রাশিদ রিয়াজ : প্রথমবারের মত ফেসবুকের বাজার মূলধন এক ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আসলে এ ধরনের কোনো ক্লাব নেই। তবে চমৎকার ব্যবসায়িক উৎকর্ষের জন্য বিশেষ করে মিডিয়া ট্রিলিয়ন ডলার ক্লাব হিসেবে উল্লেখ করে। বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল, অ্যামাজন, গুগল ও ফেসবুকের কর্পোরেট একত্রীকরণ ব্যবসায়ের প্রতিরোধে লক্ষ্যে মোট পাঁচটি বিল উত্থাপন করেছে। এরপরই ফেসবুকের বাজার মূলধন বৃদ্ধি পায়। সোমবার শেয়ার বাজারে লেনদেন শেষে ফেসবুকের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পায় ৪.২ শতাংশ। প্রতিটি শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৩৫৫.৬৪ ডলার। বাজার মূলধন বলতে উন্মুক্ত বাজারে কোনও কোম্পানির মূল্যমানকে বোঝায়, যা একক শেয়ারের বাজার মূল্যের দ্বারা কোম্পানির বকেয়া শেয়ারের সংখ্যাকে গুণিতক হিসেবে পরিমাপ করা হয়। শুধু ফেসবুক নয়, এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৭টি প্রযুক্তি কোম্পানির দাম বেড়েছে ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। কোভিড মহামারীকালে গত বছর সবার জন্য নেতিবাচক ছিল না। বরং গত বছরে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ব্যাপক উত্থান ঘটে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানির অবস্থান আরও বড় হয়েছে এই লোকসানি বছরেই। সারাবিশে^ মহামারী ও বিস্তৃত অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও এ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সাত প্রযুক্তি সংস্থার মোট ৩ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার বাজারমূলধন বেড়েছে (১ ট্রিলিয়ন ১ লাখ কোটি)।
কোম্পানিগুলো হলো অ্যাপল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, অ্যালফাবেট, ফেসবুক, টেসলা ও এনভিডিয়া। সিএনবিসি
গত বছর অ্যাপলের আইফোনের বিক্রি বেড়েছে, মাইক্রোসফটের টিমওয়ার্ক বা যৌথকাজে লাগে এমন পণ্যের কদর বেড়েছে, আমাজনের ই-কমার্স ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে, ফেসবুক ও গুগলের অ্যাড ব্যবসা রমরমা ছিল, টেসলার শেয়ারের দর বেড়েছে বহুত, চিপমেকার এনভিডিয়ার বাজারমূল্য বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। কারণ মহামারীতে মানুষ ঘরে বসে কাজ করেছে, লকডাউন বন্দী ছিল। এক বছরে টেসলার শেয়ারের দর বেড়েছে নয় গুণ, ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী এই কোম্পানির বাজারমূলধন ৭৬ বিলিয়ন থেকে ৬৬৯ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পায়। কোভিড মহামারীর শুরুতে গাড়ি বিক্রি একদম বন্ধ হয়ে গেলেও বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে একেবারে ৩৬০ ডিগ্রি উল্টে যায় টেসলার ব্যবসা। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট যোগ করতে পেরেছে টেসলা।
এই বছরে এনভিডিয়ার বাজার মূলধন বেড়েছে ৩২৩ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের ৭ নম্বর প্রযুক্তি কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি জায়গা করে নিয়েছে। এ ছাড়া ১৬তম বৃহৎ মার্কিন কোম্পানির স্থানে পৌঁছে গেছে তারা। আর অ্যাপলের উত্থান ঘটেছে এক বছরে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার। গত বছরই প্রথম মার্কিন কোম্পানি হিসেবে দুই ট্রিলিয়ন ডলার স্পর্শ করে এই প্রযুক্তি জায়ান্ট। ইকমার্স ব্যবসা ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় অ্যামাজনের বাজারমূল্য বেড়েছে ৭১০ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া মাইক্রোসফটের ৪৮০ বিলিয়ন, অ্যালফাবেটের ২৬৮ ও ফেসবুকের ১৯৩ বিলিয়ন ডলার বাজারমূল্য বেড়েছে। বাজারমূল্যের বিচারে বিশ্বের প্রথম ‘ট্রিলিয়ন ডলার ক্লাবে’ যোগ দিয়েছিল অ্যাপল। অর্থাৎ সে সময় তাদের সব শেয়ার বিক্রি করে দিলে পাওয়া যেত অন্তত এক লাখ কোটি ডলার। অ্যাপলের পর অনেকেই সে ক্লাবে যোগ দিলেও অ্যাপল ফের গত বছর আগস্টে বিশ্বের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে পৌঁছে যায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার ক্লাবে।
মাইক্রোসফটও অ্যাপলকে অনুসরণ করে কোম্পানিটির শেয়ারের দর ১ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে দ্বিতীয় মার্কিন প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের বাজার মূলধন দুই লাখ কোটি ডলারে পৌঁছে যায়। অ্যাপল দুই ট্রিলিয়ন ডলার ক্লাবে পৌঁছানোর মাস দশেক পর মাইক্রোসফট সেখানে পৌঁছাল। অ্যাপলের বর্তমান বাজার মূলধন প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি ডলার। এর আগে সৌদি আরবের সর্ববৃহৎ জ্বালানি তেল ও গ্যাস কোম্পানি আরামকো স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার বিক্রি শুরুর দ্বিতীয় দিনে দুই লাখ কোটি ডলার বাজার মূলধনের মাইলফলকে পৌঁছে। এরপর কোভিডের কারণে তেলের দরে ব্যাপক দরপতন ও চাহিদা হ্রাস পেলে আরামকোর বাজার মূলধন নেমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৮৮ হাজার কোটি ডলার।
আর গতবছর মার্চে লকডাউন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মাইক্রোসফটের শেয়ারের মূল্য বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। গত এপ্রিলে গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঠিক এক বছর আগের তুলনায় মোট আয় ১৯ শতাংশ এবং মুনাফা ৩৮ শতাংশ বেড়েছে মাইক্রোসফটের। মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সত্য নাদেলা তখন বলেছিলেন, মহামারীর এক বছরের বেশি সময় চলে গেলেও ডিজিটাল অ্যাডপশন রেখায় নিম্নগতি দেখা যাচ্ছে না। সেটি বাড়ছে এবং এটা কেবলই শুরু। অ্যামাজন এবং গুগলও দুই ট্রিলিয়ন ক্লাবে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাজার মূলধনের বিচারে বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় তিনে আছে অ্যামাজন (১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি ডলার), এরপরেই গুগল (১ লাখ ৬৭ হাজার কোটি ডলার)।
তবে ফেসবুকের ট্রিলিয়ন ডলার সাম্রাজ্য বিস্তৃতি আরো ঘটছে কারণ কোম্পানিটি ব্যবসায়ে বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধি করছে। ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বলেন, যে কোনও বর্ধিত প্ল্যাটফর্মের তুলনায় সংযুক্ত এবং ভার্চুয়াল বাস্তবতা গভীর উপস্থিতি এবং সামাজিক সংযোগের সুযোগ দেয় এবং তারা এভাবে কম্পিউটারের সাথে ইন্টারেক্ট করে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়। ফেসবুক এবং রায়-বান এই বছরের শেষের দিকে তাদের প্রথম জেনার এআর চশমা প্রকাশ করতে যাচ্ছে। এআর চশমাগুলির জন্য প্রচুর প্রযুক্তি প্রয়োজন হবে এবং এগুলি মূল স্রোতে পরিণত হওয়ার কয়েক বছর আগে হতে পারে। এই বছরের শুরুর দিকে, ফেসবুক নিউরাল ব্রেসলেট এবং হ্যাপটিক গ্লোভস বাজারে ছাড়ার কথা জানায়। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং ল্যাপটপের সাথে ফেসবুক তার প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির চেয়ে সহজেই ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে পারছে। বিশেষ করে ই-কমার্সে ফেসবুক তার সিংহভাগ আয় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতি মাসে এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ মার্কেটপ্লেসে যান। এখন প্রতিমাসে মিলিয়নেরও বেশি অ্যাক্টিভ শপ এবং ২৫০ মিলিয়নেরও বেশি দর্শনার্থী রয়েছে। গত বছর ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপে শপিং কার্ট চালু করার পর ৫ মিলিয়নেরও বেশি অর্ডার আসে। এটি বাণিজ্যকে সহায়তা প্রদানের জন্য, গ্রাহক পরিষেবা এবং সহায়তার ক্ষেত্রে আরও বড় অবকাঠামো তৈরি করছে।