মোজাফ্ফর হোসেন: নিজের ও পরিবারের জীবন বাঁচাতে একজন নারীকে থাকতে হয় পুরুষের বেশে, গালগল্প মনে হচ্ছে? বলছি নাদিয়া গুলাম দাস্তগিরের কথা। আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থানের সময় তাকে ধারণ করতে হয় পুরুষবেশ। দীর্ঘ ১০ বছর ছিলেন সেই বেশে। ২০১০ সালে নিজ দেশ থেকে পালিয়ে নারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। নাদিয়ার জন্ম ১৯৮৫ সালে কাবুলে। সে সময় আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ চলছিলো। বোরকা ও হিজাব ব্যতীত এবং পুরুষসঙ্গী ছাড়া নারীরা ঘর থেকে বের হতে পারতেন না। কাজ করতে পারতেন না বাড়ির বাইরে। ১৯৯৩ সালে তালেবানের বোমা এসে পড়ে নাদিয়াদের বাড়িতে। মারা যায় ভাই। পরিবারের বাকি সবাই গুরুতর আহত হয়। হাসপাতালে দীর্ঘ দুই বছর চিকিৎসা নিতে হয় নাদিয়াকে। ১৯৯৬ সালে কাবুল পুরোপুরি তালেবানদের দখলে চলে যায়। অনাহারের হাত থেকে পরিবারকে এবং তালেবানের অত্যাচার থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য পুরুষের বেশে মৃত ভাইয়ের পরিচয়ে সামনে আসেন নাদিয়া। কাবুলের একটি মসজিদে কর্মচারীর কাজ শুরু করেন তিনি। তার উপার্জনে চলে সংসার। কিন্তু কতোদিন?
নারীসত্তা তো চিরকাল লুকিয়ে রাখার বিষয় না। এরপর ২০০৬ সালে আফগানিস্তানের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে কাবুল থেকে পালাতে বাধ্য হন তিনি। চলে আসেন স্পেনে। সেখানে বেশকিছু দিন তার চিকিৎসা নেওয়ার পর একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন ও সেখানেই থাকতে শুরু করেন। স্পেন থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। ২০১৬ সালে ‘ব্রিজেস অব পিস’নামে একটি বেসরকারি সংস্থা গড়ে তোলেন। শরণার্থী শিবিরের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার সুযোগ করেছেন তিনি। লিখেছেন একাধিক বই নিজের জীবন নিয়ে। তালেবান শাসনামলে নাদিয়ার মতো আরও অনেক মেয়ের ছেলে হয়ে সংসার বাঁচানোর করুন কাহিনি আপনারা দেখতে পাবেন ঞযব ইৎবধফরিহহবৎ সিনেমাটিতেও। লেখক: কথাসাহিত্যিক
আপনার মতামত লিখুন :