আনু মুহাম্মদ: মানুষের জীবনের কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না। কিন্তু তারপরও যখন কারও অপরাধে/অবহেলায়/কারণে অন্য কারও জীবন যায়, কিংবা অচল হয়ে পড়ে কেউ, তখন ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন আসে। দুই কারণে- প্রথমত, একজন ব্যক্তি নিহত বা অচল হবার কারণে তার উপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের আর্থিকভাবে কিছুটা সমর্থন দেবার ব্যবস্থা করা এবং দ্বিতীয়ত, অপরাধী ব্যক্তি/গোষ্ঠীর জন্য একটা আর্থিক দন্ড নির্ধারণ করা যাতে ভবিষ্যতে অন্যরা একইধরনের অপরাধ না করে। তাহলে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এমন হতে হবে যাতে তা (১) নিহত ব্যক্তি বেঁচে থাকলে যে সম্ভাব্য আয় করতে পারতেন তার থেকে কোনোভাবেই কম হবে না এবং (২) তা অপরাধী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য শাস্তিমূলক হবে।
রূপগঞ্জে যে শ্রমিকেরা সজীব গ্রুপের কারখানায় কাজ করতে গিয়ে নিহত হলেন তাঁরা অনেকেই শিশু, ১৩-১৪ বছরের। বাংলাদেশের গড় আয়ুসীমা এখন ৭২ বছর। শ্রমজীবী মানুষদের এরকম বয়সেও কাজ করতে হয়। যদি অবসরের সাধারণ বয়স ৬৫ও ধরি তাহলেও আরও ৫০ বছর তাঁদের অনেকেরই বেঁচে থেকে কর্মক্ষম থাকার কথা। এসময়ে তাদের বয়সের সাথে সাথে দক্ষতা এবং অর্থনীতির মজুরি কাঠামো সবই বাড়ার কথা। এইসব গুলো হিসাব করেই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের দেশে এখনও এই আইন ঠিকমতো প্রণয়ন করা হয় নাই। এখনও বহু কারখানা, পরিবহণ, নির্মাণ শ্রমিক নিয়োগকারীর কারণে নিহত হবার পরও ক্ষতিপূরণ পাননি। এমনকি সম্প্রতি বাঁশখালীতে গুলি করে শ্রমিক হত্যার পরও শাস্তি, ক্ষতিপূরণ কিছুই হয়নি।
সজীব গ্রুপের কারখানায় আগুনে পুড়ে নিহত কমপক্ষে ৫২ জন শ্রমিকের ক্ষেত্রে যদি আমরা দেড়শো বছরের বেশি সময় আগের ১৮৫৫ সালের ‘চরম দুর্ঘটনা আইন’ও বিবেচনায় নেই, সে অনুযায়ী গড়ে কম করে ধরলেও মাথাপিছু ক্ষতিপূরণ দাঁড়ায় ৬৮ লাখ টাকা। এটা দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকান্ড, তার ক্ষতিপূরণ আরও বেশি হতে হবে। আর তার বাইরে হত্যার দায়ে মালিক-ব্যবস্থাপক এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়