প্রবীর বিকাশ সরকার: সাম্প্রতিককালে একটি প্রসঙ্গ জাপানের পত্রপত্রিকা ও সভা-সেমিনারে পড়ছি এবং শুনছি। কার্যক্রমও বেশ চোখে পড়ছে। বিষয়টি হচ্ছে, SDGs A_©vr Sustainable Development Goals যা কিনা বৈশ্বিক ১৭টি ক্ষেত্রে লক্ষ্য পূরণকল্পক কার্যক্রম। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্বনেতৃবৃন্দ উক্ত ১৭টি লক্ষ্য পূরণকল্পক পরিকল্পনার প্রতি সম্মতি প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে এরকম একটি সম্ভাব্য প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। বিশ্বনেতৃবৃন্দ সৃষ্টি করতে আগ্রহী অপেক্ষাকৃত ভালো এবং স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন একটি বিশ্বজগৎ, যেখানে দারিদ্র্য থাকবে না, বৈষম্য থাকবে না, সমান অধিকার ভোগ করবে প্রতিটি দেশের প্রতিটি নাগরিক শিশু থেকে প্রবীণ সবাই। পাশাপাশি, মানুষের কল্যাণের জন্য, বসবাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সৃজনশীল কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করার প্রতিও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। জাপান বরাবরই শান্তি, সমৃদ্ধি ও সৃজনশীলতার জন্য প্রসিদ্ধ একটি দেশ। এই দেশের নাগরিকদের প্রকৃতিপ্রেম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, শ্রমমর্যাদা ও সৃষ্টিকর্মের প্রতি প্রবল আগ্রহ ঈর্ষণীয়। যা স্বামী বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বিস্মিত করেছিলো আজ থেকে ১০০ বছরের অধিক আগে। ফলত SDGs প্রকল্প জাপানিদের মধ্যে নতুন এক জাগরণ এনে দিয়েছে। বেসরকারি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয়সমূহ তো বটেই খোদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও প্রভূত শক্তি নিয়োগ করেছে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য। গতকাল গিয়েছিলাম বাসার কাছে একটি গ্রন্থবিতানে। অবাক হয়ে দেখলাম ঝউএং নিয়ে কেমন উন্মাদনা শুরু হয়েছে জাপানে যে, শিশুরাও যাতে এই প্রকল্প বুঝতে পারে এবং কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ হয় তার জন্য গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে! আমি দোকানের ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন বিক্রি হচ্ছে এইসব? তিনি বললেন, খারাপ বিক্রি হচ্ছে না। নার্সারি ও স্কুলগুলো ক্রয় করছে, গ্রন্থাগারগুলো ক্রয় করছে। কারণ, এটা তো গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশ্বিক প্রকল্প। অবশ্যই শিশু-কিশোর-কিশোরীদেরকে বুঝতে হবে বিষয়টি, কেননা সবাইকে এই পৃথিবীকে রক্ষার জন্য, বসবাসযোগ্য করার জন্য কাজ করতে হবে। শিশুদেরও দায়দায়িত্ব আছে বৈকি! এখন শিশুরা যা শিখবে ও জানবে বা করবে সেটা তারা মৃত্যু পর্যন্ত ভুলবে না, দীর্ঘমেয়াদে সাসটেইন করা যাবে ১৭টি ক্ষেত্র। আমরা বড়রাও হয়তো জানি না এই ১৭টি ক্ষেত্র বা লক্ষ্য কী? জেনে নেয়া যাক :
১. দারিদ্র্য না থাকা ২. ক্ষুধা নির্মূল ৩. স্বাস্থ্য ও শান্তি রক্ষা ৪. গুণগত শিক্ষা ৫. নর-নারীর সমতা ৬. সুপেয় জল ও স্বাস্থ্যবিধান ৭. সাশ্রয়ী প্রাকৃতিক শক্তি ৮. সুষ্ঠু কর্ম ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৯. ভারি শিল্প ও উদ্ভাবন ১০. বৈষম্য হ্রাস ১১. টেকসই শহর ও সম্প্রদায় ১২. জবাবদিহিমূলক ব্যয় ও উৎপাদন ১৩. জলবায়ুসংক্রান্ত কার্যক্রম ১৪. জলজ জীবন ব্যবস্থা ১৫. ভূমিজ জীবন ব্যবস্থা ১৬. শান্তি, ন্যায়বিচার এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং ১৭. লক্ষ্য পূরণে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব।
শিক্ষক, সামাজিক উন্নয়নকর্মীরা তো আছেনই এই প্রকল্প বাস্তবায়নে, কিন্তু সবচেয়ে আগে এগিয়ে আসছেন রাজনীতিবিদ তথা স্থানীয় নগর প্রশাসক, প্রাদেশিক শাসক ও সাংসদরা। যে যার নির্ধারিত এলাকায় কাজ করছেন। যেহেতু এইসব লক্ষ্য পূরণে বিপুল অর্থের প্রয়োজন তাই বাজেট তৈরিতে ধনী ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও পিছিয়ে নেই। পিছিয়ে নেই বাণিজ্যিক ও উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানগুলো যারা নিত্যনতুন ধারণাসম্বলিত পণ্যসামগ্রীও উৎপাদন করছেন।
বাংলাদেশ যেভাবে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে তাতে করে ভবিষ্যৎ উন্নয়নের ধারাকে টেকসই করতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো জরুরি, তার জন্য হাজার-লক্ষ কোটি টাকার বাজেটও জরুরি। জরুরি রাজনীতিক ও স্থানীয় সাংসদদের দৃষ্টি উন্মুক্ত করা। ছানিপড়া রাজনীতি অচল এখন বিশ্বে মনে রাখাও জরুরি। যা ইচ্ছে তাই করার দিনও শেষ। প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে টেকসই ১৭টি লক্ষ্য পূরণে শক্তি নিয়োগ না করলে ধাতবগত উন্নয়নের মধ্যে মননশীল ও সৃজনশীলতায় বাঙালি পিছিয়ে যাবে। যা কাম্য নয়। জানি না, বাংলাদেশের রাজনীতিক বা সাংসদরা ১৭ Sustainable Development Goals (SDGs) সম্পর্কে আদৌ কিছু জানেন কিনা? বিগত ৬ বছর ধরে এই বিষয়ে কোনো আলোচনা বা সভা-সেমিনার হয়েছে কিনা? হয়ে থাকলে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানার খুব আগ্রহ। ফেসবুক থেকে