মিনহাজুল আবেদীন: [২] করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারি শুরু হওয়ার পর দেশে স্বাস্থ্যসেবা কতোটা ভঙ্গুর তা যেমন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, তেমনি জনগণের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের ঘাটতিও যে কতোটা প্রবল তার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে।
[৩] যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেস তথ্য মতে, ব্যবস্থার অভাবেই বাংলাদেশে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবাসহ মহামারি ব্যবস্থাপনা, কোভিড প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রমে দেখা গেছে ব্যর্থতা।
[৪] শনিবার বিবিসি বাংলায় জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের গাইনি অঙ্কোলজি বিভাগের প্রধান ডা. রোকেয়া আনোয়ার বলেন, একজন রোগী যখন প্রথম হাসপাতালে আসে তখন আমাদের একটা রেজিস্ট্রেশন রুম আছে সেখানে দুইজন রেকর্ড কিপার সবার তথ্য কম্পিউটারে তোলেন। এরপর যার যে বিভাগে যেতে হবে সেখানে পাঠানো হয়। সে রোগ অনুযায়ী ভাগ করে আলাদা রুমে পাঠায়। রোগ অনুযায়ী আলাদা খাতায় রোগীর বিস্তারিত তথ্য তুলে রাখে।
[৫] ডা. রোকেয়া বলেন, একজন রোগী প্রথম আসার পর থেকে যতোবার ভিজিট করবেন ততোবার এমনকি তার মৃত্যু পর্যন্ত নির্দিষ্ট খাতায়, একটা নির্দিষ্ট পাতায় তার সকল তথ্য লেখা হয়, যা কম্পিউটারেও তোলা হয়।
[৬] তিনি বলেন, এই বিশাল সংখ্যক রোগীর তথ্য খাতায় টুকে রাখা একটা জটিল সমস্যার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে আমরা এটা ম্যানুয়ালি করছি। এইরকম খাতায় তুলতে তুলতে, পাঁচ বছর ধরে প্রচুর ভলিউম দাঁড়িয়ে গেছে। তবুও আমরা অথেনটিক ওয়েতে রেকর্ড-কিপিং করার চেষ্টা করছি।
[৭] তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগে বিভ্রাট, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডেটা এন্ট্রি কর্মী না থাকার কারণে এসব তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমে তোলা প্রায়শই ব্যাহত হয়। তাই খাতাই এখনো তাদের মূল ভরসা।
[৮] জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের গবেষক অধ্যাপক শারমিন ইয়াসমিন বলেন, একটি দেশের জনগণের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যভাণ্ডার, রোগীদের দরকারমতো চিহ্নিত করার সক্ষমতা খুব জরুরি এবং এই মহামারির সময়েই সেটি গড়ে তোলার উপযুক্ত সময়।
[৯] তিনি বলেন, স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আমাদের ডেটার খুব অভাব। আগে থেকে একটা সিস্টেম দাঁড় করানো থাকলে, যেভাবে দ্রুত গতিতে আমরা সেটাকে কাজে লাগাতে পারতাম, তা এখন পারছি না। এখন প্যান্ডেমিকের সময় এটাকে যদি খুব গুরুত্ব দেয়া হয়, যে এভিডেন্স বেইজড হেলথ সিস্টেমের কথা আমরা বলি, অথবা যে ইনফরমেশন দরকার তা যদি আমরা সিস্টেমের মধ্যে ঢুকাতে পারি তাহলে শুধু রোগী নয় অনেক সুস্থ মানুষের চেক-আপ দরকার, অসংক্রামক অসুখের জন্য স্ক্রিনিং করতে হয়, শিশুকে টিকা দিতে হয়, প্যান্ডেমিক এবং প্যান্ডেমিক পরবর্তী সময়েও আমরা রোগী এবং সুস্থ ব্যক্তি, সবার জন্য সেবা দিতে পারবো।
[১০] অনলাইনে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা, ডিজিটাল হেলথ কেয়ার সলিউশানসের পরিচালক মো. মুনির হাসান বলেন, নানা প্রকল্পের আওতায় এরকম বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে ওঠা স্বাস্থ্য বিষয়ক কার্যক্রমকে জোড়া লাগিয়ে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা দাঁড় করানো বাংলাদেশেও সম্ভব। যদি তা একটা ইলেক্ট্রনিক সিস্টেমের মধ্যে এন্ট্রি করা যেতো এবং এই সমস্ত সিস্টেম ইন্টার-কানেকটেড হতো তাহলেই এটা সম্ভব।
[১১] স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টরদের ডা. রোবেদ আমিন বলেন, যদি সরকারি হাসপাতালকে পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় আনা যায় এবং একটা ইউনিক সিস্টেম তৈরি করা যায় তাহলে হয়তো সম্ভব হতে পারে। তাদের দেশে (পশ্চিমের দেশে) সুবিধা হচ্ছে মানুষতো একটা ইউনিক আইডি পায়, তাতে সব তথ্য চলে আসে।
[১২] ডা. আমিন, পুরো স্বাস্থ্যসেবা খাতকে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার আওতায় আনতে আরও অন্তত ১৫ থেকে ২০ বছর লাগবে।
[১৩] তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র এখন সবার নেই বিশেষ করে শিশুদের। ১৮ বছরের আগে তো আইডি হয় না। সবার ইউনিফর্ম একটা জন্ম নিবন্ধনের সিস্টেমও থাকতে হবে।
[১৪] তিনি আরও বলেন, বিশাল জনসংখ্যার সকল তথ্যের ডিজিটাইজেশন ছাড়া এটা সম্ভব নয়। বিভিন্ন অসুখের তথ্য আলাদা স্পেকট্রামে হয়তো আছে, কিন্তু সবকিছুকে একটি প্ল্যাটফর্মের আওতায় আনার জন্য, সেটা জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে করা যায় কিনা, শিশুদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে করা যায় কিনা, এসব বিষয়গুলো মাথায় আছে। সম্পাদনা: রাশিদ