আফসান চৌধুরী: পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়সী লোকটাকে আর্মি জেলে ভরে। পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলো কিন্তু কোনো অপারেশনে জড়িত ছিলেন না। জেলে তিনি অন্যদের বলতেন যে, মৃত্যর সময় হলে তিনি ‘আমার সোনার বাংলা’ গাইতে গাইতে চলে যাবেন । একদিন আসলেই তার মৃত্যুর অর্ডার হয়। অন্য দুজনসহ তাকে নিয়ে দাঁড় করায় গুলি করার জন্য। [২] কিন্তু ওই মৃত্যু মুহূর্তে তার গান আসেনি। হঠাৎ অন্য দুজন খেয়াল করে সেই বিহ্ববল মানুষটা প্রস্রাব করে কাপড় ভিজিয়ে ফেলেছে। পাকিস্তান আর্মির কী খেয়াল হয় তাদের সবাইকে জেলে ফেরত পাঠায় হাসা-হাসি করতে করতে। এর দুই মাসের মধ্যে দেশ স্বাধীন হয়।
[৩] অন্যদের কাছে এই খবরটা চলে যায় এবং সে অনেকের কাছে ঠাট্টার মানুষে পরিণত হয়। পার্টি তাকে ‘বিপ্লবী সাহসের ’ অভাবের জন্য সাসপেন্ড করে। সে লজ্জায় আন্ডারগ্রাউন্ড যায়। কিন্তু সেই অসহ্য গ্লানির কষ্ট তার থামেনি। প্রায় মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষটা একদিন আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। তার পরিবার ওই এলাকা ছেড়ে চলে আসে। আর কোনোদিন বলেনি তাদের বাবার কথা দু’একজন ছাড়া। বিনা অপরাধে একটা জীবন ধ্বংস হলো।
[৪] যখন আমি শুনেছিলাম তাদের বহু ঘটনার কথা বলি। জগন্নাথ হলে কালী রঞ্জন শীল, গুলি খাবার আগেই অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে বেঁচে যায়। এরকম হাজার ঘটনা আছে। নিজে দেখেছি, অতি বিপদে মাথায় কিছু চলে না। তাই সবাইকে বলি, কল্পনা প্রসূত বীরত্ব ভাবনা কারো ওপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক না। [৫] তিনি কোনোভাবেই কাপুরুষ ছিলেন না কারণ এরকম বহু ঘটনা ঘটেছে। তার পরিবারকে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছি, জানি না আজ তারা কোথায় কেমন আছে। হয়তো একটু শান্তিতে আছে যে ৫০ বছর আগেকার সেই ঘটনা সবাই ভুলে গেছে। তাদের বাবা এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারবে। লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক