নিউজ ডেস্ক: দেশে বর্তমানে নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার মজুদ রয়েছে ৫৬ লাখের বেশি। সর্বশেষ গতকাল মডার্না ও সিনোফার্মের মোট ৪৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসে পৌঁছেছে। সব মিলিয়ে এখন টিকার মজুদ প্রায় ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ডোজ। এখন আবারো গণপরিসরে টিকা প্রয়োগ শুরুর কথা ভাবছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, কীভাবে, কোথায় ও কাদের ওপর এ টিকা প্রয়োগ করা হবে সে বিষয়ে আগামীকাল মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত আলাদা চারটি বিশেষ ফ্লাইটে ৪৫ লাখ ডোজ টিকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এর মধ্যে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে মডার্নার ২৫ লাখ ও বাণিজ্যিক চুক্তির আওতায় চীন থেকে কেনা সিনোফার্মের ২০ লাখ।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, এ দফার ৪৫ লাখ ডোজ টিকা হাতে পাওয়ার পর বাংলাদেশ আবারো গণটিকা কার্যক্রম শুরু করবে। তবে কবে নাগাদ এ কার্যক্রম শুরু হবে তা তিনি নিশ্চিত করে বলেননি। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, এ টিকা কাদের ও কখন দেয়া হবে, কিংবা গণপরিসরে দেয়ার পরিকল্পনা কেমন হবে, তা নিয়ে আগামীকাল মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হবে। বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে।
বিশ্বব্যাপী করোনা প্রতিরোধী টিকা বিতরণের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিইএইচও) নেতৃত্বে গ্যাভি-দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনায় কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় চলতি বছরের মধ্যে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। এর আগে এ সুবিধার আওতায় গত ৩১ মে একটি চালানে ফাইজারের ১ লাখ ৬ হাজার ডোজ টিকা এসেছে। এছাড়া চীনের বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রডাক্ট কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে বাণিজ্যিক চুক্তিতে সিনোফার্মের টিকা কিনছে বাংলাদেশ সরকার। তাদের কাছ থেকে মোট ১ কোটি ৫০ লাখ ডোজ টিকা কেনার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ২০ লাখ ডোজ টিকা গতকাল হাতে এসেছে।
গত ২৭ জুন দেশে অষ্টম টিকা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার করোনার টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। অনুমোদন পাওয়া বাকি টিকাগুলো হলো ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, রাশিয়ার স্পুতনিক-৫, চীনের সিনোফার্ম, যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার, চীনের সিনোভ্যাক, বেলজিয়ামের জনসন অ্যান্ড জনসন ও সুইডেনের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে গণপরিসরে টিকা কার্যক্রম শুরু করে সরকার। চুক্তি অনুযায়ী ছয় চালানে জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে বাংলাদেশের তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল। তবে ভারতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। এর আগে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে মোট ৭০ লাখ ডোজ কেনা টিকা ও ৩০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে পাঠায় ভারত। টিকার পর্যাপ্ত মজুদ না থাকায় গত ২৬ এপ্রিল প্রথম ডোজের টিকা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। আর টিকাপ্রত্যাশীদের জন্য নিবন্ধন বন্ধ হয় ৫ মে। প্রথম ডোজ পাওয়া সাড়ে ১৪ লাখ ব্যক্তি আপাতত কোভিশিল্ডের টিকা পাচ্ছেন না।
চীন সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া ১১ লাখ ডোজ সিনোফার্ম টিকা দিয়ে সীমিত পরিসরে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করছে সরকার। একই সঙ্গে ফাইজারের টিকাও প্রয়োগ চলছে। কোভিশিল্ড, মডার্না, সিনোফার্ম ও ফাইজারের মিলিয়ে মোট এ পর্যন্ত ১ কোটি ৬০ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাবিষয়ক তথ্য বলছে, টিকা নিতে গতকাল পর্যন্ত মোট ৭২ লাখ ৭৭ হাজার ৭৩৫ জন নিবন্ধন করেছেন। তাদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি ১ লাখ ১০ হাজার ৯৭৯ ডোজ, সিনোফার্মের ৭৩ হাজার ২৪৫ ডোজ ও ফাইজারের ১ হাজার ৮৬৬ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। - বণিক বার্তা