কাকন রেজা: এ যেন এক মৃত্যুপুরী। মৃত্যুপুরীতে বসবাস। চারিদিকে মৃত্যুর খবর। গণমাধ্যমে চোখ বুলালে এমনটা মনে হওয়া খুব স্বাভাবিক। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজিব গ্রুপের একটি কারখানায় আগুন লেগে মারা গেছেন বহু মানুষ। নয় তলা ভবনের একটি তলা থেকেই উদ্ধার হয়েছে ৪৯ জনের লাশ। একই দিনে খুলনায় করোনা আক্রান্ত ৭১ জনের মৃত্যুর খবর। অক্সিজেন সিলিন্ডার আনতে যাওয়া ছেলেকে পুলিশ আটকে রাখায়, অক্সিজেনের অভাবে বাবার মৃত্যু। এমন হৃদয় বিদারক খবরও একই দিনের। করোনায় মৃত বাবার জানাযা শেষ করে আসার পরেই মারা গেলেন মা। কি বলেন, মৃত্যুপুরী নয়?
ধর্মে যারা বিশ্বাস করেন, তারা বলেন, গজব। যারা সেকুলার তারা নির্বাক। কারণ তারা গজবে বিশ্বাস করেন না। তারা বলছেন, বিপর্যয়। এই বিপর্যয় কি প্রাকৃতিক? আগুন লাগাতো প্রাকৃতিক নয়। একটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ না থাকা, নিদেনপক্ষে প্রয়োজনীয় হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা না থাকাটাও প্রাকৃতিক হওয়া অসম্ভব। অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করে মৃত্যুর খবরে অক্সিজেনের অভাবটাও প্রাকৃতিক না। তবে কি অপ্রাকৃতিক? না, এতে বিশ্বাস করলেও আধিভৌতিক ব্যাপার চলে আসে।
তবে কি গজব? গজব হলে তো প্রস্তুতির বিষয় থাকে না। যেমন, আমাদের হাতে এক বছর সময় ছিলো, কিন্তু আমাদের হাসপাতালগুলো তৈরি হয়নি। বহু বাহুল্য কাজে হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে, অথচ মানুষের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালকে প্রস্তুত করা যায়নি! মানুষ না থাকলে ইট-পাথরের উন্নয়ন সব জঞ্জাল বৈ-তো কিছু নয়। সুনামি হলো গজব, প্রস্তুতির সময় দেয় না। ভূমিকম্পকেও সে অর্থে গজব বলা যায়, প্রস্তুত হওয়ার সময় নেই। কিন্তু চিকিৎসা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা না পাওয়াটা কি গজব?
এই যে কারখানায় আগুন লাগলো, মানুষের মৃত্যু হলো এটা কি গজব, না প্রাকৃতিক? তাজরীনের আগুনের কথা ভুলে যাইনি, পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদামে লাগা আগুনের স্মৃতিও জ্বাজল্যমান। তারপরেও কেন সাবধান হওয়া গেলো না, প্রশ্নটা কি সঙ্গত নয়? মৃত্যু কোনো সহজ কথা নয়। একজনের মৃত্যু একটা পরিবারের জন্য কতটা ভয়াবহ বেদনাদায়ক তা শুধু সেই পরিবারই বোঝে। প্রতি মুহূর্তে বেদনায় ক্ষয়ে যেতে হয় সেই পরিবারের প্রতিটি মানুষকে। সুতরাং ‘কভু আশীবিষে দংশেনি যারে’ ভেবে যারা বসে আছেন, তারা আসলে দংশনের অপেক্ষায় আছেন।
ফুটনোট : অবশ্য, আমাদের সয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অনেক বেশি। আবার কেউ কেউ তো আশীবিষে মানে সাপের বিষেও নেশা করেন। মৃত্যুও তাদের কাছে উৎসব হয়ে ওঠে। না হলে করোনাকালেও দুর্নীতি আসমান ছুঁতো না। করোনার সনদ জাল হতো না। আশ্রায়ন প্রকল্পের পাকাঘর বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যেত না। উন্নয়নের বহুতলে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার হতো না। আর আমরা বাঁশ সহনীয় মানুষেও পরিণত হতাম না।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
আপনার মতামত লিখুন :