সিফাত বিনতে ওয়াহিদ: ছ্যাঁচড়ামি আর ফ্লার্ট তো এক জিনিস না। আপনি করতেছেন ছ্যাঁচড়ামি, আর চাইতেছেন একজন নারী আপনার এই ছ্যাঁচড়ামি দেখে খুশিতে নাচতে নাচতে প্রেম করবে অর হোয়াটএভার ইউ ওয়ান্ট। অদ্ভুত না। আব্বা-আম্মাদেরও সমস্যা আছে। ছেলেটারে দশ বছর পড়াবেন বয়েজ স্কুলে। তার পর আবার দেবেন বয়েজ কলেজে। কোনো মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখলে গালাগালি করবেন। পারলে মারবেনও। তো সে হুট করে নারী দেখলে তো নারীর সঙ্গে কী আচরণ করতে হয়, সেটাই বুঝবে না।
ভার্সিটি জীবনে গিয়ে এই ছেলেগুলো পাজেলড হয়ে যায়। নারীর সঙ্গে পুরুষের এবং পুরুষের সঙ্গে নারীর আলাপচারিতা, মেলামেশা যে খুবই সহজাত একটা প্রক্রিয়া, সেটাকে নানা রকম ফালতু ফালতু দোহাই দেখিয়ে এই ডগম্যাটিক সোসাইটি একটা ট্যাবু বানিয়ে রাখছে এখনো। ভাবা যায়! ‘শেয়ালের কাছে মুরগি রাখতে হয় না’ কিংবা ‘আগুনের কাছে মোম রাখলে তো গলবে’ টাইপ প্রবাদ এখনো কোনো না কোনোভাবে শিক্ষিত মানুষগুলোও ইনিয়ে বিনিয়ে বলেন। তো তাতে ক্ষতিটা তো নিজের ঘরেরই করতেছেন আসলে।
বাংলা সিনেমাতে খুব ভুল একটা ডায়লগ দেখে আসছি সারা জীবন! ‘তোর ঘরে কি মা-বোন নাই?’ আরে আশ্চর্য! মা-বোন থাকবে না কেন? মা-বোনকে তো সে মা-বোন হিসেবেই দেখে আসছে। তাদের সঙ্গে যে আচরণে সে অভ্যস্ত, তা তো সে অন্য নারীর সঙ্গে করবে না। তাকে তো আপনি সেই আচরণ শেখাননি। সে তো জানেই না কী রকম আচরণ করতে হয়। কিন্তু যেহেতু সে পুরুষ, তাই প্রাকৃতিকভাবে নারী শরীরের প্রতি কামনা তৈরি হওয়াও অস্বাভাবিক না তো। এই কামনা তৈরি হওয়ার জন্য আপনি তাকে অপরাধী বানাতে পারেন না। বরং পারলে শৈশব থেকেই পুত্র এবং কন্যা শিশুদের সহজ হতে দেওয়া উচিত। আপনি যতো তাদের আটকে রাখবেন, তারা বড় হতে হতে ততো অবদমনের শিকার হবে। হিংস্র আচরণ করবে। সেটা বরং আরও বেশি লজ্জাজনক।
আমি একজন পুত্র সন্তানের মা। নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্কগুলো তার কাছে আমি সহজ রাখছি। সাড়ে সাত বছর বয়সে সে জানতে পেরেছে, নারীদের প্রতিমাসে ঋতুস্রাব বলে একটি চক্রের ভেতর দিয়ে যেতে হয়, যার মাধ্যমে পৃথিবীতে মানুষের জন্ম হয়। প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট সময়ে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘মা, ব্লিডিং কি খুব বেশি হচ্ছে? ব্যথা করছে? কষ্ট হচ্ছে তোমার খুব?’ এটা কি খুব লজ্জাজনক ঘটনা? আমার কাছে তো গর্বের মনে হয়। এই ছেলে তার প্রেমিকা অথবা পার্টনারের প্রতিও এই একই মমতা দেখাবে বলে আমার বিশ্বাস। এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলো ঘর থেকে, শৈশবেই কি শেখানো যায় না চাইলে? ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :