শিরোনাম
◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা ◈ চী‌নে জু‌নিয়র হ‌কি‌তে একদিনে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী দ‌লের জয় ◈ কত টাকার বিনিময়ে মানববন্ধনে এসেছেন তারা, এদের পরিচয় কী? আরো যা জানাগেল (ভিডিও) ◈ ঠাকুরগাঁও সীমান্তে আবারো বিএসএফের ‘পুশ ইন’, ৬ বাংলাদেশিকে আটক করেছে বিজিবি ◈ বি‌সি‌বি ও বি‌সি‌সিআই সর্বসম্ম‌তিক্রমে সি‌রিজ স্থ‌গিত কর‌লো, আগ‌স্টে আস‌ছে না ভারত

প্রকাশিত : ২০ জুলাই, ২০২১, ০৫:২৯ সকাল
আপডেট : ২০ জুলাই, ২০২১, ০৫:২৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জরুরী কাজ বাদ দিয়ে মূল্যবান সময় ব্যয় হচ্ছে স্মার্টফোনে

ডেস্ক রিপোর্ট : স্মার্টফোন আধুনিক জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার করছে। স্মার্টফোনে অত্যধিক নির্ভরশীলতা মানুষকে টেনে নিচ্ছে আসক্তির দিকে। খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে জরুরী কাজ শিকেয় তুলে স্মার্টফোনের পর্দায় থাকছে দৃষ্টি। গড়ে প্রতিদিন ৫ ঘণ্টার বেশি সময় স্মার্টফোনে ব্যয় করেন এমন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবহারকারীরা দৈনিক গড়ে ৪৭ বার তাদের স্মার্টফোন চেক করেন, বছরে তা সংখ্যায় দাঁড়ায় ১৭ হাজার ১৫৫ বার। দৈনিক টাচ বা ক্লিকের সংখ্যা প্রায় ২৭০০ বার। স্মার্টফোনের এই আসক্তিতে অনেকেই প্রেমঘটিত টানাপড়েন, আর্থিক সঙ্কট, বিষণ্ণতা ও একাকিত্বসহ ছোট ছোট সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য মোবাইল গেইম বেছে নিচ্ছেন। অনেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়ে তুচ্ছ ঘটনায়ও আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাবোধ করছেন না। এই আসক্তি থেকে বের হতে চাইলে অধিক স্বাস্থ্যসম্মত কাজ বেছে নিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে বই পড়া, শরীরচর্চা কিংবা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে মনোনিবেশ করার পরামর্শ তাদের। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে শিক্ষার্থীদের এ ধরনের আসক্তি কিছুটা হলেও কমে যাবে। ক্লাসের কাজের চাপ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিনের অনেক সময় কাটাতে হবে। আবার বাসায় স্কুলের ক্লাসের পড়া তথা হোমওয়ার্ক করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীদের মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকার প্রবণতা কমে যাবে।

গত এক দশকে স্মার্টফোনের ওপর অনেক গবেষণা হয়েছে। গবেষকরা মুঠোফোন অপব্যবহারে এ জাতীয় অসুখের নাম দিয়েছেন ‘নেমোফোবিয়া’। যার পুরো নাম নো মোবাইল ফোন ফোবিয়া। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ৫৩ শতাংশ এবং ২৯ শতাংশ ভারতীয় তরুণ এ রোগের শিকার। এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা দৈনিক গড়ে ৪৭ বার তাদের স্মার্টফোন চেক করেন, বছরে তা সংখ্যায় দাঁড়ায় ১৭ হাজার ১৫৫ বার। দৈনিক টাচ বা ক্লিকের সংখ্যা প্রায় ২৭০০ বার। ৮৫ শতাংশ ব্যবহারকারী পরিবার, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডার সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। ৮০ শতাংশ ব্যবহারকারীরা বিছানায় ঘুমাতে যাবার মুহূর্তে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। ১৮-২৯ বছর বয়সী একজন ব্যবহারকারী গড়ে দৈনিক ৩ ঘণ্টা স্মার্টফোনের পেছনে ব্যয় করেন। প্রাপ্ত বয়স্ক একজন নাগরিক গড়ে প্রতিদিন ৫ ঘণ্টার বেশি সময় স্মার্টফোনে ব্যয় করেন। স্মার্টফোনে এমন আসক্তি যেমন আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করছে, তেমনি সৃষ্টি করছে নানা মানসিক ও দৈহিক যোগ। গবেষকরা দেখিয়েছেন, স্মার্টফোনে আসক্তির ফলে মানুষের আবেগ কমে যায়, রাগ ও হতাশা বৃদ্ধি পায়, অনিদ্রার সৃষ্টি হয়। যুক্তরাজ্যে পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছে, মা-বাবার অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার পারিবারিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়। শিশুদের ক্ষেত্রে এই আসক্তির প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা ‘ট্যাবলেট ফর স্কুল’ জানিয়েছে স্মার্ট ডিভাইস আসক্তিতে ঘুম কমছে শিশুদের। ইউনিসেফের একটি সমীক্ষা বলছে, বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন শিশু। প্রতিদিন সংখ্যাটা প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার, যার অর্থ প্রতি হাফ সেকেন্ডে একজন শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। শুধু তাই নয়, সমীক্ষা বলছে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২৫ শতাংশেরই বয়স ১০-এর নিচে। স্মার্টফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশন মস্তিষ্ক, কানসহ নানা অঙ্গের ক্ষতি করে। একটি বাচ্চার স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার সময়ে তা আরও ক্ষতিকর। মস্তিষ্ক ও কানে নন-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হওয়ার ভয়ও উড়িয়ে দেয়া যায় না। যত বেশি সময় শিশু টিভি, স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের সঙ্গে কাটাবে, ততই তার মানসিক, শারীরিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিশুর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য খেলার মাঠই উপযুক্ত। ২ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের যত বেশি করে শারীরিক ক্রিয়াকলাপে, দোড়ঝাঁপ, খেলাধুলোয় নিযুক্ত করা যায়, ততই ভাল। যে বয়স শিশুকে মানসিকভাবে সুস্থ, সুন্দর ও বড় করে তুলতে সাহায্য করে, সেই সময়েই থাবা বসায় স্মার্টফোন। সারাক্ষণ ফোনে ডুবে থাকার ফলে অপেক্ষা করার অভ্যেস হ্রাস পায়। ফোনের প্রতি আসক্ত বাচ্চাটিকে ফোন না দিলে তার বিরক্তির ভাব দেখা দেয়। কথোপকথনেও অল্পেই ধৈর্য হারিয়ে বিরক্ত হয়ে পড়ে তারা। খারাপ ব্যবহারও অস্বাভাবিক নয়। এমনকি সারাদিন অতিরিক্ত ফোন, ট্যাবের ব্যবহার বাচ্চার স্বাভাবিক ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটায়। ফোনে আটকে থাকা শিশুর সৌজন্যবোধ হারিয়ে যেতে পারে। আবার যারা সেলফি তোলায় মগ্ন, তাদের অনেকের মধ্যেই আত্মকেন্দ্রিকতার লক্ষণ প্রবল হয়ে ওঠে বলে জানান মনোস্তত্ত্ববিদরা। পড়াশোনার বাইরে অবসর সময় কাটানোর জন্য সন্তানের হাতে মোবাইলফোনের পরিবর্তে গল্পের বই, ধাঁধার সামগ্রী তুলে দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি সন্তানের সঙ্গে খেলায় সঙ্গ দেয়ার জন্য বাড়ির বড়দেরও এগিয়ে আসতে হবে। তার ফলে বাড়ির খুদেটির শরীর চর্চা হবে খেলার ছলে সন্তানকে যোগাভ্যাস করার পরামর্শও দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির এক নির্দেশনা অনুযায়ী, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা টিভি, মোবাইল বা কম্পিউটারের সঙ্গে যতটা কম সময় কাটাবে, ততই ভাল। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা দিনে বড়জোর ১ ঘণ্টা টিভি বা কম্পিউটারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে। এর বেশি হলেই বাড়বে বিপদ! সুতরাং, সন্তানের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই নির্দেশিকা মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরী।

জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল ওয়াহাব বলেন, করোনাকালে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর মানসিক চাপ বাড়ছে। পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা, পরিবারের শাসন ইত্যাদি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে মোবাইলে গেইম খেলছে। এটা এক সময় নেশায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে। মোবাইলে গেইম খেলা মদ, গাঁজা, হেরোইন খাওয়ার নেশার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। নেশায় পড়লে সেখান থেকে সরে আসা কঠিন। অনেকেই প্রেমঘটিত টানাপড়েন, আর্থিক সঙ্কট, বিষণ্ণতা ও একাকিত্বসহ ছোট ছোট সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য মোবাইল গেইমে আসক্ত হচ্ছেন। অনেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়ে তুচ্ছ ঘটনায়ও আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাবোধ করছেন না। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে শিক্ষার্থীদের এই আসক্তি কিছুটা হলেও কমে যাবে। ক্লাসের কাজের চাপ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিনের অনেক সময় কাটাতে হবে। আবার বাসায় স্কুলের ক্লাসের পড়া তথা হোমওয়ার্ক করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকার প্রবণতা কমে যাবে।জনকণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়