জান্নাতুন নাঈম প্রীতি: তসলিমা নাসরিনসহ বেশির ভাগ বাংলাদেশি ও পশ্চিমা নারীবাদীর সঙ্গে আমি একমত না যে ইস্যুতে, সেটা- ‘হিজাব’। যদিও বাঙালি নারী পুরুষদের একটা মেজরিটি অংশ মনে করে, হিজাব পরা মেয়েরা ভালো মেয়ে। কিন্তু দুই দলের একদলও বলে না নারীর ওপর আগ্রাসনে হিজাব মূল বিষয় না, বিষয় হলো- জোর করে চাপিয়ে দেওয়া। সৌদি আরব বা ইরান যেভাবে হিজাব, নিকাব পরা বাধ্যতামূলক করে, ফ্রান্স সেই একই কায়দায় বোরখা হিজাব ব্যান করে। আসল প্রশ্ন হওয়া উচিত, রাষ্ট্র কেন নারীর পোশাক ঠিক করবে?
সানসিল্ক যে কায়দায় হিজাব রিফ্রেশ শ্যাম্পু বের করে, সেই একই কায়দায় বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারীবাদীই একটা লাইন ব্যবহার করে নিজেদের সেলিং পয়েন্ট বানাতে- আমি নিজের বিজ্ঞাপন করি না! আরে ভাই, তুই যে নিজেই ‘বিজ্ঞাপন করি না’ বইলা বিজ্ঞাপনের প্রধান লাইনটা লিখলি এইটা স্বীকার করবি কবে? বাংলাদেশের বেশির ভাগ পরিবারই একেকটা হিপোক্রেসির কারখানা। এরা বাঙালি সংস্কৃতির কথা বলে মূলত নারীদের আটকে রখার জন্য।
এতো রাতে কই যায়, কার সঙ্গে যায়, কী করে, কার বিয়া হইছে, কার হয় নাই, কারে কোন ছেলের সঙ্গে দেখা গেছে- এসব প্রশ্ন করা বাঙালি সংস্কৃতি না, সংস্কৃতি সেজে নারীর ওপর আগ্রাসন। কিন্তু বাঙালি বেকুব নারী নিরাপত্তা নাই, গায়ে শক্তি নাই এসব উছিলায় নিজেই এই আগ্রাসনে অংশ নিয়ে এই সিস্টেমকে সাহায্য করে। এভাবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মাসের পর মাস, বছরের পর বছর নারীকে দাস বানিয়ে রাখে এবং নারীর গতিবিধি জন্তু জানোয়ারের মতো নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সূত্রেই নারী রসগোল্লা, চিনি, কলা, মাংস- এগুলাকে এস্টাবলিশমেন্টের দায়িত্ব পড়েছে স্বয়ং নারীর ঘাড়েই। ফলে বিভিন্ন এলাকায় হাঁটতে গিয়া বুকে ওড়না নাই ক্যান, এটা আপনি পুরুষের পাশাপাশি শুনবেন স্বয়ং নারীর মুখেই!
আমার প্রিয় নারীবাদী মোনা এল্টাহাওয়ের একটা খুবই বিতর্কিত বই আছে, হেডস্কার্ফস অ্যান্ড হাইমেন্স। মোনা দেখাতে চেয়েছেন, মেজরিটি মুসলিম অপ্রেশানকে ধর্ম বলে প্রচার করে এবং হেডস্কার্ফ আর হাইমেন দুই পর্দাকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একই কথা বাঙালি সংস্কৃতির কথা বলেও করা হয়! আমাদের সংস্কৃতিতে রাত করে বাড়ি ফেরা নাই, ছেলেবন্ধুর সঙ্গে ঘোরাঘুরি নাই ইত্যাদি। প্রশ্ন হলো এইসব কুসংস্কারের সংস্কৃতি কবে যাবে?
হিজাব না পরার জন্য নাসরিন সতুদেহকে অসংখ্য দোররা মারার নির্দেশ দেওয়া ইরানি শরীয়া আইন মানা কোর্ট, সৌদি আরবের ধর্মরক্ষাকারী পুলিশের কার্যকলাপ, তালেবানদের হিজাব নিকাব পরতে করা অত্যাচার এবং হিজাব ব্যান করা ফ্রেঞ্চ আইন, দুইটাই নির্যাতন। একটা ধর্মের নামে, অন্যটা সেক্যুলারিজমের নামে। দুইটাই পরিত্যাজ্য। আর কয়দিন নারীর কাপড় নিয়া রাষ্ট্রের এতো মাথাব্যথা থাকবে? আর কয়দিন হিজাব পরারে ‘ভাল মেয়ে’র গুণ আর হিজাব না পরা কাউরে ‘বেশ্যা’ বইলা খবরদারি ফলাবেন? আর কদ্দিন নির্যাতনকে আইন আর আইনকে নির্যাতন বলবেন? ফেসবুক থেকে