রাশিদ রিয়াজ : ২০১৭ সালে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ২০৩ মিলিয়ন মানুষ বা ৫.২ শতাংশ জনগোষ্ঠী চরম দারিদ্র সীমায় বাস করছিল। কোভিডের আগে এ হার নেমে যায় ২.৬ শতাংশে। কিন্তু কোভিড মহামারি শুরু হবার পর পরিস্থিতি ফের ঘুরে দাঁড়ায়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বলছে কমপক্ষে ৮ কোটি মানুষ ফের নতুন করে চরম দারিদ্র সীমায় নেমে গেছে। তাস
এডিবির বিবৃতিতে বলা হচ্ছে চরম দারিদ্র সীমায় নেমে যাওয়া এসব মানুষ দিনে ১.৯ ডলারের কম অর্থে জীবন ধারণ করতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ এশিয়ায় কোভিড মহামারির আগে দারিদ্র্যের হার কমেছিল। বেড়েছিল ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতা। ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতা মোকাবেলায় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য বা এমডিজির অগ্রগতি নিয়ে ১৪০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা রোডম্যাপ তৈরি করেছিলেন। এধরনের রোডম্যাপ অনুসরণ করে এশিয়ার অনেক মানুষ একেবারে চরম দরিদ্র অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছিল। কিন্তু কোভিডে তা ভেস্তে গেছে। পুষ্টিহীনতা রোধে এশিয়ার অবস্থা সন্তোষজনক ছিল না আর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা শুরু করাই সম্ভব হয়নি। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে ১৯৯০ সালে এশিয়ার ১.৫ বিলিয়ন মানুষের প্রত্যেকের প্রতিদিনের গড় আয় ছিল ১.২৫ ডলারের নিচে। ২০০৫ সাল নাগাদ এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় প্রায় ৯৫ কোটিতে। এমডিজি বাস্তবায়নে এই সাফল্য উল্লেখযোগ্য হলেও এখনো বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ দরিদ্র আর ক্ষুধার্ত মানুষের বাস এশিয়াতে। প্রতি ছয়জনে একজন অপুষ্টির শিকার ছিল কোভিড মহামারির আগেই। শিশুমৃত্যুর হারও বেশি আর গর্ভকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও এশিয়ার দেশগুলো বিশেষভাবে লড়ছিল।
এধরনের লড়াইয়ের মাঝে আঘাত হানে কোভিড মহামারি। আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধি ছিল ওই লড়াইয়ের এক অন্যতম অস্ত্র। কিন্তু কোভিডের কারণে এধরনের বাণিজ্য বরং হ্রাস পেয়েছে। লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অগ্রযাত্রা অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে বিশ^ব্যাংক বলছে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগামী বছর ঘুরে দাঁড়াবে। মহামারির কারণে এ বছর যে বিশাল জনগোষ্ঠী অতি দরিদ্র হয়ে পড়বে, আগামী বছরও সে সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকবে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক। গত ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় মন্দায় পড়েছে বিশ্ব। তারপরও সংস্থাটি বলছে, আগামী বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশ হতে পারে। তবে যেসব দেশগুলোয় দরিদ্র জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি, তাদের প্রবৃদ্ধি জনসংখ্যার অনুপাতে অতটা বাড়বে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে ২০২০ সালে যারা চরম দরিদ্র হয়ে পড়ছেন, ২০২১ সাল পর্যন্ত তাদের অবস্থার পরিবর্তন হবে না।
বিশ্বের মোট দরিদ্রের এক-তৃতীয়াংশের বেশি বাস করে নাইজেরিয়া, ভারত ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে। এই দেশগুলোর মাথাপিছু মোট জাতীয় উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হবে যথাক্রমে মাইনাস শূন্য দশমিক ৮, ২ দশমিক ১ এবং শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। অন্যদিকে, এই দেশগুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ২ দশমিক ৬ শতাংশ, ১ শতাংশ ও ৩ দশমিক ১ শতাংশ। দরিদ্রের সংখ্যা কমানোর ক্ষেত্রে এটি যথেষ্ট নয়।
আপনার মতামত লিখুন :