সুজন কৈরী: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে না বের হতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, চলমান লকডাউন দুই সপ্তাহ। অনেক বেশি দিন না। এই দুই সপ্তাহের কারণে আপনি যদি ৫০ বছর বাঁচতে পারেন, তাহলে দুই সপ্তাহ ঘরে থাকতে হবে। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘায়িত করবেন কি-না, সেই সিদ্ধান্ত আপনার নিজের।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি আয়োজিত লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত হতদরিদ্রদের মধ্যে খাবার ও নগদ ৫০০ টাকা বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ও এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন।
আইজিপি বলেন, কঠোর লকডাউনেও অনেকের বাসায় থাকতে ভালো লাগে না, বিরক্ত লাগে। অনেকেই আবার লকডাউন কেমন হচ্ছে, তা দেখতে বের হচ্ছেন।
পুলিশ প্রধান বলেন, নিজেরা বাইরে বের হয়ে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অসুস্থ হবেন। এরপর হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অ্যাটাক (আক্রমণ) করবেন, এটা ঠিক নয়। দয়া করে এ কাজগুলো করবেন না। আসুন সবাই মিলে দেশটাকে রক্ষা করি। দুই সপ্তাহের কারণে আপনি যদি ৫০ বছর বাঁচতে পারেন, তাহলে দুই সপ্তাহ ঘরে থাকতে হবে।
আইজিপি বলেন, গুলশান এলাকায় অনেক ট্রাফিক বেড়ে গেছে। তাদের প্রত্যেকেরই জরুরি কাজ। এই মহামারিতে যদি ১৮ কোটি লোক আক্রান্ত হয়, প্রত্যেকের জন্য হাসপাতালের বেড দেয়া সম্ভব না। উন্নত দেশগুলোও পারেনি। দয়া করে রাস্তাঘাটে ভিড় করবেন না। জরুরি কাজ একটু কমান। বিনা প্রয়োজনে কেউ ঘর থেকে বের হবেন না।
করোনাকালে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের আহ্বান জানিয়ে আইজিপি বেনজীর আহমেদ বলেন, বর্তমানে আমরা করোনা অতিমারির কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাক বাহিনীকে আমরা পরাজিত করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা এ দুর্যোগও মোকাবেলা করতে পারবো। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।
আইজিপি বলেন, মানুষের জীবন এবং জীবিকা দুটিই যেন সচল থাকে এজন্য অহর্নিশ কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান মানুষকেও অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে প্রায় ৪০ লাখ পরিবার বসবাস করে। প্রত্যেক পরিবার থেকে যদি এক প্লেট করেও খাবার দেয়া হয় তাহলে ৪০ লাখ মানুষ খাবার পাবে। করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষগুলো আমাদেরই কমিউনিটির অংশ। তাদেরকে সাথে নিয়েই বাঁচতে হবে।
চলমান অতিমারি মোকাবেলায় সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আইজিপি বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হবেন না। জরুরি প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। বিনা প্রয়োজনে কেউ রাস্তায় নামবেন না।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এই মৃত্যুর মিছিল আমরা কি আরও প্রলম্বিত করবো? এ সিদ্ধান্ত আমাদেরকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, আসুন, আমরা হাতে হাত ধরে কাজ করি, দুর্যোগ মোকাবেলা করি।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নেতাসহ দেশের সকল পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তি, যারা সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান আইজিপি।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, নিজেকে নিজে বাঁচাতে হবে, কেউ আপনাকে বাঁচাবে না। নিজেকে রক্ষা করতে হবে, নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তাহলে আমরা বাঁচতে পারবো।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, করোনাকালে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা করলে আমরা সবাই ভালো থাকবো। এজন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, দোকান মালিক সমিতি এক হাজার লোকের দায়িত্ব নিয়েছে। এভাবে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, বিশ্ব এখন বিপদের মুখে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এ যুদ্ধে ধৈর্য ধরে সবাইকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি এক হাজার অসহায় ও দুস্থ মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার, নগদ অর্থ, মাস্ক ও সাবান বিতরণ করেছে।
২ অঃঃধপযসবহঃং
আপনার মতামত লিখুন :