জান্নাতুন নাঈম প্রীতি: তিন ঘণ্টা আগে নায়িকা পরীমনি অভিযোগ করেছেন মুখে কাচের বোতল ঢুকিয়ে, মাটিতে ফেলে দিয়ে তাকে রেপ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। তার আগে সম্ভাব্য ড্রাগ বা ওই জাতীয় কিছু দেওয়া কফি খাওয়াবার চেষ্টা করা হয়, বাড়ি যেতে চাইলে বাধা দেওয়া হয় তাকে। নাসির উদ্দিন নামের সেই লোক আর তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সেই রেপ ও হত্যাচেষ্টার মামলাও পুলিশ প্রথমে নিতে চায়নি। দাঁড়ান। এর আগে পরীমনির ফেসবুক পেজের কমেন্ট সেকশন দেখে আসুন। আমি শেষ দেখে আসা রেপের অভিযোগের নিচে এখন (১৪ জুন, সকাল সাড়ে এগারোটা) পর্যন্ত ৪৪ হাজার+ হাহা রিয়াকশন। সিনেমার নায়িকা মানেই গণিমতের মাল, এই ধারণাটা অন্তত প্রায় ৪৪ হাজার লোক ধারণ করছে। এইরকম বিকৃত সমাজ কি একদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? রেপিস্ট লালন-পালনে সম্ভবত এই দেশ বিশে^র সেরা। বসুন্ধরা গ্রুপের আনভীর সোবহানকে হত্যাচেষ্টা মামলায়ও ধরা যায়নি, অথচ কয়দিন আগেই ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন তারে ফুল দিয়ে আসছে, তার আগে সে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের প্রধান নির্বাচিত হয়েছে। একটা হত্যা মামলার আসামী ক্যামেরার সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে, পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি! একটা হত্যা মামলার আসামী যেখানে ফুল পায় সেখানে বিচারের সম্ভাবনা কতোটা?
তনুর কথা আমাদের মনেও নেই। কারণ তনুকে ভালুকে খেয়ে ফেলেছে। তনুর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পড়ে আমার দুঃখে অট্টহাসি পেয়েছে। লাশ দাফন করার নির্দেশ দিয়ে সাতদিন পরে পচা লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ভালুকের কামড়ই হওয়ার কথা। সেই আদিবাসী বাচ্চা মেয়েটা, কিংবা যে বাচ্চামেয়েটা রেপের শিকার হয়েছিলো বলে গরিব বাবা তারে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়েছিলো, তার কেস। কিংবা আপন জুয়েলার্সের পুত্ররা যারা বনানীর রেইন্ট্রি হোটেলে দুইজনকে রেপ করেছিলো, তাদের কেস? যে বাচ্চা মেয়েটাকে চকলেট দেবে বলে দারোয়ান রেপ করেছিলো সেই কেস? রিপোর্ট কী? যেদেশে প্রতি ঘণ্টায় তিনটা করে রেপ হয় আর ৩ শতাংশের কম বিচার হয়, সেখানে রেপের কথা জানিয়ে একটাই লাভ- রেপিস্টদের চিনিয়ে দেয়া। চিনিয়ে দেওয়া এজন্য দরকার যেন রেপিস্টদের সঙ্গে সঙ্গে সম্ভাব্য রেপিস্টদেরও আমরা চিনতে পারি। যেন রেপিস্টদের সঙ্গের এসব বন্ধুগুলোকে চিনতে ভুল না হয়। এরপরে কী হবে তা আমরা জানি। একদল রেপের বিচার চাইবে, আরেকদল বলবে- ও তো নায়িকা, দেখগা টাকা চাইয়া পায় নাই। নায়িকা মানেই বেশ্যা এবং বেশ্যা মানেই চাহিবা মাত্র তারে রেপ করা যায়, যেকোনো যৌনতা সংক্রান্ত বিষয়ে তারে শরীরসর্বস্ব একটা জন্তু ধরে নেওয়া যায়। অথচ একজন বেশ্যাকেও আপনি রেপ করার অধিকার রাখেন না, এই কথাটা কাউকে বলতে শুনবেন না।
যে সমাজে নির্যাতিত, ধর্ষিতর পেশা হিসেব করে রেপ করার বৈধতা যাচাই করা হয়, সেখানে আমি আশা দেখি না। বরং আমি আশা করি- একদিন মেয়েরা ব্যাগে করে চাকু নিয়ে ঘুরবে নিজের নিরাপত্তার জন্য। একদিন যোনি থেকে বের হওয়া রক্ত তারা নিজেরাই লিখবে This society is bleeding from the war to the independence! ব্রিটিশ আমলে একসময় কর হিসেবে স্তন কেটে নেওয়া হতো, পাকিস্তানিরা আর তাদের এদেশের দোসররা যুদ্ধের সময় বেয়নেট উঁচিয়ে যোনি ছিন্নভিন্ন করতো, মসজিদে যেখানে নামাজ পড়ানো হয় সেখানে রেপ করতো, এখন ভোট দেওয়া থেকে শুরু করে রাস্তায় হাঁটলেও রেপ হওয়া লাগে। আপনাদের দেশ হইলো। কিন্তু নারীর কোনো দেশ হইলো না ক্যান? দেশ আর কয়বার স্বাধীন হইলে দেশের নারীরা স্বাধীন হবে? ফেসবুক থেকে