আফসান চৌধুরী : নাগরিক কমিটির মিটিং হয় ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন করার ব্যাপারে। এটি হয় রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খানের বাসায়। লেখক শিবিরের প্রধান অধ্যাপক আহমেদ স্যারকে দাওয়াত করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। সবার সঙ্গে আলাপ করে ঠিক হয়Ñ আমরা যাবো কিন্তু সামরিক সরকারকে নিন্দা করবো এবং বেসামরিক সরকার গঠনের প্রস্তাব করবো। যদি মার্শাল ল’ বিরোধী প্রস্তাব সমূহ গ্রহণ না করা হয়, আমরা বের হয়ে আসবো। ৫ জন যাওয়া হয়। শরীফ স্যার, শাহরিয়ার ভাইÑ তিনি তখন ওমর সাহেবের দল করতেন বাংলা ডিপার্টমেন্টের সাইদুর রহমান ভাই, অধ্যাপক আবরার চৌধুরী ও আমি।
[২] এমনিতে কোনো মিটিং, অনুষ্ঠানের প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই , এমনকি দল সংগঠনের প্রতিও নেই। সাংবাদিক হারুন ভাইয়ের মতে আমি ‘এনার্কিস্ট’, সব কিছুর বিরোধী। কিন্তু ওই ওয়াক আউটের লোভে সাথে গেলাম।
[৩] মিটিংয়ে সবাই উপস্থিত, তাদের মধ্যে অনেকে পরে বিএনপি বা জাতীয় পার্টিতে যায় বা তাদের সমর্থক হয়। আমরা বসলাম ভিড়ে, স্যার গেলেন মূল টেবিলে। উঠেই খুব গালি দেওয়া এক প্রস্তাব দিলেন শরীফ স্যার। আমি খুব খুশি। কিন্তু দেখি কয়েকজন সমর্থন করলো আর প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হলো। আমি একটু দমে গেলাম।
[৪] আবার আলোচনা, তারপর প্রস্তাব আর স্যার যা বলে তাই মেনে নেওয়া হলো। তখন আমি বেশ চিন্তিত, ভিড় ঠেলে স্যারের কাছে কাঁচু মাঁচু চেহারায় বললাম, ‘স্যার, এটা কী হচ্ছে?’ স্যার ও হতাশ ভাবে বললেন, ‘আমি তো চেষ্টা করছি আফসান কিন্তু যাই বলি তাই তো মেনে নেয়, কী করবো? দেখি এই শেষ প্রস্তাব করি, এটা মানতে পারবে না।’ স্যার সরাসরি মার্শাল ল তিরস্কার করে প্রস্তাব করলেন। কিন্তু তাও সবাই মেনে নিলো শুধু একটা কমিটি হলো প্রস্তাবের ভাষা ঠিক করার জন্য। মিটিং শেষ হলো।
[৫] মন খারাপ করে আমি বাইরে বের হলাম। স্যার আমাকে বিষণ্ন গলায় বললেন, ‘আমি এতো চেষ্টা করলাম হলো না। আমি দুঃখিত আফসান। তাদের প্রতিবাদ করারও সাহস নেই। মন খারাপ করো না, আবার হবে’ তবে তারপর আর কোনোদিন আমি ওই রকম মিটিং এ যাইনি। মনটা ভেঙে যায়।
লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক