শরিফুল হাসান: এই মেয়ে এতো বয়স হয়েছে, এখনো বিয়ে করোনি? রাজপুত্রের অপেক্ষায় বসে আছো নাকি? এই ছেলে? এখনো বিয়ে করনি কেন? করোনার এই সময়ে বউ থাকলে তো আর কষ্ট হতো না। ওমা! ডিভোর্স হয়ে গেছে? কীভাবে হলো? একটু মানিয়ে চলতে পারলে না? আচ্ছা আবার বিয়ে করছো না কেন? আহারে, জামাই মারা গেছে? কীভাবে চলবে এখন? আবার বিয়ে করছো না কেন? এতো বছর হয়েছে বিয়ের, এখনো বাচ্চা হয়নি কেন? মাত্র একটা বাচ্চা আপনার, আরেকটা নিচ্ছেন না কেন? ছেলে নেই? ছেলে বাচ্চার জন্য ট্রাই করছেন না কেন? বাচ্চা ফেলে চাকরি করেন কেন? এই মেয়ে, এতো পড়াশোনা করে বসে আছ কেন?
বাহ! আপনি বউ কে চাকরি করতে দেন? কেন নিজের কামাইতে চলে না? আরে আপনার বউ কিছু করে না! আপনি নিশ্চয় করতে দেন না। আপনারা জামাই-বউ দুজনেই চাকরি করেন। কাজের মেয়ে বাচ্চা সামলায়? মানুষ হবে তো? বাচ্চাকে ডে কেয়ারে দিয়েছেন? মানুষ হবে তো? এতো লেখাপড়া করে ঘরে বসে শুধু বাচ্চা সামলাচ্ছো? বাচ্চাকে ডে কেয়ারে দিয়ে কোনো একটা চাকুরি করতে তো পারো? গায়ের রং কালো হলেও তুমি কিন্তু দেখতে খারাপ না। একটু নিজের যত্ন না নিলে কী ভালো জামাই পাবে? অনার্স শেষ হয়ে গেছে মেয়ের। বিয়ে দেন না কেন?
এতো মোটা হলে কীভাবে? একটু ডায়েট করো। এতো চিকন কেন? খাওনা কিছু? এই বয়সেই ডায়েট শুরু করেছেন? মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করেছে আপনার মেয়ে? হিন্দু ছাড়া আর বউ পেলে না? লেখাপড়া শেষ হয়েছে তো অনেকদিন হলো, এখনো কোনো চাকরি হয়নি? বিসিএস দিতে পারোনি? এতো ভালো চাকরি করো, ফ্ল্যাট কিনছো না কেন? না প্রশ্নের শেষ নেই। সব প্রশ্ন জুড়তে গেলে মহাকাব্য হয়ে যাবে।
বছর ছয়েক আগে ফেসবুকে প্রথম কিছু প্রশ্ন দেখে এই স্ট্যাটাসটি দেই। সাংবাদিক বলেন, লেখক, খন্ডকালীন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক কিংবা উন্নয়ন কর্মী হিসেবে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে আমি এই দেশ, সমাজ আর মানুষ দেখি। সেসব দৃষ্টি থেকেই প্রশ্নগুলো লেখা। যদিও মেয়েদের প্রতিনিয়তই এ ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, তবে নারী-পুরুষ কেউই আসলে প্রশ্ন থেকে রেহাই পান না। আমাদের সবার মনে রাখা উচিত, সমাজ তো আসলে কোনো আলাদা স্বত্বা নয়। আমাদেরকে মিলেই তৈরি হয়। এই আমরাই কিন্তু অন্যের প্রাইভেসিকে বা পারসোনাল লাইফকে সম্মান করতে ভুলে যাই। গীবত আর পরশ্রীকাতর এই আমরা সারাক্ষণ মেতে থাকি আরেকজনকে নিয়ে।
আমাদের সবার মনে রাখা উচিত, পৃথিবীর কিছু ব্যাপার নিয়ে কারোরই কথা বলার অধিকার নেই। আপনার কাছে যেটা জীবনের প্রায়োরিটি, আরেকজনের কাছে সেটার কোনো মূল্য নাও থাকতে পারে। অহেতুক কেন নিজের জীবনের সঙ্গে আরেকজনকে মেলান তাহলে? সবাইকে অনুরোধ প্লিজ ভাবুন। নিজের প্রাইভেসি রক্ষা করুণ, আরেকজনকেও তার মতো থাকতে দিন। দূরে থাকুন পরশ্রীকাতরতা আর গীবত থেকে। সবসময় মানুষের মঙ্গল কামনা করুণ। প্রত্যেকেকে তার মতো থাকতে দিন। দেখবেন নিজের জীবনটাও শান্তিতে কাটছে। ভালো থাকুন সবাই। ফেসবুক থেকে