নির্মলেন্দু গুণ: আমি ঘুমের দিকে এগিয়ে গেলাম ঘুম করবো বলে। ভেবেছিলাম, সন্তান হাগু করলে সদ্যজাত শিশুর মা যেমন খুশি হয়, ঘুম করলে ঘুমও তেমনি খুশি হবে। কিন্তু না। ঘুম বললো, -‘যা যা, তোরে আমি হাড়ে-হাড়ে চিনি, মিথ্যে বলিস না। আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতে চাস, সেই কথাটা বল। তুই ঘুমের মানুষ নাকি?’ আমি বললাম, ‘এবার দ্যাখো, এবার আমি সত্যি ঘুমাবো। তোমাকে আর দেবো না ফাঁকি।’ ঘুম বললো, ‘পাঁজি ছেলে, ঘুমের আবার সত্যমিথ্যা কীরে?’ আমি বললাম, ‘আছে, আছে, ঘুমেরও সত্য-মিথ্যা আছে।’ ঘুম বললো, ‘কেমন সেটা শুনি।’ আমি বললাম, ‘শোন তবে- (যদিও জানি তোমার কষ্ট হবে) তবু বলি, মিথ্যা এবং সত্য ঘুমের পার্থক্যটা কী।
‘যে-ঘুমগুলো ভেঙে যায় সামান্য নাড়ায়Ñসেই ঘুমগুলো হলো মিথ্যাঘুম। ‘আর সত্যঘুম?’ ‘সত্যঘুম? তোমার কোলে মুখ লুকিয়ে যখন আমি হারিয়ে যাবো সাত আকাশের তারাগুলোর ভিড়ে; যখন আমার দেহ পরিণত হবে মাংস-মজ্জা, হাড়ের পাথরে, ওটাই হবে আমার সত্যঘুম।’
আমার কথা শুনে আমার ঘুম-মা বললো, ‘না, নাÑ একথা বলিস না, বাছা। তোকে আমি বুকের মাঝে খুব-লুকিয়ে রাখবো। আমি তোকে সত্যঘুম ঘুমাতে দেবো না। ওঠ, আমার মিথ্যাঘুমই ভালো।’ কামরাঙ্গীরচর, ৯ আগস্ট ২০২১। ফেসবুক থেকে