নিউজ ডেস্ক: দেশে অতি ধনী, ধনী ও উচ্চ মধ্যবিত্তের কাতারে রয়েছে ২৩ শতাংশ মানুষ। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এদের ওপরে খুব বেশি প্রভাব না ফেললেও বাকি ৭৭ শতাংশ মানুষের জীবনে তা বিরাট দুশ্চিন্তার কারণ। করোনা পরিস্থিতিতে অনেক মানুষের আয় কমে যাওয়ায় সংকট আরো প্রকট হয়েছে।
গতকাল রবিবার কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ও এদের অনলাইন পত্রিকা ভোক্তাকণ্ঠ’র উদ্যোগে ‘পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাতে ভোক্তা অধিকার’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন।
মূল বক্তব্যে বলা হয়, চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা, তেল লিটারে ১৫ টাকা, চিনি, পেঁয়াজ, ওষুধ ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যদি একটি পরিবারের ব্যয় ১০০০ টাকা বৃদ্ধি পায় তবে এর প্রভাব শুধু খাদ্য নয়, জীবনের অন্যান্য অংশেও পড়তে বাধ্য। এই পরিস্থিতিতে ভোক্তা প্রথমেই তার খাদ্যের খরচ কমায়। তারপর পোশাকসহ বিভিন্ন কেনাকাটা, চিকিৎসা, সন্তানের লেখাপড়া, এরপর বাসা পরিবর্তন করে এই ব্যয় সমন্বয়ের চেষ্টা করে।
রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, মানুষের কেনাকাটা বা সেবা ক্রয়ের পরিমাণ কমে গেলে অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপর এর প্রভাব পড়ে। কারণ অভ্যন্তরীণ বাজার কতটা শক্তিশালী হবে তা নির্ভর করে দেশের জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার ওপর। লেবার ফোরস সার্ভে অনুযায়ী দেশে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ছয় কোটি ৮২ লাখ। তাঁদের মধ্যে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীদের ৬২ শতাংশই ব্যয় হয় খাদ্যে। করোনায় যখন আয় কমেছে, উল্টোদিকে পণ্যের দাম বেড়ে তখন চরম বিপদের মধ্যে পড়েছে এসব কর্মজীবী মানুষ।
প্রতি পাঁচ বছর পর পর ৪৩টি খাতের মজুরি পুনর্নির্ধারণ করার কথা থাকলেও ৩২টি খাতে ২০১৩ সালের পর কোনো মজুরি নির্ধারণ করা হয়নি।
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ভোক্তার দুটি সমস্যা রয়েছে। আয় কমা ও মূল্যবৃদ্ধি। একদিকে আয় কমেছে, অন্যদিকে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্য বাড়লে যদি আয় কমে যায় তখন একটা অসহনীয় অবস্থা তৈরি হয়। তিনি আরো বলেন, সরকার কিছু ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিয়েছে। কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়ছে না। কর্মসংস্থান না বাড়লে ভোগও বাড়বে না। ভোগ না বাড়লে উৎপাদকরা কিন্তু আগ্রহ হারাবে এবং উৎপাদন কমবে। সে ক্ষেত্রে ভোক্তার ওপর চাপ আরো বাড়বে, কারণ মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এই অবস্থা নিরসনের জন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, গরিব ও মধ্যবিত্তের হাতে টাকা না থাকলে দেশীয় পণ্যের চাহিদা কমে যাবে। এতে করে উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব সেক্টরে যাঁরা কাজ করবেন তাঁরা চাকরি হারাবেন। সে ক্ষেত্রে গ্রোথ (প্রবৃদ্ধি), রপ্তানি বাড়লেও অর্থনীতির ওপর বড় একটি চাপ তৈরি হবে।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক সামসুল আলম বলেন, করোনার সময়ে পণ্য ও সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে মানুষের ব্যয় বেড়েছে ৬.৮৮ শতাংশ।
মূল বক্তব্যে উদাহরণ টেনে বলা হয়, ৭৭ শতাংশ বা ১৩ কোটি দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত দেশীয় বাজারের প্রধান ক্রেতা। তারা যদি ক্রয়ক্ষমতা হারায় তাহলে বাজারে এর প্রভাব পড়ে। ১৩ কোটি মানুষ যদি বছরে এক হাজার টাকার স্যান্ডেল, জুতা কেনে তবে ১৩ হাজার কোটি টাকার জুতার বাজার তৈরি হয়।
মূল বক্তব্যে বলা হয়, দেশে বছরে তিন কোটি টন খাদ্যের চাহিদা ধরা হয়। প্রতিদিনের প্রয়োজন ৮০ হাজার টন। এর মধ্যে ৩০ হাজার টন কৃষক নিজের উৎপাদিত চাল নিজেই ভোগ করেন, বাকি ৫০ হাজার টন চাল ব্যবসায়ীদের দ্বারা বাজারে বিক্রি হয়। প্রতি কেজিতে যদি ১০ টাকা করে চালের দাম বাড়ে তবে দিনে ৫০ কোটি টাকা ভোক্তার পকেট থেকে বাড়তি খরচ হয়।
কোনো মানুষ যাতে খাওয়ার অভাবে কষ্ট না পায়, সে জন্য করোনা পরিস্থিতিতে দরিদ্র হয়ে পড়া মানুষের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করাসহ খাদ্য অধিকার আইন তৈরির জোর দাবি জানান বক্তারা। সূত্র- কালের কন্ঠ