দীপক চৌধুরী: গালে হাত দিয়ে বসে থাকলেই সমস্যার সমাধান হবে না। কিংবা এর সময়ও এখন নয়। নিরাশ না হয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানোর জন্য আমাদের হাত-পা নাড়তে হবে। শুধু হা-হতাশ করার খবর প্রকাশ করে কার লাভ হচ্ছে ? কারো লাভ হচ্ছে না। ‘অসহায়ত্ব’ বা ‘অপারগতা’ নিয়ে রাজনীতি করতে চায় যারা, তারা কারা? গত ১৬ মাসের রাজনীতির বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিএনপি নামের রাজনৈতিক দল ও এর সমমনা দলগুলোর একমাত্র কাজ হচ্ছে অসহায়ের পাশে না দাঁড়িয়ে করোনা নিয়ে রাজনীতি করা। এবং অপ্রয়োজনে সরকারের তীব্র সমালোচনা করা। যেখানে বিএনপি নেতারা ‘ভ্যাকসিন’ নিয়ে হাস্যকর, অযৌক্তিক সমালোচনার নামে ভাঁড়ামো করা শুরু করেছিলেন সেখানে তারা এখন সম্ভবত সোজা হয়েছেন। কারণ, বাস্তবতায় ফিরেছেন দলটির নেত্রী খালেদা জিয়া। গণমাধ্যমে দেখলাম খালেদা জিয়া টিকা নেবেন। না বাঁচলে রাজনীতি করা যাবে!
এটা তো স্বীকার করতেই হবে, টিকা ছাড়া উপায় নেই। টিকার কোনো বিকল্প নেই। সর্বোচ্চ টিকা কূটনীতি প্রয়োগ করে টিকা সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
দেশের ভেতরে টিকা উৎপাদনের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এ বছরের মধ্যে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে সরকারপ্রধান প্রাণান্তকর চেষ্টা করছেন। মানুষ যেমন বুঝতে পারছে তেমনি আমিও মনে করি টিকাই মানুষকে বাঁচাবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২৯ লাখ টিকা দিচ্ছে জাপান। স্বীকার করা চাই, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কারণে দেশে টিকা আসছে, আমরা পাচ্ছি। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে যে, প্রধানমন্ত্রীর একক প্রচেষ্টায় আমরা করোনা মোকাবিলা করতে পারব না। ১৮ বছরের উপরে সবাইকে টিকার আওতায় আনার চিন্তা সরকারের। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন তারা কিছু দিনের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন, কারণ এ মাসেই অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসছে। আমাদের কাছে এখন ৪৫ লাখ ডোজ করোনা টিকা মজুদ আছে। কোভ্যাক্সের মাধ্যমেও আমরা অনেক টিকা পাবে। আগামী আগস্ট মাসে আসতেছে ফাইজারের ৬০ ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২৯ লাখ ডোজ করোনা টিকা।
আমার মতো আজ অনেকের জিজ্ঞাসা, ঈদুল আজহার কথা চিন্তা করে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে বলে এখন অনেকে যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানেন তাহলে কী কিছু করার থাকবে? হাজার বার গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলি, তাহলে করোনাকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। কিন্তু কথাগুলো যেনো এককানে ঢুকছে অন্যকান দিয়ে বেরুচ্ছে। বিধিনিষেধ শিথিলে জাতীয় পরামর্শক কমিটির গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিধিনিষেধ শিথিল করার ঘোষণার পরই আজ থেকে সড়কপথে, মহাসড়কে, ফেরিঘাটে যেভাবে মানুষের ঢল নেমেছে, যাত্রীদের ভিড়, বেড়েছে মানুষের চলাচল তাতে অসহায়ের মতো আমার প্রাণে বিখ্যাত গীতিকার সলিল চৌধুরীর সেই গানটিই বাজছে। .. যা . .. রে যারে উড়ে যারে পাখি, ফুরালে প্রাণের মেলা, শেষ হয়ে এলো বেলা, আর কেন মিছে তোরে বেঁধে রাখি..।
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক