লিহান লিমা: [২] দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার কৌশল হিসেবে বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলের কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞে নিজেদের ভবিষ্যত অন্ধকার দেখছেন ফিলিস্তিনি নাগরিকরা। আল জাজিরা
[৩] পশ্চিম তীরের রামাল্লার থ্রুমাসিয়া গ্রামের বাসিন্দা সানেহ শাহলাবির (৪০) স্বামী মার্কিন নাগরিক মুসতেসার শাহলাবিকে গত ৮ জুন হত্যা করে ইসরায়েলি দখলদার। তাদের বাড়ি গুড়িয়ে দেয়া হয়। ইসরায়েলের অভিযোগ, তার স্বামী ইসরায়েলে হামলার সন্দেহভাজন আসামি ছিলেন। সানেহ ও তার তিন সন্তানকে ইসরায়েলের বাহিনী জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেলে মার্কিন দূতাবাসের হস্তক্ষেপে তারা মুক্তি পান। তবে স্বামী ও বসতবাড়ি হারিয়ে এখন মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন সানেহ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেয়ের জন্য আসা তার মা এলিজাবেথ খামিস বলেন, খাওয়া ও গোসল ব্যতীত সে এক জায়গায় বিষণ্নভাবে বসে দিন কাটায়। মায়ের এই শোক ভীষণভাবে আঘাত করেছে তার সন্তানদের।
[৪] অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আরেক ফিলিস্তিনি পরিবার নিদাল রাজিবের দোকান দুই সপ্তাহ আগে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গত ৭ জুন ইসরায়েলের সিটি কর্পোরেশন সিলওয়ানের আল-বুস্তান এলাকায় ধারাবাহিকভাবে বসতবাড়ি গুড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৩টি ফিলিস্তিনি পরিবার, ১৩০জনকে নিজেদের বাড়ি নিজ হাতে ধ্বংস করার জন্য ২১দিন সময় দেয়া হয়। ইসরায়েলের থিম পার্ক তৈরির জন্য আল বুস্তান এলাকার দেড় হাজার পরিবারের বসতবাড়ি ধ্বংসের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
[৫] রাজিব কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক ২১দিনের মধ্যে নিজের দোকান না ভাঙলে তা গুড়িয়ে দেয় সরকারী লোকেরা। উপরুন্তু তাকে ১৮হাজার ডলার জরিমানা করা হয়। রাজিব ও তার দুই ভাই বিক্ষোভ করলে তাদের গ্রেপ্তার করে ৪দিন কারাগারে রাখা হয়। রাজিব জানান, তিনি তার মাসিক আয় হারিয়েছেন। জেরুজালেমের কর্তৃপক্ষ তাকে অনুমতি ব্যতিত দোকান করায় ৬ হাজার ডলার, বাড়ি করায় ১৫ হাজার ডলার এবং বারান্দা করায় ৩ হাজার ডলার জরিমানা করে। রাজিবকে এখন তার বসতবাড়ি ভাঙার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাজিব জানান তিনি তা করবেন না। এবং কর্তৃপক্ষ তা নিজ হাতে ভাঙলে রাজিবকে তার জন্য জরিমানাও গুনতে হবে।
[৬] ইসরায়েলি সৈন্যদের হাতে আহত হাসপাতালে ভর্তি ভাই, অসুস্থ সন্তান এবং ঋণগ্রস্ত রাজিব জানেন না আগামীকাল কি হবে। রাজিবের এই গল্প শতশত ফিলিস্তিনির, যারা প্রতিনিয়ত ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর নৃশংসতার শিকার হচ্ছে।