দীপক চৌধুরী: অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে সকলকে দেশের জন্য কাজ করার কথা। কিন্তু দেশের বিরোধীদল বিএনপি রাজনীতির নামে যেভাবে পশ্চাৎপদ রাজনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ষড়যন্ত্রের নতুন পরিকল্পনায় নেমেছে এতে আর যাই হোক ভবিষ্যতে দলটি লোক খুঁজে পাবে বলে মনে হচ্ছে না। এতোকিছুর পরও পচাচিন্তা-ভাবনা নিয়েই যদি তারা রাজনীতি করে, দলটির যদি শিক্ষা না হয় তাহলে ভবিষ্যৎ কেবল অন্ধকারই হবে। সংবিধান অনুযায়ী তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া অবশেষে দুর্নীতির দায়ে জেল খাটবেন এটা কী দলটির সমর্থকদের কেউ ভেবেছিল? আসলে ইতিহাস সঠিক জবাব দিয়ে থাকে। সমাজে অন্যায়-অত্যাচার, নিপীড়ন ও হানাহানি টিকিয়ে রেখে আর যাই হোক মানুষের হৃদয় জয় করা সম্ভব নয়। বিএনপির রাজনীতির এমন ঘৃণ্য কৌশল কিন্তু এখন মানুষের কাছে ‘পাগলামি’। এ ছাড়া কিছুই দেখছে না মানুষ। কিন্তু ঠিক উল্টোটাই জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতিতে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন দেখতেন সে স্বপ্নই আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন এক এক করে। তাঁর অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ঘাতকেরা ভেবেছিল বাংলাদেশ পাকিস্তানের পথে ফিরে যাবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রথম হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র কয়েকদিন পর ২৮ আগস্ট ‘দি গার্ডিয়ান’ লিখেছিল ১৫ আগস্টের ঘটনার ভেতর দিয়ে যেন বাংলাদেশের জনগণ আইয়ুবের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় প্রচারণা এবং সামরিক শাসনের কালে প্রত্যাবর্তন করেছে। একটি বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে সামরিক শাসনের অনাচারি ইতিহাস রচিত হয়। আর ১৫ আগস্টের অন্যায় স্পর্ধাকে জাতি অস্ত্রের ভয়ে মেনে নিয়েছিল বলেই ১৫ বছর ধরে এ দেশে জেনারেল জিয়া ও এরশাদের সামরিক স্বৈরাচার অব্যাহত থাকে। ঘাতকদের ঘৃণ্য ও বর্বর রাজনীতি এদেশের অসংখ্য মানুষের জীবন কেড়ে নিয়ে যায়। পিতাকে হত্যার পর শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ১৯ বার ষড়যন্ত্র ও হামলা চলে। সৃষ্টিকর্তা তাঁকে প্রাণে বাঁচান। এরপর ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে জাতিকে উদ্ধার করেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর জীবনযাত্রায় কোথাও বিলাসিতা বা কৃত্রিমতার ছাপ নেই। এই মমতাময়ী জননেত্রী থেকে আজ অন্যতম বিশ্বনেত্রী। অসংখ্য গুণে গুণান্বিত বিশ্বমানবতার নেত্রী শেখ হাসিনা। কঠোর পরিশ্রম, সাহস, ধৈর্য, দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদর্শে গড়ে উঠেছে শেখ হাসিনার ব্যক্তিত্ব। সারল্যে ভরা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আধুনিক উদার, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি এখন শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু এটি একটি মাইলফলক। মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি দৃশ্যমান বাস্তবতা। উড়ন্ত সড়ক তো আছেই। সমালোচকরা সমালোচনা ও অপপ্রচার করবে। তাতে মানুষের কাছে নতুন ভাবে ওরা ঘৃণিত হবে।
কক্সবাজার বিমানবন্দর বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় রিফুয়েলিং হাব হিসেবে গড়ে উঠবে আশা প্রকাশ করে ২৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগের একটা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চায়। সমুদ্র তীরবর্তী জমি পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করে নতুন ১০ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে হবে-যার ফলে, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৪ এর মতো বড় আকারের বিমানগুলো এই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে। এখানে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার পথ সুগম হবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা সরাসরিই কক্সবাজারে আসতে পারবেন।
যুদ্ধাপরাধীর বিচার, নারকীয় বিডিআর হত্যাযজ্ঞের বিচার করতে সক্ষম হয়েছে তাঁর সরকার। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার হয়েছে। জনগণের সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে টার্গেট করার মূল কারণ, কোনো লোভ বা ভয় দেখিয়ে তাঁকে কোনোভাবেই দেশপ্রেম থেকে দমানো যায় না। পৃথিবীর ইতিহাসে যে কয়জন সৎ, মানবতাবাদী, গণতন্ত্রপ্রেমী, মহান রাষ্ট্রনায়ক বা সরকারপ্রধান জন্মগ্রহণ করেছেন তিনি তাঁদের অন্যতম। মানব কল্যাণের অগ্রদূত, বাঙালির সভ্যতা-সংস্কৃতিতে জাগ্রত তিনি। রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় অসাধারণ দক্ষ জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রকৃত অর্থেই দেশরত্ন। বিশ্বচিন্তাবিদদের তালিকায় তিনি। তরুণ-তরুণীদের ভরসার জায়গা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মেধা, শ্রম ও দক্ষতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চারিত্রিক দৃঢ়তার এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। তাঁর মতে, দুর্নীতিকে ঘৃণা করার মানসিকতা সবার মধ্যেই থাকা দরকার। মন্ত্রী-এমপি, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, লেখক-সাংবাদিক তথা শক্তিধর খুঁটির জোর যতই শক্তিশালী হোক না কেন, শাস্তি পেতেই হবে। অবশ্য শাস্তি পাচ্ছে, ধরা হচ্ছে, জেল খাটছে এমন প্রতাপশালীরাও আছে। ভয়ংকর প্রতাপের সঙ্গে যারা দিনকে রাত করতো তারা অনেকেই এখন জেলে। আগে জেলে দেওয়া হতো না, শাস্তি হতো না। আইনের শাসন বলতে কিছুই ছিল না। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়ার আমলে মাসলম্যান আর দুর্নীতিবাজদের প্রভাব ছিল সর্বত্র। এসবের অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যায়। তাদের হাতে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ হতো। রাজধানীর ফুটপাত থেকে ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দা পর্যন্ত যেমন এদের হাত ছিলো, তেমনই রাষ্ট্রের সকল গণমুখী কর্মকাণ্ডের সিদ্ধান্ত হতো তাদের ইচ্ছেয়। তাদের আমলে জনগণের ক্ষমতায়ন নিয়ে তামাশা চলে দীর্ঘদিন।
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক