ফাহমিদুল হক: অনেকেই ফেসবুকের মতো মাধ্যমকে বিকল্প মাধ্যম বলে থাকেন। আমি মনে করি এরকম বলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা ভালো। বিকল্প মাধ্যম ধারণাটা কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এর একটা আদর্শ বা বলা যায় রাজনৈতিক আদর্শ আছে। সামাজিক মাধ্যমগুলো মূলধারার যোগাযোগ মাধ্যমের সমান্তরাল অর্থে বিকল্প, কিন্তু আদর্শগতভাবে বিকল্প নয়। দে আর অল্টারনেটিভ টু মেইনস্ট্রিম, নট অল্টারনেটিভ ইটসেল্ফ। এসব মাধ্যমে মেইনস্ট্রিম ভাবনারই প্রতিফলন দেখা যায়। কিছু অল্টারনেটিভ ও প্রগ্রেসিভ আদর্শের পাশাপাশি খুবই পশ্চাৎপদ আদর্শও ব্যাপক মাত্রায় এখানে উপস্থিত।
বিকল্প মাধ্যম সমাজের আধিপত্যশীল রাজনৈতিক এলিট, বিজনেস এলিটদের বিপরীতধর্মী আদর্শ নিয়ে কাজ করার কথা। কিন্তু বাস্তব জগতের সব বড় খেলোয়াড়ই ভার্চুয়াল জগতে উপস্থিত। বা তারাই সামাজিক মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে। সামাজিক মাধ্যম নিয়ে কাজ করেন ক্রিস্টিয়ান ফুকস। তিনি বলেন, ২০০০ সাল নাগাদ বিশ্বঅর্থনীতিতে যে ‘ডটকম ক্রাশ’ হয়, সেই সংকটকে মোকাবেলা করতেই ওয়েব ২.০ বা সামাজিক মাধ্যমের জন্ম হয়েছে।
তবে সামাজিক মাধ্যমে সনাতনী যোগাযোগ প্রক্রিয়া পাল্টে গেছে, এখন সোর্সের পাশাপাশি রিসিভারও শক্তিশালী। আগে সাধারণ মানুষ ছিল টেলিভিশন-সংবাদপত্রের অক্রিয় ভোক্তা বা কনজিউমার এখন তারা প্রজিউমার বা ভোক্তোৎপাদক। এক ধরনের আনুভূমিক যোগাযোগের মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে একটা প্রতি-ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। ফলে আরব বসন্তে সরকার পড়ে গেছে। এখন এধরনের অভিজ্ঞতার পর সরকারগুলো সতর্ক হয়ে এমন সব মেশিন কিনেছে যে এক গোয়েন্দা অফিসে বসে সারা দেশের মানুষ কোথায় কী সরকারবিরোধী লিখছে জেনে যাচ্ছে। জনগণের করের টাকায় ডিভাইস কিনে জনগণকেই নজরদারি করা হচ্ছে। প্রথমে মনে হচ্ছিল সাধারণ জনগণ লাভবান হয়েছে সামাজিক মাধ্যম থেকে। কিন্তু এখন মনে হয় জনগণ ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছে, সরকার যেমন তাকে সহজেই নজরে রাখতে পারছে, খুব কম জনবল নিয়োগ করে। তেমনি ব্যবসায় শ্রেণিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তার পণ্যের ভোক্তাকে সহজেই খুঁজে পাচ্ছে, বিজ্ঞাপন নিয়ে হাজির হতে পারছে সরাসরি তার কাছে। আসলে ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহারকারীদের প্রফাইলিং করে এবং ব্যবসায়ীদের কাছে সেই ডেটাবেজ বিক্রি করে। সেটার ভিত্তিতে ব্যবসায়ীরা তার পণ্য নিয়ে হাজির হয়ে যাচ্ছে ব্যবহারকারীর কাছে। ডালাস স্মাইদের ‘অডিয়েন্স কমোডিটি’ ধারণাটি এক্ষেত্রে স্মর্তব্য। অডিয়েন্স আসলে দফায় দফায় বিক্রি হচ্ছে ক্ষমতাবানদের কাছে। আবার অন্য দিকে ফেসবুক বা গুগলের মতো কর্পোরেশন নিজেরা কিছু প্রস্তুত করে না। ‘ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট’ই হলো তার বার্গেনিংয়ের অস্ত্র – গুগল যা আমাদের খুঁজে দেয়, তার একটাও তার নিজের নয়। ফেসবুকে সারাক্ষণ মানুষ কন্টেন্ট প্রডিউস করছে। ফেসবুক এই বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষকে দেখিয়েই বিজ্ঞাপনদাতাদের আকৃষ্ট করে। আমরা হলাম ফেসবুকের ‘আনপেইড লেবার‘।এরকম বিবিধ কারণে ইন্টারনেটের সামাজিক মাধ্যমকে বিকল্প মাধ্যম বলা যাবে না। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :