শিরোনাম
◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ নির্বাচনের মাঝেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট, ২০২১, ০১:৪৫ রাত
আপডেট : ২৫ আগস্ট, ২০২১, ০১:৪৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মারুফ কামাল খান: জনসমর্থন ছাড়াই বিদেশি সৈন্যদের ছত্রছায়ায় আফগানিস্তানে যারা আরামে নিরাপদে সরকার চালাতে চেয়েছেন, তাদের পরাজয় ঘটেছে

মারুফ কামাল খান: আমার কি মনে হয় জানেন? বিশ্ব প্রেক্ষাপট বদলে গিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’ নাম দিয়ে দুনিয়াজোড়া যে সংঘাত চলছিল সুন্নী মুসলিমদের পলিটিক্যাল ইসলামকে টার্গেট করে, বিশ্ব এখন সেই যুদ্ধপর্ব অতিক্রম করেছে। ইউরোপ-আমেরিকা-ন্যাটো জোটের প্রধান প্রতিপক্ষ এখন চীন-রাশিয়া এবং ইরানপন্থী শিয়া মুসলিমেরা। সুন্নীদের এখন আবারো পশ্চিমা শক্তিযুথের মৈত্রীর কাঠামোতে আনার চেষ্টা চলছে।

এই পরিবর্তনশীলতাই আফগানিস্তানের আজকের পরিস্থিতির স্রষ্টা। এই পরিবর্তিত নীতির আলোকে আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসন দোহায় তালেব গোষ্ঠীর সাথে আলোচনায় বসে এবং দীর্ঘ আলোচনা শেষে শান্তিচুক্তি করে। অথচ আফগানিস্তানের গ্রাউন্ড রিয়্যালিটি এতোটা বাধ্যবাধক ছিল না যে, প্রবাসী এই মোল্লাদের সঙ্গে আমেরিকা চুক্তি করতে হবে।

সেই চুক্তির আলোকেই বাইডেন প্রশাসন ও ন্যাটো আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এটা কোনো যুদ্ধের জয়-পরাজয় নয়। এটা নীতি-কৌশল পরিবর্তনের ফল। তবে আফগানিস্তানকে যারা বিদেশি সেনামুক্ত পরিবেশে নিজেরাই পরিচালনা করার নীতিতে বিশ্বাসী তাদের একধরনের জয় হয়েছে।

জনসমর্থন ছাড়াই বিদেশি সৈন্যদের ছত্রছায়ায় আফগানিস্তানে যারা আরামে নিরাপদে সরকার চালাতে চেয়েছে তাদের পরাজয় ঘটেছে। বিদেশি সৈন্যরা চলে যাবার উদ্যোগ নেয়ার সাথে সাথেই তালেব যোদ্ধারা ঢুকেছে এবং বিনাবাধায় রাজধানীসহ প্রায় সবখানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়। এখন দোহা চুক্তির আলোকেই মোটামুটি সকল পক্ষকে নিয়ে একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের চেষ্টা চলছে।

তালেব গোষ্ঠী অতীতে ক্ষমতায় থাকতে যেসব কাজ্ঞানহীন আচরণ ও গোয়ার্তুমি করেছে এবার তাদের আচরণ তার থেকে অনেকটাই আলাদা। এতে কেউ কেউ বলছেন, এই তালিব সেই তালিব নয়। এরা অনেক বেশি শিক্ষিত, পরিশীলিত ও অভিজ্ঞ। কথা সত্য, সেই সাথে আরো সত্য হলো অতীতের ক্ষমতাকালে কোনো চুক্তির বাধ্যকতা তাদের ওপর ছিল না। এবার তাদের ওপর চুক্তির মাধ্যমে নানান বাধ্যবাধকতা আরোপিত হয়েছে।
আফগানিস্তানকে কায়েদা বাহিনী সহ ইউরো-মার্কিন-ন্যাটো বিরোধী সকল গুপ্তযোদ্ধা মুক্ত রাখার অঙ্গীকার তারা করেছে। নিজ দেশে আমেরিকা ও পশ্চিমী স্বার্থরক্ষার যুদ্ধটা তারাই করে দেবে বলে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। পড়শি দেশ পাকিস্তানও এই চুক্তির পরোক্ষ অংশীদার। সে যুদ্ধে শরিক থাকতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে তারাও। তালিবরা চুক্তিভঙ্গ করলে প্রত্যাহার করে নেওয়া বিদেশি সমরশক্তি আরো ভয়াবহ রূপ নিয়ে ফেরার একটা প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়ে রাখা হয়েছে।

তবে পাকিস্তান ও বর্তমান আফগানিস্তান যে চীন-রাশিয়ার সাথে দ্বদ্ব লিপ্ত হবেনা সেটা সবাই জানে। তবে একই সাথে তারা যেন এ অঞ্চলে পশ্চিমা স্বার্থের ওপর আঘাত করতে না থাকে, সেটা অর্জন করাটাই লক্ষ্য ছিল। এভাবেই সুন্নী মুসলিমদের সাথে বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধবিরতিতে গিয়ে পশ্চিমী দুনিয়া নতুন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অস্ত্র শানাতে শুরু করেছে। আফগানিস্তান ঘিরে ইন্ডিয়ার পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ আচমকা একটা বড় বাড়ি খাওয়ায় তারা পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কোমর বেধে নেমে পড়েছিল। তবে পশ্চিমাদের চেষ্টা রয়েছে দু’পক্ষের কেউ যেন পরস্প রের প্রতি খড়গহস্ত না হয়।

আরেকটা বাস্তবতাও মাথায় রাখা দরকার। এখন আগের সেই আফগানিস্তানও কিন্তু নেই। কুড়ি বছরে আফগানিস্তানে শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। দুর্গম অঞ্চলবাসী পরস্পর বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন ট্রাইব্যাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখন অনেকের সামনেই আলোকিত বিশ্বের দুয়ার খুলেছে। নাগরিক অধিকার, মুক্তি, গণতন্ত্র, নারী স্বাধীনতার মতন অনেক বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে নতুন প্রজন্ম। তাদের চিন্তা, রুচি ও জীবন যাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে। আফগানদের নিয়ে তালিব গোষ্ঠীর বিরোধী শক্ত দেশজ সমরশক্তি গড়তে না পারলেও ন্যাটো বাহিনীর কুড়ি বিছরের উপস্থিতি দেশটিতে যে কিছুটা হলেও সামাজিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। নতুন শাসকদের এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ নিজেদের খাওয়াতে হবে। তবে আফগান সমাজ তার ঐতিহ্য ও নিজস্বতা বিসর্জন দিয়ে অন্য দেশের মতন হয়ে যাবে, এটাও হবে ভুল প্রত্যাশা। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়