ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম: আজ দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিন। আর এর ভেতরেই আজ একদিনে করোনায় আক্রান্ত ৮ হাজার ৬০০ এর উপর এবং মৃত্যু ১৫৩ জন। দৈনিক সংক্রমণ এবং মৃত্যুর দিক দিয়ে এযাবৎ বাংলাদেশে এটাই সর্বোচ্চ। তাহলে লকডাউন কি কাজ করছে না? নাকি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ভয়ংকর?
আসলে লকডাউনের পরেও যে উচ্চ সংখ্যক সংক্রমণ ও মৃত্যু দেখছি তা খুবই স্বাভাবিক। করোনাভাইরাসের ইনকিউবেশন টাইম হচ্ছে ৩-১৪ দিন। অর্থাৎ আজকে যারা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসবে তাদের ভেতর কোভিডের লক্ষণ প্রকাশ পেতে সময় লাগবে তিন থেকে চোদ্দ দিন। আজ আমরা যে ৮,৬৬১ জন নতুন কোভিড রোগী দেখলাম তা বিগত ৩-১৪ দিন আগের সংক্রমণের ফল। লকডাউনের ফলে এই চারদিনে কতটুকু সংক্রমণ বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে তা জানতে হলে আমাদেরকে আরো ৪-১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। আগামী ৪ দিনের ভেতরেই আমরা দেখবো দৈনিক সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করছে।
আর আজ আমরা যে মৃত্যু দেখলাম তা বিগত ১৪-২৮ দিনে আক্রান্ত রোগিদের মৃত্যু। এভাবে লকডাউন চলতে থাকলেও আগামী ১০ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত আমরা কোভিডে অনেক রোগীর মৃত্যু দেখবো, এবং এটাই স্বাভাবিক। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।
লকডাউনে পূর্বে কাজ হয়েছে এবং এবারও হবে। যেহেতু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অতিসংক্রামক এবং অতিদ্রুত ছড়ায়, তাই সংক্রমণ হয়তো কিছুটা ধীরে ধীরে কমবে। আগামী দুই সপ্তাহ দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন বলবৎ রাখার কোন বিকল্প নেই। তবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের হাত থেকে মৃত্যু কমাতে হলে ঢাকার বাইরের আক্রান্ত জেলাগুলোতে অক্সিজেন ও হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা সরবরাহ এবং আইসিইউ ব্যাবস্থা ২-৩ গুন বৃদ্ধি করতে হবে। তৃতীয় ঢেউয়ে ৭৫ শতাংশ মৃত্যুই হচ্ছে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে। তাই অতিদ্রুত জেলাসদর হাসপাতালগুলোতে কোভিড সাপোর্ট ব্যাবস্থা বৃদ্ধি না করলে মৃত্যু হার কমানো সম্ভব হবে না।
লেখক: সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য