শিরোনাম
◈ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভক্তি প্রকট ◈ দুই দানব ব্ল্যাক হোলের খোঁজ পেল বিজ্ঞানীরা, কী ঘটছে মহাবিশ্বে? (ভিডিও) ◈ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২য় উচ্চতর গ্রেডে আইনি ছাড় ◈ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সুবিধা চালু করেছে মালয়েশিয়া ◈ শান্তির হ্যাটট্রিক, ভুটানকে সহ‌জেই হারা‌লো বাংলাদেশের মে‌য়েরা ◈ মেট্রো স্টেশনে বসছে এটিএম ও সিআরএম বুথ ◈ ১৬ই জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ◈ রহস্যময় নাকামোতো এখন বিশ্বের ১২তম ধনী, বিটকয়েন সম্পদ ১২৮ বিলিয়ন ডলার ◈ শাহবাগ মোড় অবরোধ করলো স্বেচ্ছাসেবক দল ◈ বিএসবির খায়রুল বাশারকে আদালত প্রাঙ্গণে ডিম নিক্ষেপ, কিল-ঘুষি

প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট, ২০২১, ১১:৪৮ দুপুর
আপডেট : ০৮ আগস্ট, ২০২১, ১১:৪৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: রেণুর ভালোবাসা, সমর্থন ও সহযোগিতা না পেলে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণ করা কঠিন হতো

১৯৩০ সালের সালের ৮ আগস্ট টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবারে সদস্য শেখ জহুরুল হক এবং স্ত্রী হোসনে আরা বেগমের পরিবারে যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করেন তার নাম আদর করে রাখা হয় রেণু। রেণুর পুরো নাম ফজিলাতুন নেছা। পরিবারের তিনি তৃতীয় সন্তান, দুর্ভাগ্য এই সন্তানটি পিতাকে হারান ৩ বছর বয়সে এবং মাতাকে হারান ৫ বছর বয়সে। এই সন্তানটি লালন-পালনের দায়িত্ব নেন দাদা, চাচা লুৎফর রহমান এবং চাচী সাহেরা খাতুন। পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৩৮ সালে লুৎফর ও সাহেরার ছেলে শেখ মুজিবের সঙ্গে তার বিয়ে হয়, তবে শেখ মুজিব পড়াশোনার জন্য প্রথমে গোপালগঞ্জ এবং পরে কলকাতায় চলে যান, শেখানে তিনি উচ্চ শিক্ষা এবং রাজনীতির সঙ্গে গভীর ভাবে জড়িয়ে পরেন।
ততোদিনে রেণু স্বামী শেখ মুজিবের পড়াশোনা এবং রাজনীতিতে সহযোগিতা প্রদান করতে থাকেন, তাদের পারিবারিক জীবন নতুনভাবে শুরু হয় ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়। মুজিব ঢাকায় ফিরে আসেন রাজনীতিতে গভীরভাবে জড়িয়ে পরেন কিন্তু ফজিলাতুন নেছা রেণু স্বামীকে রাজনীতিতে কোনো ধরনের বাধা দেননি। শশুর লুৎফর রহমান ও শাশুরী সাহেরা খাতুন এবং ফজিলাতুন নেছা রেণু শেখ মুজিবের রাজনীতিতে কারাবাসসহ সকল ত্যাগকে সহজে বরণ করে নেন, তার পাশে দাঁড়ান। টুঙ্গিপাড়া থেকে উভয় পরিবারের আর্থিক উপার্জনের একটি অংশ শেখ মুজিবের ঢাকায় রাজনীতি এবং কারাভোগের সময় ব্যয় করা হয়। ইতোমধ্যে এই পরিবারের শেখ হাসিনা, শেখ কামালসহ অন্য সদস্যদের জন্ম হয়, তাদের দায়দায়িত্ব ফজিলাতুন্নেছা রেণু যথা নিয়মে বহন করতে থাকেন। ১৯৫৩ সালের শেষ দিকে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সন্তানদের নিয়ে ঢাকার গ্যান্ডারিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। মূলত সন্তানদের লেখাপড়া এবং স্বামীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে কিছুটা সহজ করার জন্য তারই ঢাকায় চলে আসা। ঢাকার এই জীবন খুব সহজ ছিলো না ব্যয় ভার অনেকটাই নির্বাহ করতে হতো টুঙ্গিপাড়ার সম্পদের আয়-উপার্জন ওপর। ১৯৬১ সালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি নির্মিত হলে মুজিব ফজিলাতুন নেছা পরিবার এখানেই স্থায়ী হন। শেখ মুজিব তখন কখনো কারাগারে, কখনো দেশব্যাপী আন্দোলনে স্বকীয় ভূমিকা পালন করছিলেন।
১৯৬৬ সালে ৬ দফা প্রদানের পর রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে পাকিস্তান সরকারের দমন পিড়ন বেড়ে যায়, শেখ মুজিব নিক্ষিপ্ত হন কারাগারে। এই সময় একদিকে পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া দেখ ভালো, অন্যদিকে স্বামীর মামলার খরচ জোগানো এবং রাজনৈতিক আন্দোলনকে অব্যহত রাখার জন্য নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশাবলি, করণীয় পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের সহযোগিতা প্রদানে বিষয়টিও নেপথ্যে থেকে বেগম মুজিবকে পালন করতে হয়েছিলো। নেত্রীবৃন্দের অনেকেই গোপনে ৩২ নম্বারে রাজনৈতিক খোঁজখবর নেওয়ার জন্য আসতেন ছাত্র নেতাদের সঙ্গে আন্দোলন সংগ্রামের বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পৌছে দিতেন। এ সময়ে বেগম মুজিব স্বামী শেখ মুজিবর রহমানকে কারাগারে বসে রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাবলি লেখার জন্য কাগজ-কলম নিয়ে কারাগারে প্রদান করেন। শেখ মুজিব কারাগারের অন্তরালে থেকে যে তিনটি পান্ডুলিপি রচনা করেছিলেন সেগুলো বেগম মুজিব যত্নের সঙ্গে ৩২ নম্বরের বাসায় সংরক্ষণ করেছিলেন। কেউ এই পান্ডুলিপির কথা খুব একটা জানতো না ১৯৭১ এবং ১৯৭৫ সালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির ওপর অনেক দুর্যোগ নেমে আসে, ১৯৭৫ এর পর র্দীঘদিনে এই বাড়িটি তালাবন্ধ ছিলো। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এই পান্ডুলিপিগুলো উদ্ধার করেছিলেন। সম্প্রতি ‘আসমাপ্ত আত্মজীবনী’ আমার দেখা নয়া চীন এবং কারাগারে রোজনামচা শিরোনামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের লেখা তিনটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের পাকিস্তান পর্বকালের ঘটনাবলী এই তিনটি গ্রন্থে নানা তথ্যে উপাত্তে গবেষকদের সমৃদ্ধ করবে। গ্রন্থতিনটি বঙ্গবন্ধুকে লিখিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাটি উপলব্দি করেছিলেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। এখানেই তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে থাকার বড় কাজটি করে গেছেন।
আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে বেগম মুজিবের ছিলো অসাধারণ ভূমিকা। মামলা লড়াইয়ের অর্থ সংগ্রহ, আইনজীবী নিয়োগ, পরিবারের স্বাভাবিক জীবন বজায় রাখার ধৈর্য্য ধারণ করা এবং রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার কাজটি তিনি নিরবেই করে গেছেন। শেখ মুজিবের মুক্তির আন্দোলন শেষ পর্যন্ত গণঅর্ভ্যুত্থানে রূপ নেয়, সরকার মুজিবকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে আলোচনায় বসতে চাইলে বেগম মুজিব তা নাকচ করে দেন। স্বামী মুজিবও এই অবস্থানে দৃঢ় ছিলেন অবশেষে ২২ ফেব্রুয়ারি আগড়তলা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়, মুজিবকে ওই দিন মুক্তি দেওয়া হয়। পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি মুজিব ভূষিত হন বঙ্গবন্ধু উপাধিতে, সূচিত হয় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিজয়রে নতুন অধ্যায়। এরপরের অধ্যায় স্বাধীনতার সংগ্রাম। তখনও তিনি ছিলেন তার নিরব সহযোগী, যুদ্ধ শুরু হলে বেগম মুজিবকে পাকিস্তানি জান্তারা ধানমন্ডির একটি বাসায় সন্তানদের সঙ্গে বন্দি করে রাখে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভের পর তিনি ফিরে আসেন ৩২ নম্বর বাসায়। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসার পর ফজিলাতুন নেছা মুজিব মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের পাশে সহযোগিতার হাত নিয়ে দাঁড়ান। রাষ্ট্রের কোনো কাজে তিনি কখনো হস্তক্ষেপ করেননি, স্বামীর রাজনীতির সাফল্যের পেছনে তার ছিলো অকুণ্ঠ সর্মথন, সহযোগিতা এবং স্বামীর পরিবার ও সন্তানদের মানুষ করে গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন। বঙ্গবন্ধু স্ত্রীর এই ভালোবাসা, সহযোগিতা, দায়িত্ববোধ গভীরভাবে স্মরণ করেন তার লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে এবং সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায়। প্রকৃত অর্থে বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে বেগম ফজিলাতুন নেছার মুজিবের আগাগোড়া সমর্থন, সহযোগিতা, ভালোবাসা এবং সকল দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার কাজটি যদি তিনি না করতেন, তাহলে হয়তো বঙ্গবন্ধুর অনেক স্বপ্নই বাস্তবে রূপ দেওয়া কঠিন হতো অথবা অসম্ভব হয়ে পড়তো। সে কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস রচনায় বঙ্গবন্ধুর পাশে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নাম স্বাভাবিক নিয়মে লিখিত হয়ে আছে। পরিচিতি : শিক্ষাবিদ। অনুলিখন : আব্দুল্লাহ মামুন

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়