মো. সামসুল ইসলাম: একটি ক্ষয়িষ্ণু, ভোগবাদী, ধনতান্ত্রিক সমাজে প্রচুর এন্টারটেইনার দরকার। অর্থ, ভোগলিপ্সা আর তথাকথিত উন্নয়ন যে সমাজে যত বাড়বে সে সমাজে পরীমনিদের প্রয়োজনীয়তা ততো বাড়বে। দ্রুত বর্ধনশীল ধনিক শ্রেণিতো শুধু কানাডার বেগমপাড়াতে বাড়ি কিনে ক্ষান্ত নয়, তাদের মনোরঞ্জনের জন্য ব্যাংককে, দুবাইতে, ঢাকাতেও ব্যবস্থা থাকতে হবে ।
এভাবেই আমাদের দেশে পরীমনিদের সৃষ্টি হয়। ধনাঢ্য আর সুগার ড্যাডিদের ভোগলিপ্সার বলি হয় এদেশের মেয়েরা। এই মেয়েদের তাদের দেয়া ফ্ল্যাটে থাকতে হয়, তাদের দেয়া গাড়ী চড়তে হয়, তাদের সাথে গানের অনুষ্ঠানে অসুস্থ নাচ নাচতে হয়, তাদের সাথে দেশে বিদেশে ঘুরতে যেতে হয়। ব্যবহার শেষে এই মেয়েদের ছুড়ে ফেলা হয়। কাউকে মারা যেতে হয়, কাউকে বা আবার যেতে হয় জেলে। নিদেনপক্ষে মূলধারার আর সোশ্যাল মিডিয়ায় শুনতে হয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিকৃত সব গালিগালাজ!
ভোগবাদী সমাজের এটাই বোধহয় বৈশিষ্ট্য। সুন্দরী প্রতিযোগিতা, মডেল ইত্যাদি নামে পুরোদেশ থেকে তন্নতন্ন করে খুঁজে, বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে শিল্প, সংস্কৃতির নামে মেয়েদের ধনাঢ্যদের হাতে তুলে দেয়া হয় তাদের মনোরঞ্জনের জন্য। পরে তাদের কি হয় কেউ জানে না। গত কয়েক বছরে এধরণের অনেক মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ পত্রিকায় দেখেছি। অনেকের আত্মহত্যার খবরও দেখেছি। অভিশপ্ত এই নগরীতে দেখেছি এরকম কত মেয়ের আর্তনাদ!
এটাযে শুধুমাত্র মেয়েদের ক্ষেত্রে হচ্ছে তা নয়। ছেলেদের ক্ষেত্রেও এরকম ঘটছে। রাস্তা থেকে উঠিয়ে এনে হঠাৎ করেই কাউকে বিশাল শিল্পী বলে মিডিয়াতে দেখানো হচ্ছে, তার হাতে লাখ লাখ টাকা দিয়ে তার প্রত্যাশার পারদ তুলে দেয়া হচ্ছে। কয়েকদিন পর সবকিছু হারিয়ে হয় সে হচ্ছে ড্রাগাসক্ত অথবা অসুস্থ, নিঃস্ব। নোলক, আকবর এইরকম কিছু নাম আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে। বিধাতা, এই অভিশপ্ত নগরীর বিকৃত আনন্দপিয়াসু, ভোগী সেইসাথে নির্মম লোকদের থেকে আমাদের দেশের সহজসরল মানুষদের রক্ষা করুন।