ধতি ব্যবহার করে অপকর্ম চালাচ্ছে তারা। চক্রের মূলহোতা মূলত কমিউনিকেশন স্কিলকে ব্যবহার করছেন। এতে করে কাটআউট পদ্ধতিতে ভিকটিমরা যেমন প্রতারিত হচ্ছে তেমনি চক্রের অন্য সদস্যদের অপকর্মে জড়ানো সহজ হচ্ছে।
চক্রটির কথিত বসকে শনাক্ত করা গেছে কি-না জানতে চাইলে হাফিজ আক্তার বলেন, তাকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। আমরা প্রাথমিকভাবে চাইছি যাতে নতুন করে আর কেউ প্রতারিত না হন। আরও ভিকটিম থাকলে তাদের যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান তিনি।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, কারও প্রলোভনে পড়ে প্রতারিত হওয়ার আগে খোঁজ নিতে হবে। চাকরি কখনো এভাবে মেলে না, সেটা আগে বুঝুন। আর কুরিয়ার, পার্সেল, উপহার প্রতারণার বিষয়ে ডিবি পুলিশ অনেক অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব প্রতারণার ব্যাপারে সাবধান থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
এছাড়া ফেসবুকে অপরিচিত ব্যক্তির আইডি থেকে পাঠানো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট বা কোনও লিংক গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :