মাসুদ রানা : [২] মেহেরপুর শহরের দিঘিরপাড়া গ্রামের বাবু মিয়া (৫০)। তিনি চাষাবাদ ছাড়া কিছুই বোঝেন না। বিঘা তিনেক জমি আছে তার চাষাবাদের। এর মধ্যে ১ বিঘা ৪ কাঠা জমি স্যাতস্যাতে হওয়ায় ধান চাষ করলে ধানে নোনা লেগে যায়। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার তিনি ওই জমিতে কন্দাল জাতের লতিকচু চাষ করেছেন তিনি। কচুর ফুল সুস্বাদু সবজি হিসেবে দেশজুড়ে চাহিদা। ইতোমধ্যে ১ লক্ষ ৫গ হাজার টাকার কচু বিক্রি করেছেন।
[৩] এখনও লক্ষাধিক টাকার বেচা কেনা হবে বলে আশা করছেন। বীজ হিসেবে রোপনের জন্য চারা বিক্রি করেছেন ৫ হাজার টাকার। তার দেখা দেখি ওই গ্রামের অনেকেই কন্দাল কচুচাষে ঝুঁকে পড়ছেন। একমাত্র বাবু মিয়া এবছর কন্দাল জাতের লতিকচু চাষ করছেন। এক মেয়ে এক ছেলে। মেয়ে গৃহিনী। চাষাবাদ করেই ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার করেছেন। ।
[৪] কৃষি নির্ভর মেহেরপুর জেলা সবজি চাষের জন্য দেশজুড়ে সুখ্যাতি আছে লতিরাজ কচুর। তবে কন্দাল জাতের লতি কচু বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়নি। জেলায় প্রথম এবছর বাবু মিয়া কন্দাল জাতের লতিকচুর চাষ করেছেন। গত দু’তিন বছর ধরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনেক কৃষক লতিরাজ কচু চাষ করছেন। তারা লাভবান হওয়াতে জেলায় লতিরাজ কচুচাষ বাড়ছে। এবার বাড়বে কন্দালজাতের লতিকচু চাষ। এবছরে জেলায় প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে লতি কচুর চাষ হচ্ছে।
[৫] লতিকচু চাষি বাবু মিয়া বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবছর ২৪ কাঠা জমিতে কন্দাল জাতের লতিকচুর চাষ করি। সার ও বীজ কৃষি অফিস থেকেই দেয়। শীতের শেষে জমিতে বীজ লাগাই। লাগানোর তিন মাস পর থেকেই লতিকচু তোলা শুরু করি। খেত থেকে দুই সপ্তাহ পর পর কচুর লতি তোলা হয়। আর এক মাস পর পর কচুর ফুল সংগ্রহ করে বিক্রি করেন।
[৬] চার থেকে পাঁচ মাস পর কচুর কন্দ তোলা হয়। কন্দাল জাতের লতিকচু হওয়ায় জমিতে সবসময় পানি দিয়ে স্যাসস্যাতে করে রাখতে হয়। কৃষি বিভাগ বীজ, সার দিলেও পরিচর্যা করতে তার ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান। তিনি আরও বলেন , এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার লতি, ১৫ হাজার টাকার ফুল, ৫ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করেছেন। এখনও ১ লাখের বেশি বেচাকেনা করতে পারবেন। আগামীতে তিনি ২ বিষা জমিতে চাষ করবেন বলে জানান।
[৭] গোলাম হোসেন নামের এক চাষি বলেন, ‘কচু একবার লাগালে লতি, মুখী (ছড়া), ফুলসহ কয়েক ধরনের লাগাবো। আর বাজারে এসবের চাহিদাও ভালো। বাবু মিয়া কৃষি বিভাগের পরামর্শে জমিতে লতিকচু ফলিয়েছেন। তার দেখাদেখি এখন আমিও ১ বিঘা জমিতে চাষ করেছি।
[৮] সবজি বিক্রেতা খলিলুর রহমান জানান- উপজেলার বাজারগুলোতে প্রতি কেজি লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় এবং ফুল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। এ ছাড়া একেকটি কন্দাল কচু ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
[৯] লতিকচুর পাইকারী ক্রেতা শহরের আড়ৎদার শাহি, রাজ্জাক, ইনতাজ আলী অভিন্নসুরে বলেন, লতিকচু উন্নত মানের সবজি হওয়ায় ঢাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গাজীপুর চৌরাস্তা, সাভার, কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার, জয়দেবপুর চৌরাস্তাসহ সিলেট ও চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। এবার নতুন করে কন্দাল জাতের লতিকচু চাষ হয়েছে। চাহিদাও ব্যাপক।
[১০] সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নাসরিন পারভিন জানান, মেহেরপুরে লতিরাজ কচু চাষ হলেও কন্দাল ফসল লতিকচু চাষ হয় না বললেই চলে। কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথম মেহেরপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর সহযোগিতায় কৃষক বাবু মিয়া লতিকচু চাষ করছেন। লতিকচু চাষে এই সাফল্য অনেক কৃষককে অনুপ্রাণিত করেছে। শুধুমাত্র নিচু জমিতেই নয়, বসতবাড়ির আশেপাশে স্যাতস্যাতে জমিতে সহজেই লতিকচু চাষ করে পুষ্টিচাহিদা পূরণ করা সম্ভাব। মেহেরপুরের লতিকচু ভবিষ্যৎতে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি হবে।
[১১] জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, লতিকচু ও কন্দাল জাতের লতিকচু একই হলেও কন্দাল জাতে ফলন বেশি। কন্দাল জাতের লতিকচু ঘন করে লাগাতে হয়। এবং সবসময় জমিতে পানি সংরক্ষণ রাখা প্রয়োজন। যাতে লতি ও ফুল বেশী হয়। কারণ লতি ও ফুল উৎকৃষ্ট সবজি হিসেবে বিক্রি হয়। এবার প্রথম কন্দালজাতের লতিকচু চাষ হয়েছে। সম্পাদনা : সাদেক আলী