রাশিদ রিয়াজ : যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ‘প্রফিটস অব ওয়ার’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পেন্টাগন এ পর্যন্ত খরচ করেছে ১৪ ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু এ অর্থের এক-তৃতীয়াংশ কিংবা অর্ধেক অর্থই চলে গেছে সামরিক ঠিকাদারদের পকেটে। আফগানিস্তান যুদ্ধে বিশাল খরচের এক-চতুর্থাংশ থেকে এক-তৃতীয়াংশ-মাত্র পাঁচটি প্রধান কোম্পানির কাছে চলে গেছে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে লকহিড মার্টিন, বোয়িং, জেনারেল ডায়নামিক্স, রেথিয়ন এবং নর্থ্রপ গ্রুমম্যান। এসব মার্কিন কোম্পানিগুলো অস্ত্র তৈরিতে খ্যাত। গত বছর লকহিড মার্টিন পেন্টাগনের সঙ্গে যে ৭৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে তা একই বছর স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের মোট বাজেটের দেড়গুণেরও বেশি। ওই বাজেট ছিল ৪৪ বিলিয়ন ডলার। আরটি/কস্ট অব ওয়ার
মার্কিন অস্ত্র নির্মাতারা গত দুই দশকে লবিংয়ের জন্য আড়াই বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন, গত পাঁচ বছরে গড়ে ৭০০ জন লবিস্টকে নিযুক্ত করেছেন। কংগ্রেসের প্রতিটি সদস্যের জন্য একাধিক লবিস্টকে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা ঠিকাদাররা ২০০১ সাল থেকে প্রচারাভিযানে ২৮৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। এসব অর্থ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী থেকে শুরু করে কংগ্রেসের নেতৃত্ব এবং সশস্ত্র পরিষেবা এবং নিয়োগ কমিটির সদস্যদের বিশেষ মনোযোগ কাড়তে খরচ করা হয়। অসংখ্য কোম্পানি যুদ্ধকালীন অবস্থার সুযোগ নিয়েছে কারণ এধরনের যুদ্ধে অস্ত্র সরবরাহে কঠোর নজরদারির যেমন অভাব ছিল তেমনি মার্কিন সরকারের কাছ থেকে এসব খাতে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করতে অনেক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ সালে, ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধকালীন চুক্তি সংক্রান্ত কমিশন অনুমান করেছিল যে বর্জ্য, প্রতারণা এবং অপব্যবহার মোট ৩১ বিলিয়ন থেকে ৬০ বিলিয়ন ডলার বিনষ্ট হয়েছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক এবং আফগানিস্তানে তার সামরিক পদচিহ্নের আকার হ্রাস করেছে কিন্তু চীনের সামরিক চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করতে যেয়ে পেন্টাগনের যুদ্ধ বাজেট আরো বাড়বে এবং সামরিক ঠিকাদাররা এই স্ফীত ব্যয় থেকে মুনাফা অর্জন অব্যাহত রাখবে।
পেন্টাগনের এধরনের যুদ্ধ ব্যয় যে কোনো দেশের সামরিক বাজেটের চেয়ে বেশি। প্রতিটি মার্কিন সরকারের সঙ্গে যুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্র তৈরি কোম্পানির সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ট। যা মার্কিন রাজনীতিতে কোনো কাকতলীয় ঘটনা নয়। হলিবার্টন নামে একটি কোম্পানিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহের সুযোগ দেওয়া হয়। এ কোম্পানিটি বিদেশে মার্কিন সৈন্যদের সামরিক ঘাঁটি স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা, যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ, ক্যাটারিং এবং লন্ড্রি পরিষেবা সহ বিস্তৃত সহায়তা দিয়েছে। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে পেন্টাগনের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে কোম্পানিটি মৌলিক পণ্য ও পরিষেবার জন্য নাটকীয়ভাবে অনেক বেশি মূল্য আদায় করেও মার্কিন ঘাঁটিতে ত্রুটিপূর্ণ কাজ পরিচালনা করেছে যার ফলে সৈন্যদের ঝুঁকিতে পড়তে হয়। কিছু ক্ষেত্রে, হলিবার্টন ওয়াশিংটনকে সেসব পরিষেবার জন্য বিল করেছে যা আসলে কোম্পানিটি সরবরাহ করেনি আবার অন্য কোম্পানির চেয়ে ৩৬গুণ বেশি দাম আদায় করেছে। ২০০৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত, ইরাক জুড়ে হলিবার্টন-নির্মিত ঘাঁটিতে কমপক্ষে ১৮ সামরিক কর্মী ত্রুটিযুক্ত বৈদ্যুতিক ইনস্টলেশনের কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিল।
এছাড়া আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার নিয়োজিত ইকোনোমিক টাস্ক ফোর্স একটি গ্যাস স্টেশনে ৪৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করে যেটি আদতে ব্যবহার করা হয়নি। অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের জন্যে দেড়শ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বিলাসবহুল কোয়ার্টার তৈরি করা হয়। অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ কোম্পানির কর্মীরা বিলাসবহুলভাবে বসবাস করতেন, তাদের কমপ্লেক্সগুলি সুইমিং পুল, এয়ার কন্ডিশনার এবং ওয়্যারলেস ইন্টারনেটে পরিপূর্ণ ছিল অথচ মার্কিন সেনারা প্রায়ই তাঁবু এবং পরিত্যক্ত ভবনে অবস্থান করত। আফগান পুলিশের জন্যে ৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করে প্যাট্রল বোট সরবরাহ করা হয় যা কোনো সময় ব্যবহার করা হয়নি। মার্কিন কংগ্রেসের এক তদন্তে দেখা গেছে ২ বিলিয়ন ডলারের পরিবহন চুক্তির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যুদ্ধবাজ, পুলিশ কর্মকর্তা এমনকি তালেবানদের পকেটে চলে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :