মোজাফ্ফর হোসেন: এদেশে সবকিছুর মূল্য বেড়েছে। ফ্রি বলে বাজারে আর কিছু নেই। এমনকি সম্পর্কও না। বিপরীতে দিনে দিনে আরও মূল্যহীন হয়ে পড়েছে সৃজনশীল ও মননশীল সৃষ্টি- মোটাদাগে শিল্প (আর্ট)। এর পেছনে অনেক মানুষের যুক্তি: শিল্প ও সাহিত্য অধিকাংশ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ফ্রি বা নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা উচিত। আচ্ছা, আর্ট যদি মূল্যহীন হয়ে পড়ে, তাহলে শিল্পীরা পরিবার নিয়ে বাঁচবেন কেমন করে? এই প্রশ্নটা কেউ করে না। একজন লোক একটা কবিতা/গল্প ফ্রি পাঠককে পড়াতেই পারেন, যিনি লাখ লাখ টাকা খরচ করে সিনেমা/ওয়েবসিরিজ বানালো, তিনি কেমন করে পুরো দেশের মানুষকে ফ্রি দেখাবেন? যে জিনিসটা বানাতে ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে, মেধা ও পরিশ্রমের কথা বাদই দিলাম, সেইটা বিশ টাকা খরচ করে না দেখে পাইরেসি দেখার জন্য অপেক্ষা করেন, আর দিন শেষে গলাবাজি: দেশের সিনেমা মরে গেলো! আচ্ছা, আমরা যাদের ফ্রি ফ্রি সিনেমা দেখাতে চাই বা বই পড়াতে চাই, তারা কি সবসময় দেখে বা পড়ে?
আর যারা দেখে/পড়ে তাদের কি বিশ টাকা খরচ করার সামর্থ নেই? মোবাইল কোম্পানি/ ইন্টারনেট ব্যবসায়ী ঠিকই তার নেট বিল বুঝে নেবে; আমি কেন কন্টেন্ট ফ্রি দেবো? নেটে ফ্রি ফ্রি সাহিত্য পড়া আর সিনেমা দেখা এক বিষয় না। তবে, হ্যাঁ, ফ্রি সাহিত্য যে পড়বে তার অভ্যাস তৈরি হবে বিনামূল্যে সিনেমা দেখার। এই কারণে হলেও সাহিত্যও মাগনা ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয় না। জ্ঞান, শিল্প, শিক্ষা ও বিনোদন- এগুলো যদি মূল্যহীন হলে ভালো হয়, তাহলে এর পেছনে যারা কাজ করবে তারা খাবে কী? ঘাস-পাতা? কিন্তু ঘাস লতাপাতারও যে বাজারমূল্য আছে; তার বেলা? মানসম্মত জ্ঞান, শিল্প, শিক্ষা ও বিনোদন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক- হ্যাঁ, এর জন্যই এসবের বাজারমূল্য থাকা প্রয়োজন। মানুষকে অভ্যস্ত হতে হবে ‘পে’ করে একটা কবিতা পড়ার। এতো কথা বলার একটা ব্যক্তিগত কারণও আছে।
আমি ফ্রি ফ্রি অনলাইন সাহিত্য পোর্টাল করা পছন্দ করি না। খুব অল্প হলেও কন্টেন্ট চার্য বা সাবস্ক্রিপশন ফি থাকতে হবে। এরপরও আপনি ফ্রি ফ্রি সব কিছু করতেই পারেন, কিন্তু আমি সেখানে লিখবো না। তাই দয়া করে আমার কাছে কেউ এ ধরনের কোনো পত্রিকা/অনলাইনের জন্য লেখা চাইবেন না। সম্পর্কের খাতিরে অনেক সময় ‘না’ বলতে অসুবিধা হয় তাই ঢালাওভাবে এখানে কথাটা বলে নিলাম। ‘শিল্পকে বাঁচাতে শিল্পীকে মারো’ থিওরির সঙ্গে আমি একমন নই। আর এতে শিল্প ও শিল্পী দুটোই মরে। ফেসবুক থকে